ঝুঁকির মুখে নবীগঞ্জের কুশিয়ারা নদীর প্রতিরক্ষা প্রকল্প
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ আগস্ট ২০২৪, ৮:৫০:২৮ অপরাহ্ন
নবীগঞ্জ প্রতিনিধি:
চলমান বন্যা পরিস্থিতিতে দেশের উল্লেখযোগ্য নদীগুলোতে বেড়েছে পানি। হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলা-সংলগ্ন কুশিয়ারা নদীরও পানি বেড়েই চলছে। কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। তীর উপচে পড়ায় প্লাবিত হচ্ছে নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল। এমন পরিস্থিতিতে ঝুঁকির মুখে পড়েছে কুশিয়ারা নদীর তীর প্রতিরক্ষা প্রকল্পের বাঁধ বা কুশিয়ারা ডাইক।
ওই উপজেলার দীঘলবাক ইউনিয়নের রাধাপুর গ্রামের মোঃ নানু মিয়ার বাড়িসংলগ্ন স্থানে ডাইকে ব্যাপক ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে। অপর অংশ দিয়ে ডাইকের ভেতরে পানি প্রবেশ করার খবর পাওয়া গেছে। পাউবো জানায়, পানি প্রবেশের ফলে বড় ধরনের ভাঙনে নবীগঞ্জের ৮ থেকে ৯টি ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুপম দাশ অনুপ সরেজমিন পরিদর্শন করেন। দীঘলবাক ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ ছালিক মিয়া জানান, কুশিয়ারা নদী উপচে তীরবর্তী গ্রামগুলো প্লাবিত হচ্ছে। ডাইকে ফাটলের পাশাপাশি একটি অংশে পানি ভেতরে ঢুকছে। স্থানীয়ভাবে অস্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নদীর তীরবর্তী প্রায় ৮টি গ্রামে ঢুকছে নদীর পানি। অন্যান্য এলাকা থেকেও ডাইকে ফাটল ও পানি প্রবেশের খবর পাওয়া গেছে।
হবিগঞ্জের পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শামীম মাহমুদ জানান, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা হবিগঞ্জ সফরে থাকায় ডাইক দেখা সম্ভব হয়নি। এদিকে, চলমান পরিস্থিতিতে কুশিয়ারা নদীর তীর প্রতিরক্ষা প্রকল্পের আওতায় ডাইক নির্মাণের কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়টি আবারও আলোচনায় এসেছে। স্থানীয়রা বলছেন, হবিগঞ্জ পাউবোর আওতায় পরিচালিত এ প্রকল্পের কাজে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। প্রকল্পের ৫ শ ৭৩ কোটি টাকার কাজ নিয়ে গত সরকারের প্রভাবশালী নেতারা নয়ছয় করেছেন। কাজ হয়েছে দায়সারা। যার ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্থানীয়দের। এ নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলেও যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্টরা। এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে প্রকল্পের অনিয়ম তদন্তের দাবিও করেছেন তারা।
কুশিয়ারা প্রতিরক্ষা প্রকল্পের বাঁধটি নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছে। নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের পাশাপাশি কাজ করা হয়েছে দায়সারাভাবে। অল্প সময়েই বাঁধের বিভিন্ন স্থানে ফাটল ও ভাঙন সৃষ্টিতে নির্মাণকাজের দুর্বলতা দৃশ্যমান। এ নিয়ে আতঙ্কে আছেন হবিগঞ্জ জেলার ভাটি অঞ্চলের মানুষ। নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের ফলে কাজ শেষ হওয়ার আগেই ৫শ ৭৩ কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পের দুর্বলতা নজরে আসে। প্রতিরক্ষা বাঁধটির গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু স্থান দেবে গিয়ে বাঁধের গায়ে ফাটল দেখা দেয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, কাজ শুরুর পর থেকে কুশিয়ারা নদীর তীর প্রতিরক্ষায় ব্লক নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। মাটি মিশ্রিত বালু, মরা নুড়ি পাথর, ছোট পাথরের জায়গায় বড় পাথর, গোটা পাথর, ইটের খোয়ার মিশ্রণ ব্যবহার এবং মিশ্রণে সঠিক মাত্রার সিমেন্ট ও বালু ব্যবহার না করার অভিযোগ রয়েছে। রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থেকে এসব কাজে বেপরোয়া দুর্নীতি আর অনিয়ম চালিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টরা। এসবের সঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একাধিক কর্মকর্তা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের সম্পৃক্ততার কথাও জানিয়েছেন অনেকেই।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসনাইন মাহমুদ বলেন, কুশিয়ারা নদীর উভয় তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ কয়েকটি প্যাকেজের মাধ্যমে চলমান রয়েছে। এ কাজগুলো মূলত নদী ভাঙন রোধে করা হচ্ছে। এটা ভালো অবস্থায় আছে।’ তবে প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্টদের কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রসঙ্গ আসতেই উত্তেজিত হয়ে ওঠেন ওই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘দুই বছর ধরে সাংবাদিকরা শুধু অনিয়মের কথা বলে যাচ্ছেন। কোথাও সমস্যা হয়নি। আমরা কোনো অনিয়ম পাইনি। চলমান কাজ নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে। আর অনিয়ম হয়ে থাকলে যান, গিয়ে তদন্ত করেন।