অন্যরূপে এমসি কলেজ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ আগস্ট ২০২৪, ৭:৩৬:৫৫ অপরাহ্ন
জুয়েল আহমদ, এমসি কলেজ: সিলেটের প্রাচীনতম বিদ্যাপিঠ মুরারিচাঁদ কলেজ যেন এখন এক অচেনা ক্যাম্পাস। ক্যাম্পাসে এক যুগেরও বেশি সময় থেকে লেগে থাকা রাজনৈতিক ব্যানার, ফেস্টুন, দেয়ালিকা এখন রূপ নিয়েছে বিপ্লবের সংগ্রামী শ্লোগান, ক্যালিওগ্রাফি ইত্যাদিতে। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতা গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে শিক্ষার্থীরা নানা সংস্কারের কাজে হাত দেন। এর ধারাবাহিকতায় ক্যাম্পাস কেন্দ্রীক গ্রাফিতি অংকন কর্মসূচী হাতে নেয় এমসি কলেজ শিক্ষার্থীরা। তারা কর্মসূচী হাতে নিলেও, পরবর্তীতে যোগ দেয় সিলেটের অন্যান্য ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরাও। সবার সম্মেলিত প্রচেষ্টায় ক্যাম্পাসের বাইরের দেয়াল থেকে শুরু করে ভেতরের ছোটো বড়ো দেয়ালগুলোতে এখন বিপ্লবের বাতাস বয়ে বেড়াচ্ছে।
নগরীর টিলাগড় পয়েন্টে এমসি কলেজ হওয়াতে রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠনগুলোর জেলা, মহানগর থেকে শুরু করে প্রান্তিক পর্যায়ের নেতা কর্মীদের আনাগোনা থাকতো কলেজটিতে। তাদের মধ্যে বিগত কিছু বছর ধরে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিলো বাংলাদেশ ছাত্রলীগের। যারই ফলস্বরুপ ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা কর্মীদের ব্যানার, ফেস্টুন, দেয়ালিকায় ভরপুর ছিল পুরোদমে। ব্যানার ফেস্টুনের ভয়াবহতা এতটাই চরম পর্যায়ে চলে গিয়েছিল যে, এমসি কলেজে গেটের নামফলকও দেখা যেতো না স্পষ্টত। তাছাড়া দেয়ালে নিজেদের নেতার নামে অভিবাদন, অভিনন্দন বার্তা, সাংগঠনিক বিভিন্ন বার্তা ইত্যাদিও দৃশ্যমান ছিলো। বাদ পড়েনি গাছগুলোও। ব্যানার ফেস্টুন লাগাতে গিয়ে পেরেকও মারা হতো গাছগুলোতে।
সরেজমিনে এমসি কলেজ গিয়ে অনেক শিক্ষার্থীদের সাথে কথা হয়। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের এই সংস্করণকে বেশ প্রশংসার চোখে দেখছেন বলে জানান তারা। ব্যানার, ফেস্টুনমুক্ত ক্যাম্পাসে গ্রাফিতি ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে এমসি কলেজ অনার্স দ্বিতীয় বর্ষ পড়–য়া এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা তো আগে ক্যাম্পাসে ঢুকার সময় ব্যানার কিংবা ফেস্টুনে এক নেতার বড় মুখখানা দেখে ঢুকতাম, বের হওয়ার সময় আরেক নেতার মুখ দেখে বের হতাম। মাঝে মাঝে মনে হতো আমি কোনো কলেজে যাচ্ছি না, যাচ্ছি রাজনৈতিক পাঠশালায়। এখন আমাদের ক্যাম্পাসে এইসব জঞ্জাল নেই। এখন ক্যাম্পাসে ঢুকার সময় মনে হয় আমি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঢুকছি। বিপ্লবের কথাগুলো চোখে পড়ে। আল্পনা, গ্রাফিতি ইত্যাদিতে চোখের শান্তি পাই।
গ্রাফিতিতে অংশ নেওয়া একজনের সাথেও কথা হয়। তৃতীয় বর্ষ পড়–য়া মীর জান্নাত নামের এই শিক্ষার্থী জানান, ক্যাম্পাস আমাদের। সংস্করণের দায়িত্বটাও আমরা নিয়েছি। যে যার জায়গা থেকে কাজ করেছি। যার ফলে সবার সম্মেলিত প্রচেষ্টায় এখন সুন্দর একটি পরিবেশ তৈরি হয়েছে। গ্রাফিতি অংকনের ফান্ডিং কোথা থেকে আসছে, কলেজ কর্তৃপক্ষ ফান্ড দিচ্ছে কিনা তা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আপাতত আমরা কলেজ কর্তৃপক্ষ থেকে কোনো ফান্ডিং নিচ্ছি না। নিজেরা নিজেদের থেকে টাকা তুলে কাজ চালাচ্ছি। তবে কাজ এখনো অনেক বাকি। যদি মনে করি ক্যাম্পাস কর্তৃপক্ষের ফান্ড দরকার তাহলে অবশ্যই আমরা কলেজ কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করবো।
তাছাড়া আরো বেশ কিছু শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে তাদের প্রত্যাশার কথাও জানতে চাওয়া হয়। তারা অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন। তারা চান, ক্যাম্পাসের চারপাশ দেখতে সুন্দর থাকুক। কোনো নেতা কর্মীর ব্যানার ফেস্টুনের আবার ভরপুর না হোক ক্যাম্পাস। সংগ্রাম, বিপ্লব, ঐতিহ্যর ছবি ও কথাগুলো লেগে থাকুক ক্যাম্পাসের প্রত্যেকটি দেয়ালে দেয়ালে।