বাতিল হয়নি সিলেট চেম্বার কমিটি: ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম শেষ, ২ দিনের নতুন কর্মসূচী
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৫:৩৫ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : সিলেটের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে জটিলতা কাটছেইনা। বিগত সরকারের আমলে ইলেকশনের বদলে সিলেকশনে গঠিত পকেট কমিটি বাতিলের দাবীতে রোববার মানববন্ধন কর্মসূচী থেকে সিলেটের সর্বস্তরের ব্যবসায়ীদের দেয়া ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে কমিটি বাতিল না হওয়ায় বিক্ষুব্ধ সিলেটের ব্যবসায়ী সমাজ।
স্বৈরাচারী সরকার কর্তৃক গঠিত সিলেট চেম্বারের পকেট কমিটি বাতিল, প্রশাসক নিয়োগ ও নির্বাচনের দাবীতে রোববার সিলেটের জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করবেন বিক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা। এরপর সোমবার ঢাকায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে গিয়েও স্মারকলিপি প্রদানের প্রস্তুতি নিয়েছেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির কমিটি নিয়ে সিলেটের ব্যবসায়ীদের মাঝে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। বর্তমান কমিটির নেতৃবৃন্দকে পদত্যাগ করে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন পর্ষদ গঠনের দাবি নিয়ে রাজপথে আন্দোলনে নেমেছেন ব্যবসায়ীরা। ‘গোপন কমিটি’ বাতিলের দাবিতে তারা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন। এই সময়ের মধ্যে সকল পরিচালক পদত্যাগ না করলে চেম্বার ভবন ঘেরাও করে তালা দেওয়ার হুমকি দেন তারা। গত রোববার নগরীর চৌহাট্টাস্থ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে ব্যবসায়ী ছাড়াও বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।
জানা গেছে, ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বর্তমান চেম্বার কমিটির বিরুদ্ধে স্বোচ্চার হন কমিটির পরিচালকসহ ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ। কমিটি বাতিলের দাবী জানিয়ে ইতোমধ্যে চেম্বারের পরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন ৫ পরিচালক। অসুস্থতাজনিত কারণ দেখিয়ে একজন পরিচালককে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দিয়ে আত্মগোপনে চলে যান বর্তমান সভাপতি তাহমিন আহমদ।
চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা হয়। আগের কমিটির সভাপতি তাহমিন আহমদ পুণরায় সভাপতি নির্বাচিত হন। আর সিনিয়র সহসভাপতি হিসেবে এমদাদ হোসেন ও সহসভাপতি এহতেশামুল হক চৌধুরী নির্বাচিত হন। পর্ষদের দায়িত্বশীলদের দাবি, ২০২৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ছিল। ওই সময় তিন ক্যাটাগরিতে ২৫ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন। পরে ২ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করলে ২৩ পদে সমান সংখ্যক প্রার্থী হওয়ায় তাদেরকে ২০২৪-২৬ মেয়াদের জন্য বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
তবে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ ছিল নির্বাচনের ব্যাপারে তারা কিছুই জানতেন না। গোপনে সমঝোতার মাধ্যমে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবার নির্বাচনী তফশিল সংবাদপত্রে প্রকাশ ও সদস্যদের অবগতির জন্য প্রচার করা হলেও সেই পন্থা অবলম্বন করা হয়নি। এরপর থেকে সাধারণ ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভের দেখা দেয়।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর সিলেট চেম্বারের সভাপতির পদত্যাগ ও পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার দাবি তুলেন ব্যবসায়ীরা। এ নিয়ে তারা নিজেদের মধ্যে কয়েক দফা বৈঠকও করেন। চেম্বার সভাপতি তাহমিন আহমদকে কয়েক দফা তারা অনুরোধ করলেও তিনি পদত্যাগ না করার সিদ্ধান্তে অটল থাকেন।
এদিকে, ব্যবসায়ীদের অসন্তোষের মুখে গত বৃহস্পতিবার পরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করেন আলীমুল এহসান চৌধুরী। এরপর গত শনিবার সিনিয়র সহসভাপতি এমদাদ হোসেন, সহসভাপতি এহতেশামুল হক চৌধুরী, পরিচালক জহিরুল হক চৌধুরী শিরু ও খন্দকার ইশরার আহমদ রকি পদত্যাগ করেন।
তাদের পদত্যাগের পর গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে পরিচালক মুজিবুর রহমান মিন্টুকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়ার কথা জানায় সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি। ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সভাপতি তাহমিন আহমদ অসুস্থতার কারণে দায়িত্ব পালনে অপারগ। তাই সিনিয়র পরিচালক মুজিবুর রহমান মিন্টুকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। চেম্বার সভাপতি তাহমিন আহমদ সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য। ইতোমধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার ঘটনায় তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে।
সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির বর্তমান পরিচালনা পর্ষদকে ‘গোপন কমিটি’ আখ্যা দিয়ে গত রোববার শহিদ মিনারের সামনে মানববন্ধন করেন ব্যবসায়ীরা। সর্বস্তরের ব্যবসায়ীর ব্যানারে তারা এই কর্মসূচি পালন করেন। মানববন্ধন থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পদত্যাগের জন্য সময় বেঁধে দেন ব্যবসায়ীরা।
সিলেট মহানগর জামায়াতের আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, বিগত স্বৈরাচারী সরকার নগ্ন দলীয় করণের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সকল প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তাদের ভয়াল থাবা থেকে সিলেটের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন চেম্বার অব কমার্সও রক্ষা পায়নি। এক শীর্ষ আওয়ামী লীগ নেতার হস্তক্ষেপে কোনধরণে ইলেকশন ছাড়া সিলেকশনের মাধ্যমে চেম্বারের পকেট কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে সিলেটের ব্যবসায়ীদের অধিকার ক্ষুন্ন করা হয়েছে। পছন্দের দলীয়দের দিয়ে গঠিত পকেট কমিটি বিগত সময়ে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। ইতোমধ্যে চেম্বার থেকে ৫জন পরিচালক পদত্যাগ করেছেন। তাই এই পকেট কমিটি রাখার কোন সুযোগ নেই। অবিলম্বে পকেট কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ঐতিহ্যবাহী সিলেট চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রি’র নতুন কমিটি গঠন করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবী জানাচ্ছি।
সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার সকল স্তরে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। তাদের হাত থেকে সিলেট চেম্বারও রক্ষা পায়নি। চর দখলের মতো তারা লুটপাট করতে চেম্বারের চেয়ার দখলে মত্ত হয়ে উঠেছিল। ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে তাই তাদের দোসরদের দেয়া চেম্বার কমিটি ভেঙ্গে দিতে হবে। প্রয়োজনে প্রশাসক নিয়োগ ও দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচনের মাধ্যমে চেম্বারের কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিতে হবে। বিএনপি সব সময় ব্যবসায়ীদের পাশে রয়েছে। এছাড়া গণতন্ত্রের পক্ষে আমাদের অবস্থান ছিল, আছে এবং থাকবে।
এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের সভাপতি আবদুর রহমান রিপন দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, বিগত সরকারের আমলে ব্যবসায়ীদের অন্ধকারে রেখে ষড়যন্ত্র করে হঠাৎ করে একটি পকেট কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। এর মাধ্যমে ঐতিহ্যবাহী সিলেট চেম্বারে দলীয়করণের নগ্ন থাবা বসানো হয়। তখন নানা কারণে ব্যবসায়ীরা কথা বলতে পারেন নি। দেশ স্বৈরাচারমুক্ত হয়েছে। ব্যবসায়ীরা নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবীতে স্বোচ্চার হয়েছেন। আমরা বর্তমান পকেট কমিটি বাতিলের দাবীতে ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়েছিলাম। যা বৃহস্পতিবার পার হয়েছে। শুক্র ও শনিবার দুইদিন সরকারী ছুটি। আমরা রোববার জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করবো। সোমবার ঢাকায় গিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি প্রদান করবো। আমাদের বিশ^াস বর্তমান অন্তর্বর্তীকালিন সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ বর্তমান পকেট কমিটি বাতিল করে প্রশাসক নিয়োগ দিবেন। একই সাথে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। অন্যথায় ব্যবসায়ীরা কঠোর কর্মসূচী দিতে বাধ্য হবে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) সুবর্ণা সরকার দৈনিক জালালাবাদকে জানান, সিলেট চেম্বারের কমিটির জটিলতা নিয়ে কোন তথ্য আমার জানা নেই। আর আল্টিমেটামের বিষয়টিও আমি প্রথম শুনলাম। সিলেট চেম্বারের বিষয়টি দেখভাল করে মুলত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে জেলা প্রশাসন। যদি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত কোন নির্দেশনা আসে তাহলে আমরা সেটা বাস্তবায়ন করবো।