বন্যায় বিপর্যয় ধারণারও বেশি
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ আগস্ট ২০২৪, ১১:৪০:৪৪ অপরাহ্ন
মৃত্যু অর্ধশত, আর্থিক ক্ষতি ২০ হাজার কোটি
জালালাবাদ রিপোর্ট: স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা কবলিত দেশের ১১ জেলায় পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে ধীরে। তবে এর সঙ্গে-সঙ্গে স্পষ্ট হয়ে উঠছে ক্ষতচিহ্ন। মাসের শেষভাগে ছড়িয়ে পড়া ভয়াবহ বন্যার আঘাতে বিপর্যয়ের চিত্র ধারণা চেয়েও বেশি
বিশেষ করে ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, খাগড়াছড়ি যেন এক বিধ্বস্ত জনপদের নাম। সিলেটের মৌলভীবাজার জেলায়ও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সড়কগুলো ভেঙেচুরে চুরমার হয়ে গেছে। ক্ষেতে নেই সবুজের চিহ্ন। হাজার হাজার একর চারণভূমি ধারণ করেছে ধূসর বর্ণ। আর মানুষের ঘর-বাড়ি যেন যুদ্ধ বিধ্বস্ত কোন জনপদের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। এ অবস্থায় অস্তিত্ব সংকটে পড়েছেন লাখো মানুষ। কৃষক ও খামারিদের চোখে কেবলই অন্ধকার।
ক্ষয়ক্ষতির পরিসংখ্যান চমকে উঠার মতো। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ন্যূনতম হিসাব বিচেনায় বন্যায় এ পর্যন্ত সরাসরি আর্থিক ক্ষতি ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। তাঁদের মতে, জেলা পর্যায়ে কৃষিবহির্ভূত অন্য খাতে ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়। বিশেষ করে ছোট ও ক্ষুদ্র ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, গ্রামীণ অর্থনীতির বিভিন্ন উপখাত এবারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আবার বন্যা আক্রান্ত জেলাগুলোর আশপাশের জেলাগুলোও ক্ষতির শিকার হয়েছে। বসতবাড়ি ও অবকাঠামো মিলিয়ে এসব খাতে ১৫ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে।
আর কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে ক্ষতি ছাড়িয়েছে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত বন্যায় দেশের অর্থিক ক্ষতি অন্তত ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।এলজিইডি হতে পাওয়া তথ্য মতে, সাম্প্রতিক অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় প্রাথমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৭ হাজার ৭২২ কিলোমিটার রাস্তা এবং ১ হাজার ১০১টি ব্রিজ/কালভার্ট।
কৃষি অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিকসের পরিচালক অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘বন্যা আক্রান্ত জেলাগুলোয় প্রায় সব ধরনের ব্যাবসায়িক এবং ক্ষুদ্র, মাঝারিসহ সব ধরনের উৎপাদনশীল কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এক সপ্তাহ ধরে চলমান এই বন্যায় অর্থনৈতিকভাবে ভঙ্গুর অবস্থায় পড়েছে এসব জেলা। গ্রামীণ অর্থনীতির কৃষি ও অকৃষিজ কর্মকা- বন্ধ হয়ে পড়েছে। ফলে সরাসরি ক্ষতি ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি হলে প্রকৃত ক্ষতি আরো অনেক বেশি হবে।
মৃত্যু অর্ধশত ছাড়িয়েছে :
এদিকে, বন্যায় মৃতের সংখ্যা অর্ধশত ছাড়িয়েছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৫২ জন মারা যাওয়ার তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে ৩৯ জন পুরুষ, ৬ জন নারী ও ৭ শিশু। বন্যায় গতকাল পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৩১।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে এ তথ্য তুলে ধরেন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী রেজা। তিনি জানান, এখন পর্যন্ত ১১টি জেলার ৬৮টি উপজেলা বন্যায় প্লাবিত। জেলাগুলো হলো ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লক্ষ্মীপুর, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সিলেট।
মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ফেনীতে ১৭, কুমিল্লায় ১৪, নোয়াখালীতে ৮, চট্টগ্রামে ৬, কক্সবাজারে ৩, খাগড়াছড়িতে ১, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১, লক্ষ্মীপুরে ১ ও মৌলভীবাজারে ১ জন রয়েছেন। এছাড়া মৌলভীবাজারে একজন নিখোঁজ আছেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এখনো ১০ লাখ ৭২ হাজার ৫৭৯টি পরিবার পানিবন্দী হয়ে আছে। এছাড়া আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৫৪ লাখ ৮০ হাজার ৪৬৩ জনে। আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ৩ হাজার ৪০৩টি। এগুলোতে গতকাল পর্যন্ত ৫ লাখ ২ হাজার ৫০১ জনকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।