ছাতক-সিলেট রেলপথ চালুর দাবী এলাকাবাসীর
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ আগস্ট ২০২৪, ৬:১১:১২ অপরাহ্ন
ছাতক প্রতিনিধি: শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সুনামগঞ্জের ছাতকের ঐতিহ্য বলে খ্যাত ছাতক-সিলেট রেল চলাচলের ব্যাপারে আবারো আশাবাদী হয়ে উঠেছেন ছাতকের আপামর জনগণ। ছাতক-সিলেট রেল যোগাযোগ পুনঃস্থাপন এবং রেল যোগাযোগ আধুনিকায়নের দাবী আবারো জোরালোভাবে উঠেছে।
ঐতিহ্যবাহী ছাতক-সিলেট রেল যোগাযোগ জোড়াতালি দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসলেও বিগত করোনা মহামারী শুরুর দিকেই সারা দেশের ন্যায় এ রেল লাইনে রেল যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়। এ অঞ্চলের মানুষ তখন মনে করেছিলেন হয়তো পরিস্থিতির উন্নতি হলে আবারো ছাতক-সিলেট রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়ে উঠবে। সময়ের ব্যবধানে দেশের করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে থাকলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের রেল চলাচলও ক্রমে স্বাভাবিক হতে থাকে। কিন্তু ছাতক-সিলেট রেল যোগাযোগের ভাগ্যাকাশে দেখা দেয় কালো মেঘের ঘনঘটা। লাইন সংস্কারসহ বিভিন্ন অজুহাতে কালক্ষেপন করতে থাকে রেল কর্তৃপক্ষ। এ সুযোগে একটি দুর্নীতিবাজ চক্র লাইন সংস্কারের নামে সরকারী অর্থ আত্মসাতের ফন্দিতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। ছাতক-সিলেট লাইন সংস্কারের নামে কয়েক দফায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে যায় এ চক্রটি। ক্রমেই অনিশ্চয়তার দিকে ধাবিত হতে থাকে ছাতক-সিলেট লাইনে রেল চলাচলের বিষয়টি।
এক সময়ের যাত্রী সাধারনের পদচারণায় মুখরিত ছাতক রেলওয়ে স্টেশন হয়ে উঠে অপরাধীদের অভয়ারণ্য। ২০২২ সালের স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ছাতক-সিলেট রেল লাইনের ছাতকের অংশ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ছাতকের অংশের প্রায় ১৩ কিলোমিটার রেললাইন হয়ে পড়ে লন্ডভন্ড। বিভিন্ন অংশের লাইন, স্লিপার এবং মাটি-পাথর ভেসে যায় বন্যার প্রবল স্রোতে।
বন্যা পরবর্তি সময়ে অর্থ মন্ত্রণালয়, এডিপি এবং রেলওয়ের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাতকে এসে কয়েকদফা লাইন পরিদর্শন, জরীপ, ছাতক-সিলেট রেল লাইন আধুনিকায়ন, সিলেট-ছাতক-সুনামগঞ্জ রেল লাইন স্থাপনসহ বিভিন্ন বিষয়ে রাজনীতিবিদ, সুধীজন, সাংবাদিক ও জনপ্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক করে দ্রুত সময়ের মধ্যে ছাতক-সিলেট রেল যোগাযোগ চালুর ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
কিন্তু মন্ত্রী-এমপির ক্ষমতার লড়াইয়ে আবারো শিকেয় উঠে ছাতক-সিলেট রেল যোগাযোগ পুনঃস্থাপন ব্যবস্থা। এক পর্যায়ে রেলওয়ের কোটি-কোটি টাকার সম্পদে চলতে থাকে হরিলুট। যে যার মতে রেলের লৌহজাত সামগ্রী, লাইন, স্লিপার, এমনকি লাইনে থাকা বগি পর্যন্ত কেটে বিক্রি করা হয়েছে। লাইনের পাথর চুরি করে নিয়ে পাথর শুন্য করা হয়েছে রেল লাইন। রেলওয়ের কোটি-কোটি টাকার মূল্যের ভু-সম্পদ, স্টাফ কোয়াটার, বাসাবাড়ি, হাসপাতাল, পুকুরসহ বিভিন্ন স্থাপনা যে যার মতো দখল করে নিয়েছে। প্রতিনিয়তই চুরি হতে থাকে রেলওয়ের বিভিন্ন সম্পদ। রেললাইনে থাকা পাথর এখন আর অবশিষ্ট নেই। বিভিন্ন স্থানের কাঠের স্লিপার প্রতিনিয়তই খুলে নিয়ে যাচ্ছে চোরেরা। অপরাধীদের অভয়ারণ্য জনশুন্য রেল স্টেশন রাত্রি নামার সাথে-সাথে বখাটেদের আনাগোনা বেড়ে যায়। অরক্ষিত রেলওয়ে স্টেশন এখন মাদকসেবী ও মাদক বিক্রেতাদের নিরাপদ স্থানে পরিনত হয়েছে।
সিলেট অঞ্চলের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীক কেন্দ্র হিসেবে মালামাল পরিবহনকে প্রাধান্য দিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয় ছাতক-সিলেট রেল লাইন। বৃটিশ শাসনামল থেকে উপমহাদেশের মধ্যে ছাতকের ব্যবসা বাণিজ্যে রয়েছে এক গৌরবাজ্জল ইতিহাস। ছাতকের পাথর, চুনাপাথর, বালু, সিমেন্ট, কয়লা ও কমলা লেবুসহ বিভিন্ন ব্যবসায় বাণিজিক সুখ্যাতি ছিল উপমহাদেশসহ গোটা বিশ্বময়। ছাতকের ইতিহাস ঐতিহ্যের সাথে অতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে ছাতক-সিলেট রেল যোগাযোগ। সুদীর্ঘকালের ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং ছাতক-সিলেট রেলের সোনালী অতীত ফিরিয়ে আনার লক্ষে সুনামগঞ্জ জেলার একমাত্র রেলপথ ছাতক-সিলেট রেল যোগাযোগ পুন:স্থাপন ও আধুনিকায়ন করার দাবী এখন সর্বমহলে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে ছাতক বাজারের উর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (কার্য) আব্দুল নুর জানান, রেল লাইন আধুনিকায়ন ও সংস্কারে ২৩০ কোটি টাকার একটি বরাদ্দ হয়েছে। সংস্কার কাজ দ্রুত সময়ের মধ্যে শুরু করার সম্ভাবনা রয়েছে।