বন্যায় বিপর্যস্ত সড়ক নেটওয়ার্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ আগস্ট ২০২৪, ৩:০০:৪৯ অপরাহ্ন
সিলেটসহ দেশের ৮ হাজার কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত
জালালাবাদ রিপোর্ট : চলমান ভয়াবহ বন্যায় সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জসহ দেশের সড়ক নেটওয়ার্ক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, দেশে মোট ৮ হাজার কিলোমিটার সড়ক ব্যবস্থায় বিপর্যয় ঘটেছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এখনো বন্যার রুদ্র রূপ দেখছে দেশের মানুষ। বন্যার প্রকোপ এখনো পুরোপুরি কাটেনি। এখনো বন্যাক্রান্ত সব এলাকা থেকে পানি নামেনি। এরই মধ্যে যেসব এলাকা থেকে পানি নামতে শুরু করেছে, সেখানে সড়কের ক্ষত স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
তবে এখনো পুরো ক্ষতি নির্ধারণ করতে পারেনি সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। প্রাথমিক প্রতিবেদনে জানা গেছে গত ২০ থেকে ২৮ আগস্ট পর্যন্ত বন্যায় ৮ হাজার কিলোমিটারের বেশি সড়ক এবং এক হাজার ১০১টি সেতু ও কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে জাতীয় মহাসড়ক ১০৮ কিলোমিটার, আঞ্চলিক মহাসড়ক ১২৪ কিলোমিটার, জেলা সড়ক ৫৩৪ কিলোমিটার এবং গ্রামীণ সড়ক সাত হাজার ৭২২ কিলোমিটার। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এই হিসাব এখনই চূড়ান্ত করা সম্ভব নয়। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়বে।
দেশের পূর্বাঞ্চলে অতিবৃষ্টি ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বন্যা দেখা দেয়। বন্যায় সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের সড়ক নেটওয়ার্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বন্যায় গত বুধবার পর্যন্ত মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম দক্ষিণ, কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির সড়ক বিভাগ থেকে অন্তত ১৫৭টি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার প্রাথমিক প্রতিবেদন পাওয়া গেছে।
সওজের প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের মোট দৈর্ঘ্য ৭৭৩.৪৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে জাতীয় মহাসড়কের দৈর্ঘ্য ১০৭.০৫ কিলোমিটার, আঞ্চলিক মহাসড়কের দৈর্ঘ্য ১২৩.৭৪ কিলোমিটার এবং জেলা মহাসড়কের দৈর্ঘ্য ৫৪২.৬৬ কিলোমিটার।
এখনো অনেক সড়কে পানি। পানি পুরোপুরি না সরলে প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ বোঝা যাবে না। আবার ক্ষয়ক্ষতি কতটা গভীর, তার ওপর নির্ভর করবে মেরামতের ধরন। সেই সঙ্গে দেশের উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়াতে পারে।
সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের যুগ্ম সচিব (কানেক্টিভিটি) মো. আব্দুল মোক্তাদের বলেন, বন্যার পানি অনেক লম্বা সময় ছিল, যেটা ঝুঁকির বড় কারণ হতে পারে।টেকনিক্যাল টিম (কারিগরি দল) পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিলে ক্ষতির প্রকৃত চিত্র বুঝতে পারব। মেরামত কোন পর্যায়ে করতে হবে, সেটিও ক্ষতির অবস্থার ওপর নির্ভর করছে। এখনো বন্যার পানি যায়নি। ফলে আমাদের আরো অপেক্ষা করতে হবে।’
সওজ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মঈনুল হাসান বলেন, কত টাকার ক্ষতি হলো সেটা পরিমাপ করতে আরো সময় লাগবে। একেক অংশে ক্ষতির ধরন একেক রকম। বন্যার পানি পুরো নেমে গেলে আর্থিক ক্ষতি নির্ণয় করা সম্ভব হবে। যেসব মেরামত আমরা নিজেরা করতে পারব, সেগুলো নিজেরাই করে ফেলব।
মৌলভীবাজারে ৩০০ কিলোমিটার সড়কের ক্ষতি :
চলমান বন্যায় সিলেটে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে মৌলভীবাজার জেলা। বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ার সঙ্গে জেলায় ভেসে উঠছে ক্ষতচিহ্ন। সেই সঙ্গে বেড়েছে মানুষের দুর্ভোগ। বেশ কয়েকটি সড়ক ভেঙে গেছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের রাজনগর থেকে বালাগঞ্জ, জুড়ী-ফুলতলা, জুড়ী-লাটিঠিলা, মৌলভীবাজার-কুলাউড়া, মৌলভীবাজার-শমশেরনগর, কুলাউড়া-শমশেরনগর সড়ক ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) বিভিন্ন গ্রামীণ ও আঞ্চলিক সড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় এগুলো ভেঙে গেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত অনেক সড়ক যানবাহন চলাচল অনুপযোগী হয়ে ওঠেছে। জেলায় প্রায় ৩০০ কিলোমিটারের সড়ক বন্যার পানিতে ভেঙে গেছে, সড়কে তৈরি হয়েছে ছোট-বড় গর্ত। এসব সড়ক দিয়ে যানবাহন ও মানুষ চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন কয়েক লাখ মানুষ। দ্রুত সময়ে সড়কগুলো মেরামত করে যান চলাচলের উপযোগী করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এলজিইডি সূত্র জানা যায়, সাম্প্রতিক বন্যায় জেলার ২১০ কিলোমিটার পাকা সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেঙে গেছে ৯টি সেতু ও কালভার্ট। এসব সড়ক ও সেতু মেরামত এবং পুনর্নির্মানে প্রায় ১৮০ কোটি টাকা প্রয়োজন। তবে এখনো পুরোপুরি হিসাব পাওয়া যায়নি, কারণ বিভিন্ন জায়গায় সড়কের ওপর এখনো পানি। কমলগঞ্জ, রাজনগর, কুলাউড়া উপজেলার গ্রামীণ ও আঞ্চলিক সড়ক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
অন্যদিকে মৌলভীবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলায় চলমান বন্যায় ৭৮ কিলোমিটার সড়ক, ৬টি কালভার্ট ও একটি ব্রিজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টাকার অংকে ক্ষতির পরিমাণ এখনো জানা যায়নি। তবে সম্পূর্ণভাবে পানি নেমে গেলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এদিকে, চলমান বন্যার আগে মে-জুন মাসে পরপর তিন দফা বন্যা কবলে পড়ে সিলেট-সুনামগঞ্জ। তখন সিলেটের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ২০২২ এর ক্ষত শুকানোর আগেই ভেঙ্গে যায় অসংখ্য সড়ক। সেসময় ক্ষয়ক্ষতি হাজার কোটি ছাড়িয়ে যায় বলে জানা গিয়েছিলো।
যদিও এখনো সেই সড়কগুলোর ক্ষত সেরে উঠেনি রাজনৈতিক অস্থিরতা ও পটপরিবর্তনের কারণে। কবে সেরে উঠবে তা নিয়েও আছে প্রশ্ন।