অনুপস্থিত কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হচ্ছে : সিলেটে লাপাত্তা ১১, কারাগারে ১
প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ আগস্ট ২০২৪, ৯:৩৭:৪৬ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: আওয়ামী সরকারের পতনের পর বেশ কয়েকদিন বন্ধ ছিল দেশের সিটি কর্পোরেশনগুলোর সেবা কার্যক্রম, সিলেটও এর ব্যতিক্রম নয়। ইতিমধ্যে মেয়রকে অপসারণ করে সেখানে প্রশাসক নিয়োগ করেছে সরকার। নগরভবনে আবারও ফিরেছে প্রাণ। তবে নগর ভবন চালু হলেও সিলেটে অনেক কাউন্সিলর অফিসে দেখা মিলছেনা কাউন্সিলরদের।
আওয়ামীলীগ নেতা অধিকাংশ এসব কাউন্সিলর ৫ আগস্টের পর সেই যে আত্মগোপনে গিয়েছেন আর তাদের কোনো খবর মিলছেনা। ফলে সেসব ওয়ার্ডে সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন লোকজন। সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর দিয়ে কাজ চলছে বলে সিটি কর্পোরেশনর সূত্রে জানা গেছে। নগর কর্তৃপক্ষ বলছে নগর ভবনে কাউন্সিলরদের প্রতিদিন উপস্থিতি বাধ্যতামূলক না হলেও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে সেবাপ্রদান করতে হবে। যার দীর্ঘদিন থেকে নাগরিকদের সেবা বঞ্চিত রখেছেন তাদের বিরুদ্ধে আই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিটি কর্পোরেশন আইন অনুযায়ী কোনো কাউন্সিলর বছরে সর্বোচ্চ ৩ মাস ছুটি নিতে পারেন এবং তার এই অনুপস্থিতিতে পাশের ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দায়িত্ব পালন করবেন। কিন্তু আত্মগোপনে থাকা এসব কাউন্সিলর সেই আইনের কোনো নিয়মে ছুটিতে নেই। শুধু ৩৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিরন মাহমুদ নীপু একটি মামলায় কারাগারে আছেন। বাকিরা ৫ আগস্টে গা ঢাকা দিয়ে আর ফিরেন নি। এমনকি তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনও বন্ধ। অনেকের ঘনিষ্ট সহচর ও আত্মীরাও অগ্যাত স্থানে চলে গেছেন।
স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন, ২০০৯ এর দ্বিতীয় ভাগের দ্বিতীয় অধ্যায়ের মেয়র ও কাউন্সিলর সম্পর্কিত বিধানে ছুটি বা অনুপস্থিতি সম্পর্কে বলা আছে- “(১) সরকার কোন মেয়রকে এবং মেয়র কোন কাউন্সিলরকে এক বৎসরে সর্বোচ্চ তিন মাস ছুটি মঞ্জুর করিতে পারিবেন। (২) কোন কাউন্সিলর ছুটিতে থাকিলে বা অন্য কোন কারণে অনুপস্থিত থাকিলে উক্ত ছুটি বা অনুপস্থিতকালীন সময়ের জন্য মেয়র পার্শ্ববর্তী ওয়ার্ডের একজন কাউন্সিলরকে দায়িত্ব প্রদান করিতে পারিবেন। (৩) মেয়র বা কাউন্সিলরের উপ-ধারা (১) এ বর্ণিত ছুটির অতিরিক্ত ছুটির প্রয়োজন হইলে সরকার এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিবে।”
আত্মগোপনে থাকা এসব কাউন্সিলর হলেন- ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর বিক্রম কর সম্রাট, ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এ. কে. এ লায়েক, ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রেজওয়ান আহমদ, ৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জগদীশ চন্দ্র দাশ, ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মখলিছুর রহমান কামরান, ১০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারেক উদ্দিন তাজ, ১৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ছয়ফুল আমিন (বাকের), ২০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আজাদুর রহমান আজাদ, ২৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তাকবির ইসলাম পিন্টু, ৩২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. রুহেল আহমদ, ৩৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম।এরমধ্যে নগরীর ২ নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর বিক্রম কর সম্রাটের কার্যালয়ে দেখা যায় তা বন্ধ। কাউন্সিলর ৫ আগস্ট থেকে লাপাত্তা। অন্য সময় তিনি না থাকলেও তার কাজগুলো করতেন কাউন্সিলরের অন্যতম সহচর তার চাচাতো ভাই বিবেক কর। স¤্রাট কাউন্সিলর থাকাবস্থায়ই বিবেক কর ছিলেন বিকল্প কাউন্সিলর। তিনি টিসিবি কার্ড, ওএমএস কার্ড, ভাতার তালিকা ও কার্ড নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। কিন্তু বিবেক করও আত্মগোপনে। কার্যালয়ের কাছে একটি মুদি দোকানে দেখা যায় কাউন্সিলরের ব্যক্তিগত সহকারী পার্থকে। তিনি বলেন কাউন্সিলর আত্মগোপনে কোথায় আছেন জানেন না। তার ফোনও বন্ধ। অনেকে এসে কাউন্সিলরকে না পেয়ে তার খোঁজ করেন, ফোন দেন তাই তিনি এসেছেন। কিন্তু কাউন্সিলর সংশ্লিষ্ট কোনো কাজ সম্ভব হচ্ছে না। শুধু বিদ্যুতের লাইন, ড্রেন পরিষ্কার কার্যক্রম এসব কিছু কাজ হচ্ছে।
এ বিষয়ে সিলেট কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন- নগরভবনে প্রতিদিন উপস্থিত হওয়ার কাউন্সিলরদের জন্য বাধ্যতামূলক নয়। তবে সেবা দিতে হবে, এটি বাধ্যতামূলক। কয়েকজন সাধারণ কাউন্সিলরকে নাগরিকরা পাচ্ছেন না, এটি সত্যি। সংরক্ষিত ওয়ার্ড (নারী) কাউন্সিলরদের দ্বারা তাদের কাজ পূরণ হয়ে যাচ্ছেন। তবে দীর্ঘদিন কোনো কাউন্সিলরের সেবা না দেওয়ার বিষয় প্রমাণিত হলে স্থানীয়র সরকার আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।