বড়লেখায় অর্ধশতাধিক বর্গাচাষিকে প্রধান শিক্ষকের আমন চারা বিতরণ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭:২৬:৫১ অপরাহ্ন
বড়লেখা প্রতিনিধি:
তিন দফার বন্যায় প্রায় এক মাসেরও বেশি সময় পানিবন্দী থাকে বড়লেখা উপজেলার ২৫২টি গ্রাম। ধীরগতিতে পানি নামায় ভোগান্তিতে পড়েন লক্ষাধিক মানুষ। দীর্ঘ বন্যার কারণে হাকালুকি হাওর এলাকার অনেক চাষের জমি থেকে নামেনি পানি। ধীরগতিতে পানি কমায় বীজতলা তৈরিতে ব্যর্থ হচ্ছেন কৃষকেরা, মৌসুমের শুরুতেই আবাদ হুমকির মুখে পড়ে। এরকমই একটি ইউনিয়ন হচ্ছে উপজেলার দাসেরবাজার। এ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের অনেক জমি বীজতলা তৈরির উপযোগী হয়নি। এতে বিপাকে পড়েন ওই ইউনিয়নের প্রান্তিক বর্গাচাষিরা। তবে বর্গাচাষিদের কষ্টের কথা চিন্তা করে তাদের পাশে দাঁড়ান দাসেরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিপক রঞ্জন দাস। উপজেলা কৃষি বিভাগের সার-বীজ ও সহযোগিতায় স্কুলের খেলার মাঠে ব্যক্তিগত অর্থায়নে ৮০ শতাংশ ভূমি চাষ দিয়ে বীজতলা তৈরি করেন। ১৮ জুলাই বপন করেন ২৭০ কেজি আমন বীজ। তার এই বীজতলা থেকে উঠানো ধানের চারায় অর্ধশতাধিক বর্গা চাষী আমনের চারা রোপণ করছেন।
সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে ৫৩ জন বর্গাচাষীকে ধানের চারার বীজতলা (বেড) বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। কৃষকেরা নিজেরা বেড থেকে চারা উঠিয়ে জমিতে লাগাবেন। এসময় উপজেলা কৃষি অফিসার মনোয়ার হোসেন, কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার এসএম রাশেদুজ্জামান বিন হাফেজ, ইউপি চেয়ারম্যান স্বপন চক্রবর্তী, প্রধান শিক্ষক দীপক রঞ্জন দাস, স্কুলের শিক্ষানুরাগী সদস্য ফয়সল আহমদ ও সংশ্লিষ্ট বর্গাচাষীরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান শিক্ষক দীপক রঞ্জন দাস জানান, তার এলাকার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রান্তিক বর্গাচাষিদের কথা চিন্তা করে স্কুলের খেলার মাঠে আমন ধানের বীজ বপনের উদ্যোগ নেন। কৃষি বিভাগের বীজ, সার ও কারিগরি সহায়তায় নিজের অর্থে বীজতলা তৈরী করেন। বীজতলায় ৬ চাষ দিয়ে ২০ জুলাই বীজ বপন করেন। তিনি খোঁজে খোঁজে কৃষকের ক্ষতিগ্রস্ত ৫৩ জন বর্গাচাষি কৃষকের তালিকা তৈরী করেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের মুখে হাসি ফোটাতেই তার এই প্রচেষ্টা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মনোয়ার হোসেন জানান, বড়লেখায় আমন চাষিদের অনেকের বীজতলা বন্যার পানিতে নিমজ্জিত থাকায় কৃষিবিভাগ উঁচু এলাকার বিভিন্ন স্থানে বীজ বপনের পরামর্শ দেয়। দাসেরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দীপক রঞ্জন দাস আগ্রহী হওয়ায় তাকে আমন বীজ (বি.আর-২২), রাসায়নিক সার ও কারিগরি সহায়তা দেওয়া হয়। তার অর্থায়নে ৮০ শতাংশ ভূমিতে বপন করা ২৭০ কেজি বীজে ৫৩ বিঘা জমিতে ধান রোপন করা যাবে। এখান থেকে ৩৪ মেট্টিক টন ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।
ইউএনও নাজরাতুন নাঈম জানান, প্রধান শিক্ষক দীপক রঞ্জন দাসের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। যে কোনো দুর্যোগে হতদরিদ্র কৃষকের সহায়তায় এগিয়ে আসলে তারা কৃষিপণ্য উৎপাদনে আরো বেশি উৎসাহী হবেন।