বিদ্যুৎ বিতরণে বৈষম্যের শিকার সিলেট
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩:৪৮:১৬ অপরাহ্ন
ঘন্টায় ঘন্টায় লোডশেডিং, বিপর্যস্ত জনজীবন
এমজেএইচ জামিল : তীব্র গরমের সাথে পাল্লা দিয়ে সিলেটে বেড়েছে লোডশেডিং। দিনে ও রাতে ঘন্টায় ঘন্টায় লোডশেডিংয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ব্যবসা বাণিজ্যে নামছে ধস। এছাড়া বাণিজ্যিক উৎপাদন ব্যহত হওয়ার পাশাপাশি তীব্র গরমে নাজেহাল হচ্ছেন সাধারণ গ্রাহকরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ ঝাড়ছেন অনেকে। তবে বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অর্ধেকে নেমে আসায় তারা লোডশেডিং দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
এদিকে সারাদেশের তুলনায় সিলেটে লোডশেডিং বৃদ্ধির বিষয়টিকে বৈষম্য হিসেবে দেখছেন কেউ কেউ। বৃহস্পতিবার দিনভর রাজধানী ঢাকা, বাণিজ্য নগরী চট্টগ্রামসহ দেশের কয়েকটি বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সব বিভাগেই লোডশেডিং ছিল তবে তা সহনীয়। গড়ে ৩ থেকে ৪ ঘন্টার বেশী হবেনা। অথচ এই তীব্র গরমে বৃহস্পতিবার সিলেট নগরীতে অর্ধেক সময় বিদ্যুৎ ছিলনা। এছাড়া সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও গ্রাম-গঞ্জে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। সেসব স্থানে দিনে রাতে গড়ে ৭-৮ ঘন্টাও বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতন পরবর্তী অন্তর্বর্তীকালিন সরকার থাকাকালে দেশের অন্যান্য বিভাগের তুলনায় সিলেটে বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে দেয়া সিলেটবাসীর সাথে সুষ্পষ্ট বৈষম্য বলে মনে করছেন অনেকেই। এ ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছেন সিলেটের ব্যবসায়ীসহ সর্বস্তরের নাগরিকবৃন্দ।
জানা গেছে, সিলেটে ১ ঘন্টা পর পর লোডশেডিং এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঘন্টায় ঘন্টায় লোডশেডিংয়ের ফলে একদিকে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা অপর দিকে বাড়ছে গরমজনিত রোগব্যাধি। ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে। শপিং সেন্টার, বিপনী-বিতানে বিরাজ করছে ক্রেতার খরা। এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে।
আম্বরখানার ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন জানান, সিলেটের ব্যবসায়ীদের দুর্ভোগ যেন পিছু চাড়ছেনা। এমনিতেই বন্যায় ব্যবসার ক্ষতি হয়েছে। তারপর দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে ব্যবসা বাণিজ্য প্রায় স্থবির ছিল। হাজার হাজার ছাত্রজনতার রক্তের বিনিময়ে দেশ ফ্যাসিবাদ ও লুটপাটকারীদের হাত থেকে মুক্ত হয়েছে। দেশ পরিচালনা করছে ছাত্রজনতার সরকার। এরই মধ্যে এভাবে অসহনীয় লোডশেডিংয়ের আড়ালে কোন ষড়যন্ত্র আছে কিনা সে ব্যাপারটি খতিয়ে দেখা দরকার।
এদিকে লোডশেডিং নিয়ে সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বলছে, গরম বৃদ্ধি পাওয়ায় বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু জাতীয় গ্রিড থেকে চাহিদামতো বিদ্যুৎ সরবরাহ না হওয়ায় সিলেটে লোডশেডিং বেড়েছে। সহসা এ থেকে মুক্তির সম্ভাবনা নেই বলেও জানান তারা। বিদ্যুৎ বিভাগের হিসাবে সিলেটে ৩০ শতাংশ লোডশেডিংয়ের তথ্যের কথা জানানো হলেও বাস্তবে লোডশেডিং ৫০ শতাংশের বেশী হচ্ছে বলে গ্রাহকরা জানিয়েছেন।
সিলেটে বিদ্যুৎ সরবরাহে বৈষম্যের ব্যাপারে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, দীর্ঘদিন থেকে সিলেট নেতৃত্ব শুণ্যতায় ভুগছে। এতে আমরা আমাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত রয়েছি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে দেশে নতুন যুগের সুচনা হয়েছে। দেশের সকল সেক্টর থেকে দুর্নীতিবাজদের সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ফসল সরকারের শাসনামলে সিলেট বিদ্যুৎ প্রাপ্তিতে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে তা কোনভাবেই মেনে নেয়া যাচ্ছেনা। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেট বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আব্দুল কাদির দৈনিক জালালাবাদকে জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেট বিভাগে পিডিবির চাহিদা ছিল ২০৩ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১৪০ মেগাওয়াট। ফলে ৬৩ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতির জন্য বিভাগে পিডিবির এলাকায় ৩১ শতাংশ লোডশেডিং করতে হয়েছে। এছাড়া সিলেট জেলায় ১৩১ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ হয়েছে ৯১ মেগাওয়াট। ৪১ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি থাকায় জেলায় ৩১ শতাংশ লোডশেডিং হয়েছে।
তিনি বলেন, গরমের তীব্রতা বৃদ্ধির কারণে বিদ্যুতের চাহিদা ক্রমশই বাড়ছে। সামনে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে কমতে পারে গরমের তীব্রতা। এতে বিদ্যুতের চাহিদা কিছুটা কমে আসতে পারে। তখন লোডশেডিংও কমে আসতে পারে। আর গরম বাড়লে লোডশেডিংয়ের মাত্রা বাড়তে পারে।
এ ব্যাপারে সিলেট বিভাগীয় কমিশনার আবু আহমেদ সিদ্দিকী দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে সিলেট বিভাগ বৈষম্যের শিকার হচ্ছে কিনা বিষয়টি আমার জানা নেই। বিদ্যুতের বিষয়টি মুলত বিভাগীয় বিদ্যুৎ অফিস দেখভাল করে। এরপরও আমি এ ব্যাপারে খোঁজ নিচ্ছি।