লাখো ছাত্র-জনতার অংশগ্রহনে ‘শহীদি মার্চ’ : বৈষম্যবিরোধী দেশ গড়ার শপথ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:০৮:৪৮ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : গণভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের এক মাস পূর্তির দিনে লাখো ছাত্র-জনতার অংশগ্রহনে অনুষ্ঠিত হলো ‘শহীদি মার্চ’। আর এই মার্চ থেকে বৈষম্যবিরোধী বাংলাদেশ গঠনের শপথ পুনঃউচ্চারিত হল ঢাকা, সিলেটসহ দেশের রাজপথে।
লাখো ছাত্র-জনতার এই শহীদি পদযাত্রায় মুহুর্মুহু ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হয়েছে মু্ক্িতর স্লোগান, মুক্ত বাংলাদেশের স্লোগান। মুখে মুখে উচ্চারিত হয়েছে শহীদ আবু সাঈদ, মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধসহ গণআন্দোলনে নিহত অনেকের নাম।
শহীদদের স্মৃতি উচ্চারণ করে তাদের আত্মত্যাগের মহিমাকে স্লোগানের ভাষায় রূপ দিয়ে রাজপথের উত্তাল জনতা ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারমুক্ত নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার শপথ নিয়ে পায়ের তালে পা রেখে ঢাকার রাস্তা প্রদক্ষিণ করেছে।
বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টা ২০ মিনিটে ‘শহীদি মার্চ’ ঢাকার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ অতিক্রম করে। এর আগে বিকাল ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে মার্চটি শুরু হয়। পতাকা উড়িয়ে মিছিল নিয়ে এগিয়ে যায় তারা। শহীদদের ছবিযুক্ত প্ল্যাকার্ড নিয়ে যুক্ত হয় বহু মানুষ। মার্চ চলাকালে আশপাশের দোকানি, পথিক , অফিসের লোকজন হাত নাড়িয়ে তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন।
এ সময় ছাত্র-জনতা স্লোগান দেয়, ‘তুমি কে আমি কে/ বাঙালি, বাঙালি’, ‘আবু সাঈদ মুগ্ধর রক্ত/ বৃথা যেতে দেব না’, ‘আমার ভাই কবরে/ খুনি কেন বাহিরে’, ‘লেগেছে রে লেগেছে/ রক্তে আগুন লেগেছ ‘, ‘বিচার চাই, বিচার চাই/ খুনি হাসিনার বিচার চাই।’
শিক্ষার্থীরা ‘আমাদের শহীদেরা/ আমাদের শক্তি’, ‘আবু সাইদ মুগ্ধ/ শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘২৪ আমাদের বিশ্বাস’- এ ধরনের নানা স্লোগান দেয়।মিছিলের স্লোগানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার দাবি করা হয়। তার আমলে হত্যা, গুম-খুনের বিচারের আওয়াজ ওঠে।শহীদি মার্চে স্কুল-কলেজ-বিশ^বিদ্যালয়ের শত সহ¯্র শিক্ষার্থী দলবেঁধে অংশ নেয়। একইসাথে কারিগরি, মাদ্রাসা ও ও সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
মার্চটি ঢাকার রাজু ভাস্কর্য হয়ে রাজু ভাস্কর্য থেকে নীলক্ষেত হয়ে সায়েন্সল্যাব, কলাবাগান, মানিক মিয়া এভিনিউ (সংসদ ভবনের সামনে দিয়ে), ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার থেকে শাহবাগ হয়ে আবার রাজু ভাস্কর্য দিয়ে এগিয়ে যায়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে জাতীয় শহীদ মিনারে এসে থামে শহীদী মার্চের পদযাত্রা।
মার্চে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা বলেন, হাজারো ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা পেয়েছি। বিদায় করেছি স্বৈরাচারী শেখ হাসিনাকে। যে-ই হাসিনা আমাদের মুখ বন্ধ করে রেখেছিল, আমাদের অধিকার ক্ষুন্ন করেছিল, আমাদের নির্বিচারে জেল-জুলুম, গুম-খুন করেছিল। ফ্যাসিবাদের পতনের মাধ্যমে এদেশে নতুন সূর্য উদিত হয়েছে।
এদিকে, ‘শহীদি মার্চ’ কর্মসূচি থেকে পাঁচটি দাবি জানিয়েছেন ছাত্র-জনতা।
দাবিগুলো হলো : গণহত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে; শহীদ পরিবারগুলোকে আর্থিক ও আইনি সহযোগিতা দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রদান করতে হবে; প্রশাসনে দুর্নীতিবাজ ও ফ্যাসিস্টের দোসরদের চিহ্নিত করে অনতিবিলম্বে বিচারের আওতায় আনতে হবে; গণভবনকে জুলাই স্মৃতি যাদুঘর ঘোষণা করতে হবে এবং রাষ্ট্র পুনর্গঠনের রোডম্যাপ দ্রুত ঘোষণা করতে হবে।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ব্যাপক সহিংসতা ও রাষ্ট্রীয় বাহিনীর অতিরিক্তি বলপ্রয়োগের ফলে শেষপর্যন্ত সরকার পতনের একদফায় রূপ নেয়। ৫ অগাস্ট ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে পতন হয় শেখ হাসিনা সরকারের। পালিয়ে ভারতে চলে যান তিনি।