পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্রের ৩৫ শতাংশ উদ্ধার হয়নি
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯:২৫:২২ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক: ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকার পতনের আগে-পরে বিভিন্ন থানা ও পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা হয়। অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি লুটপাট করা হয় থানার অস্ত্র ও মালখানা। এসব অস্ত্র জমা দেয়ার জন্য বিভিন্ন সময় আহ্বানও জানানো হয়। তবে থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্রের ৩৫ ও গোলাবারুদের প্রায় ৫২ শতাংশের হদিস পাওয়া যায়নি এখনো। এর মধ্যে যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার হওয়া বিশেষ ধরনের ফ্ল্যাশ ব্যাং গ্রেনেড, এসএমজি, এলএমজি ও এসএমটির মতো অগ্নেয়াস্ত্রও রয়েছে।
অস্ত্র-গোলাবারুদসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাবে এখনো অপরাধ নিয়ন্ত্রণে দৈনন্দিন টহল, তল্লাশি চৌকির কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি পুলিশ। চালু হওয়া থানাগুলোয় কেবল সাধারণ ডায়েরি ও মামলা নথিভুক্ত করেই সময় কাটাচ্ছেন কাজে ফেরা এ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। তবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে অপরাধ নিয়ন্ত্রণের দৈনন্দিন কার্যক্রমগুলোয় পুলিশকে ফেরাতে না পারলে জননিরপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর সবচেয়ে বেশি জনরোষের শিকার হয় পুলিশ। থানাসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। কয়েকটি স্থাপনায় আগুনও দেয়া হয়। নিহত হন ৪৪ পুলিশ সদস্য। এমন পরিস্থিতিতে কর্মস্থল ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান পুলিশ সদস্যরা। অন্তর্র্বতী সরকার গঠনের পর পুলিশ মহাপরিদর্শক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় মো. মাইনুল ইসলামকে। পরে তার ডাকে সাড়া দিয়ে পুলিশ সদস্যরা কাজে ফেরেন। তবে গাড়ি, অস্ত্র-গোলাবারুদসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাবে এখনো তারা মাঠ পর্যায়ের কাজ শুরু করতে পারেননি।
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নূর মোহাম্মদ বলেন, পুলিশ যেভাবে আক্রান্ত হয়েছে সেটা কাটিয়ে উঠতে কিছুটা সময় লাগবে। সেটা এক-দুই বা তিন মাসও হতে পারে। এখন তাদের গাড়ি নেই, অন্যান্য সরঞ্জামেরও ঘাটতি রয়েছে। পুলিশের অপরাধ নিয়ন্ত্রণের কার্যক্রম পরিচালনা করতে বেশকিছু জিনিসের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এগুলো নিশ্চিতের মাধ্যমে পুলিশকে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখার সুযোগ করে দিতে হবে। এজন্য দেশের সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতা লাগবে।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে মোট থানা রয়েছে ৬৩৯টি। এর মধ্যে ৪৫০টি থানা আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর জনরোষের শিকার হয়। লুট করা হয় পুলিশের ৫ হাজার ৮২৯টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৬ লাখ ৪৫ হাজার ৩৪৯টি গোলাবারুদ। আগ্নেয়াস্ত্রর মধ্যে রয়েছে ১ হাজার ১৫৭টি রাইফেল, এসএমজি ২৮৩টি, টি-৫৪ মডেলের পিস্তল ১ হাজার ৫৫৬টি, এসএমটি ৩৩টি, শটগান ২ হাজার ১৯০টি, গ্যাসগান ৫৯৩টি, টিয়ার গ্যাস লঞ্চার ১৪টি ও সিগনাল পিস্তল তিনটি। গোলাবারুদের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন গুলি, টিয়ার গ্যাস শেল, টিয়ার গ্যাস গ্রেনেড, সাউন্ড গ্রেনেড, কালার স্মোক গ্রেনেড, মাল্টিপল ব্যাং স্টান গ্রেনেড, ফ্ল্যাশ ব্যাংক গ্রেনেড ও হ্যান্ড হেল্ড টিয়ার গ্যাস স্প্রে (ক্যানিস্টার)। লুট হওয়া এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ জমা দেয়ার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে তিন দফা সময় দেয়া হলেও ৫১ দশমিক ৬৬ শতাংশই জমা পড়েনি। এ অবস্থায় যারা অস্ত্র জমা দেয়নি, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। দেশজুড়ে বুধবার শুরু হয়েছে যৌথ অভিযান।
এদিকে আক্রান্ত থানাগুলো সচল হলেও পুলিশ এখনো অপরাধ নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানান, অপরাধ নিয়ন্ত্রণে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি টহল ডিউটি ও তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালনা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত পর্যাপ্ত টহল গাড়ি, অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। সে কারণে অপরাধ নিয়ন্ত্রণের কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না। বর্তমানে কেবল অফিশিয়াল কাজ অব্যাহত রেখে জিডি ও মামলা নথিভুক্ত করা হচ্ছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর বলেন, বর্তমানে দেশের সব থানার কার্যক্রম চালু রয়েছে। কিছু কিছু থানায় লজিস্টিক সংকট। সেগুলোয় বিকল্প উপায়ে কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে। বিশেষ করে ৫০টি জেলায় নতুন পুলিশ সুপার দায়িত্ব পেয়েছেন। রেঞ্জ ডিআইজি ও কমিশনাররা দায়িত্ব নিয়েছেন। নতুন নেতৃত্বে নতুনভাবে পুলিশি কার্যক্রম পরিচালনার চেষ্টা করা হচ্ছে। এখন পুলিশের পেশাগত দায়িত্ব পালনে আমরা সবার সহযোগিতা চাই।