তাহিরপুর সীমান্তে ১২ ঘন্টায় কোটি টাকার মালামাল পাচারের অভিযোগ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬:৫৪:১০ অপরাহ্ন
সুনামগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা: সুনামগঞ্জের আলোচিত তাহিরপুর সীমান্তে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ১২ ঘন্টায় কয়েক কোটি টাকার বিভিন্ন মালামাল পাচারের খবর পাওয়া গেছে। কিন্তু বিজিবির পক্ষ থেকে অবৈধ মালামাল আটকের কোন সংবাদ পাওয়া যায়নি। এই সীমান্ত দিয়ে কয়লা, মাদকদ্রব্য ও অস্ত্র পাচার করতে গিয়ে বিএসএফের গুলিতে, তাড়া খেয়ে নদীতে ডুবে ও গর্তে পড়ে এ পর্যন্ত শতাধিক লোকের মৃত্যু হয়েছে। তারপরও চিহ্নিত চোরাকারবারীদের গ্রেফতারের জন্য কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়না। তাই সেনাবাহিনীর সহযোগিতা জরুরি প্রয়োজন।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার রাত ১০টা থেকে তাহিরপুর উপজেলার চাঁনপুর সীমান্তের ১২০২নং পিলার সংলগ্ন পর্যটন স্পট বারেকটিলা, আনন্দপুর, গড়ইগড়া এলাকা দিয়ে একাধিক চোরাচালান মামলার আসামী শাহিবুর মিয়া, ফকর উদ্দিন, শফিকুল মিয়া, তোতা মিয়া, ভোটকুন মিয়া, রফিক, নিজাম মিয়া, সাইকুল মিয়া, সোলেমান মিয়া, জামাল মিয়া ও তোতলা আজাদ গং পাশের লাউড়েরগড় সীমান্তের যাদুকাটা নদী, শাহ আরেফিন মোকাম ও দশঘর এলাকা দিয়ে চোরাকারবারী বায়েজিদ, জসিম, নুরু মিয়া, জজ মিয়া, রফিক মিয়াগং পৃথকভাবে ভারত থেকে ঠেলাগাড়ি ও নৌকা বোঝাই করে অবৈধভাবে চিনি, পেঁয়াজ, ফুছকা, নাসির উদ্দিন বিড়ি ও মদ-গাঁজা, ইয়াবা, কয়লা ও পাথর পাচার শুরু করে। একই সময়ে চারাগাঁও সীমান্তে চোরাচালান মামলার আসামী রফ মিয়া, আইনাল মিয়া, সাইফুল মিয়া, দীপক মিয়া, বাবুল মিয়া, সাইকুল মিয়া, শফিকুল ইসলাম ভৈরব, রুবেল মিয়া, সোহেল মিয়া, আনোয়ার হোসেন বাবলু, শারাফত আলী গং, পাশের বালিয়াঘাট সীমান্তে ইয়াবা কালাম, হোসেন আলী, রতন মহলদার, জিয়াউর রহমান জিয়া, মনির মিয়া, কামরুল মিয়া গং, টেকেরঘাট সীমান্তে রহিছ মিয়া, আক্কল আলী, রুবেল মিয়া, মোহাম্মদ আলী, রফিকুল মিয়া গং ও বীরেন্দ্রনগর সীমান্তে লেংড়া জামাল, শেখ মস্তোফা গং পৃথকভাবে ভারত থেকে অবৈধভাবে কয়লা, পাথর, চিনি, পেয়াজ, সুপারী, মদ ও বালি পাচার করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
শনিবার দুপুর ১টা পর্যন্ত পাচারকৃত অবৈধ মালামাল অটোরিক্সা বোঝাই করে বাদাঘাট, লাউড়েরগড়, কলাগাঁও, বাগলী বাজারে অবস্থিত চোরাকারবারীদের দোকানপাটসহ শিমুলতলা ও কামড়াবন্দ গ্রামের বিভিন্ন বসতবাড়িতে নিয়ে মজুত করে। সেই সাথে পাচারকৃত কয়লা ইঞ্জিনের নৌকা বোঝাই করে নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু বিজিবির পক্ষ থেকে কোন পদক্ষেপ নেওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। তবে চাঁনপুর ক্যাম্পে সুবেদার আব্বাস, চারাগাঁও ক্যাম্পে সুবেদার শফিকুল ও টেকেরঘাট ক্যাম্পে সুবেদার ওবায়দুর যোগদানের পর থেকে সীমান্তে চোরাচালান ও চাঁদাবাজি বেড়েছে বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে চাঁনপুর সীমান্তের কড়ইগড়া গ্রামের বাসিন্দা ও উত্তর বড়দল ইউপি মেম্বার কফিল উদ্দিন বলেন, বিজিবির নামে প্রতিবস্তা চিনি ও পেয়াজ থেকে ১শ টাকা, প্রতিবস্তা ফুছকা থেকে ১৫০ টাকাসহ মাদক ও বিড়ি থেকে চাঁদা নিয়ে গত ১২ ঘন্টায় ভারত থেকে অবৈধভাবে কমপক্ষে ৩০ লাখ টাকার মালামাল পাচার করেছে সংঘবদ্ধ চোরাকারবারীরা। এছাড়া ৪শ বস্তা রসুন তারা ভারতে পাচাঁর করেছে। কিন্তু বিজিবিকে বারবার জানানোর পরও কোন পদক্ষেপ নেয়নি।
চাঁনপুর গ্রামের বাসিন্দা আবু বক্কর বলেন, গতকাল রাতে ভারত থেকে অবৈধভাবে মালামাল পাচারের সময় ক্যাম্পের ভিআইপি মতিয়ার সৈনিকদের সেখানে উপস্থিত ছিল। কিন্তু অবৈধ মালামাল আটক করেনি। সুনামগঞ্জ জেলার সিনিয়র সাংবাদিক মোজাম্মেল আলম বলেন, রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে অবৈধভাবে বিভিন্ন মালামাল পাচারের ব্যাপারে ক্যাম্প কমান্ডারদের বারবার জানানোর পরও তারা কোন পদক্ষেপ নেয় না।
এ ব্যাপারে চাঁনপুর ক্যাম্পের ভিআইপির দায়িত্বে থাকা মতিয়ার এর সরকারী মোবাইল নাম্বার (০১৭৬৯-৬১৭৩৫৩) নাম্বারে বারবার কল করে বন্ধ পাওয়া যায়। এই ক্যাম্পের কমান্ডার আব্বাস বলেন, চোরাচালানের খবর পেয়ে ফোন করে ভিআইপি মতিয়ার ও টহল থাকা সৈনিকদের জানিয়েছি আমি ঘটনাস্থলে যাইনি।
টেকেরঘাট কোম্পানী কমান্ডার ওবায়দুর বলেন, চোরাকারবারীরা আমাদের চোখে ফাঁকি দিয়ে চোরাচালান করে। এ ব্যাপারে আমাদের অধিনায়ক (সি.ও) স্যারের সাথে কথা কথা বলুন। এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ ২৮ ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়কের সরকারী মোবাইল (০১৭৬৯-৬০৩১৩০) নাম্বারে বারবার কল করার পর শুরু ব্যস্ত দেখায়, কেউ রিসিভ করেনি।