বিএসএফের গুলিতে নিহত স্বর্ণার পরিবারের সাথে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রতিনিধিদলের সাক্ষাৎ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯:১৭:৪৫ অপরাহ্ন
বড়লেখা (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি: কুলাউড়া সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে হত্যার শিকার কিশোরী স্বর্ণা দাশের পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে মৌলভীবাজারের জুড়ীতে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের রাজনৈতিক সমন্বয়ক ফরিদুল হক এবং নির্বাহী কমিটির সদস্য প্রীতম দাশের নেতৃত্বে স্থানীয় নেতাকর্মীরা স্বর্ণার পরিবারের সাথে দেখা করেন।
পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ শেষে স্বর্ণা দাশের পিতাকে সাথে নিয়ে স্থানীয় সংবাদ কর্মীদের উদ্দেশ্যে মিডিয়া ব্রিফিং করেন নেতৃবৃন্দ। প্রতিনিধিদলের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের ঢাকা মহানগর নেতা এহসান আহমেদ, শ্রীমঙ্গল উপজেলা সংগঠক শাহেদ আহমেদ, চুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম প্রমুখ।
মিডিয়া ব্রিফিং এ ফরিদুল হক বলেন, ‘‘একটা নিরস্ত্র পরিবারের উপর অন্যায়ভাবে গুলি চালিয়ে একজন কিশোরী মেয়েকে হত্যাকা-ের পরে নিহতের লাশও হত্যাকারী বিএসএফ সদস্যরা নিয়ে যায় এবং প্রায় দুইদিন পরে ফেরত দেয়। এই হত্যাকা-ের পরে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় বাহিনী বিজিবি ‘পতাকা বৈঠক’ করে তার লাশ ফেরত এনে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে।
‘‘এদিকে ইন্ডিয়ান একটি মিডিয়ায় নিউজ করা হয়েছে, স্বর্ণা দাশকে নাকি বাংলাদেশি বিজিবি গুলি করে মেরেছে হিন্দু হওয়ার কারণে। সে এবং তার পরিবার নাকি রেজিম চেঞ্জ হওয়ার পর থেকেই সমস্যার মধ্যে ছিলো এবং গত তিন সপ্তাহে নাকি তারা ৩ বার বর্ডার ক্রস করার চেষ্টা করে।’’
‘‘অথচ আমরা পরিস্কারভাবে জানি, সে তার মাকে নিয়ে ত্রিপুরায় থাকা ভাইয়ের সাথে দেখা করতে যাচ্ছিলো। তারপর সেসহ অন্তত ৩ জনকে গুলি করে বিএসএফ। বোঝাই যাচ্ছে, নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে বিএসএফ এখন তাদের দেশের মিডিয়াকেও মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করাচ্ছে। ইতিমধ্যে সরকারের পররাষ্ট্র দপ্তর কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছেন দিল্লীর প্রতি। বাংলাদেশের জনগণকে এই বিষয়ে আরও সরব হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। পাশাপাশি মিডিয়াগুলোতেও আরও নিউজ করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’’
প্রীতম দাশ বলেন, ‘‘ইন্ডিয়া কর্তৃক বারবার প্রতিশ্রুতি দেয়ার পরেও সীমান্ত হত্যা বন্ধ না করে প্রতিনিয়ত সীমান্তে হত্যাকা- এবং বাংলাদেশী নাগরিকদের উপর চালানো ধারাবাহিক জুলুম চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা মনে করি, বাংলাদেশের জনগণের জানমাল রক্ষা করার কথা এদেশের রাষ্ট্রীয় বাহিনীর। কিন্তু প্রতিবার সীমান্ত হত্যার ঘটনা ঘটার পরেই দেখা যায় বাংলাদেশের জনগণের ট্যাক্সের পয়সায় চলা রাষ্ট্রীয় বাহিনী বিজিবি ইন্ডিয়ার সীমান্ত বাহীনির হত্যাকা-কে জায়েজ করতে তাদের এদেশীয় শাখা বাহিনীর মতো ভূমিকা নেয়।
‘‘ইন্ডিয়া রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিরা বাংলাদেশকে তাদের ‘‘বন্ধুরাষ্ট্র’’ বলে বিভিন্ন জায়গায় উল্লেখ করে কিন্তু তাদের আচরণ বরাবর শত্রুদের মতো। বিগত ১৩-১৪ বছরে তারা সীমান্তে ৬০০ এর মতো বাংলাদেশী নাগরিককে গুলি করে এবং নির্যাতন করে হত্যা করেছে। বাংলাদেশের জনগণকে যদি সত্যিই ইন্ডিয়ান রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিরা ‘‘বন্ধু’’ মনে করতেন তাহলে এই দেশের ভূ-খন্ডকে ৩ দিক দিয়ে কাটাঁতার দিয়ে ঘিরে রাখতেন না। অন্যদিকে নেপাল-ভুটান তো নয়ই এমনকি ইন্ডিয়া চীন ও পাকিস্তান সীমান্তেও এইভাবে কাটাঁতার দিয়ে রাখেনি।’’
‘‘মিডিয়া ব্রিফিং এর মাধ্যমে নেতৃবৃন্দ ইন্ডিয়ান রাষ্ট্রকে সীমান্ত হত্যা বন্ধে তাদের প্রতিশ্রুতি আবারও স্মরণ করিয়ে দেন এবং অবিলম্বে চলমান হত্যাকা- বন্ধে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান।
‘‘পাশাপাশি বাংলাদেশের রাষ্ট্র-সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে বলেন, অবিলম্বে সীমান্ত হত্যা বন্ধে প্রয়োজনীয় আন্তঃরাষ্ট্রীয় এবং বৈশ্বিক পরিমন্ডলে ভূমিকা নেয়ার ব্যবস্থা করা হোক। স্বর্ণা দাশের হত্যাকারী বিএসএফ সদস্যদের বিচারের আওতায় আনার জন্য পদক্ষেপ নেয়া হোক।’’
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, ‘‘নেপালের সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক নেপালী নাগরিক হত্যার জেরে সে দেশের জনগণ যেভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে ইন্ডিয়াকে ক্ষমা চাইতে এবং সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে বাধ্য করেছিলো একইভাবে নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশের জনগণের কাছে উদাত্ত আহ্বান জানান।
তারা বলেন, ‘‘আসুন পাশ্ববর্তী রাষ্ট্রের এইরকম আগ্রাসন এর বিরুদ্ধে দল-মত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এদের আগ্রাসন রুখে দেই। নেতৃবৃন্দ মনে করেন, পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের এই আগ্রাসন রুখে দেয়ার একটাই পথ, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সংস্কার করে গণতান্ত্রিক আত্মমর্যাদা সম্পন্ন রাষ্ট্র গড়ে তোলা।’’