ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান : মৃত্যু সংখ্যা কত?

*এমআইএস’র প্রতিবেদনে নিহত ৬২২, আহত ১৮,২৪৭ * সিলেটে নিহত ২২, আহত ৭১৮

জালালাবাদ রিপোর্ট : ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানে যেন রক্তের নদী বয়ে গেছে দেশে। পুলিশের গুলি আর সহিংসতায় মৃত্যুর মিছিলে যোগ দিয়েছেন হাজারের উপরে মানুষ। আর আহত ও পঙ্গু সংখ্যা যে কত- প্রকৃত সে হিসেব মিলেনি এখনো।

তবে সরকার গঠিত কমিটির খসড়া একটি প্রতিবেদন বৃহস্পতিবার জমা পড়েছে মন্ত্রণালয়ে। আন্দোলনে আহত ও নিহত ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীন ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস)। গত ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত আহত ও নিহত মানুষের সংখ্যা তালিকায় আছে।

ওই প্রতিবেদন অনুসারে অর্থাৎ সরকারি হিসাবে সারা দেশে পুলিশের গুলি ও সংঘাত-সহিংসতায় আহতের সংখ্যা ১৮ হাজার ২৪৭। প্রতিবেদনে মৃত্যুর সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে ৬২২। মৃত্যুর এই সংখ্যা হাসপাতাল থেকে নেওয়া। অবশ্য আন্দোলনের সময় নিহত অনেককে হাসপাতালে আনা হয়নি। তাই প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা আরও অনেক বেশি।

যদিও গত ৫ সেপ্টেম্বর ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম জানিয়েছিলেন, এখন পর্যন্ত নিহত ৮০০ জনের নাম পাওয়া গেছে। এর আগে উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার অব. সাখাওয়াত হোসেন বলেছিলেন, নিহতের সংখ্যা হাজারের উপরে। এখন এমআইএস বলছে, প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী নিহতের সংখ্যা ৬২২। তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা আসলে কত?

এমআইএস প্রতিবেদনে মৃত্যুর তালিকায় দেখা যায়, আন্দোলনের সময় সব বিভাগেই মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এর মাঝে সিলেট জেলায় মারা গেছেন ২২ জন। সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঢাকা বিভাগে। এই বিভাগে মারা গেছে ৪৭৭ জন। সবচেয়ে কম মারা গেছে বরিশাল বিভাগে, ১ জন। চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগে মারা গেছে যথাক্রমে ৪৩ ও ৩৯ জন। রাজশাহী ও ময়মনসিংহ জেলায় মারা গেছে যথাক্রমে ১৯ ও ১৭ জন। এই আন্দোলনে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে রংপুরে। এই বিভাগে মারা যান ৪ জন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, এটি একটি প্রাথমিক বা খসড়া তালিকা। এখন তথ্য-উপাত্ত শুদ্ধকরণের (ডেটা ক্লিনিং) কাজ চলছে। এই তালিকা ওয়েবসাইটে উন্মুক্ত করা হবে। তখন আরও কিছু নাম হয়তো যোগ হবে। মৃত্যুর সংখ্যাতেও পরিবর্তন আসবে।

এদিকে, আট বিভাগের মধ্যে সিলেট বিভাগে আহতের সংখ্যা ৭১৮ জন। তবে স্বাভাবিকভাবেই ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। ঢাকা বিভাগে ১১ হাজার ৭৩ জন আহত হয়েছে। সবচেয়ে কম আহত হয়েছে বরিশাল বিভাগে। এই বিভাগে আহত হয়েছে ২৩৬ জন।

ঢাকার পর সবচেয়ে বেশি আহত হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে। এই বিভাগে ১ হাজার ৭৩৮ জন। এরপর খুলনা বিভাগে ১ হাজার ৫৪৬ জন। রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে যথাক্রমে ১ হাজার ২০৫ জন ও ১ হাজার ১৫৪ জন এবং ময়মনসিং বিভাগে ৫৭৭ জন।

এমআইএস যে তথ্য পেয়েছে, তাতে দেখা যায়, আহত মানুষের মধ্যে ১০ হাজার ৯৩৯ জন বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছে। আর হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিয়েছে ৬ হাজার ৮৬৫ জন।

এমআইএস সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল থেকে তথ্য নিয়েছে। তাতে দেখা যায়, আহত মানুষের বেশির ভাগ চিকিৎসা নিয়েছে সরকারি হাসপাতালে। ১৮ হাজার ২৪৭ জন আহত মানুষের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে ১৫ হাজার ৬৮৯ জন এবং বেসরকারি হাসপাতালে ২ হাজার ৫৫৮ জন। তবে বরিশাল, খুলনা, ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগের কোনো জেলায় কেউ বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে চিকিৎসা নেয়নি। এই চার বিভাগে কোনো আহত ব্যক্তি বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে চিকিৎসা নিলেও তা কেউ সরকারকে এখনো জানায়নি।

মৃত্যুর সব তথ্য আসেনি :
সারা দেশে আন্দোলনের সময় নিহত ৬২২ জনের তথ্য পেয়েছে এমআইএস। সবার তথ্য হাসপাতালে আছে। তবে কমিটির প্রধান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, আমরা হাসপাতাল সূত্রের বাইরে অন্য সূত্র থেকে মৃত্যুর সঠিক সংখ্যা বের করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।

মৃত্যুর ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সহিংস ঘটনার পর ৪৪৩ জনকে মৃত অবস্থায় (ব্রট ডেড) হাসপাতালে আনা হয়েছিল। বাকি ১৭৯ জনের মৃত্যু হয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়।
এদিকে, সংঘর্ষ-সহিংসতায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর মধ্যে ৩ হাজার ৪৮ জনের আঘাত বা জখম ছিল গুরুতর। এদের অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়। তবে অস্ত্রোপচার ও সব ধরনের চিকিৎসা শেষে অন্তত ৫২৫ জন কমবেশি শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়ে পড়েছে।

আন্দোলনের সময় পুলিশ নানা ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করে। আন্দোলনের শুরুর দিকে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য পুলিশ নির্বিচার ছররা গুলি ছুড়েছিল। ছররা গুলিতে বহু মানুষের চোখ নষ্ট হয়ে যায়। এমআইএসের হিসাবে দেখা যায়, চোখে গুরুতর আঘাত পাওয়া মানুষের সংখ্যা ৬৪৭। ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি, ৬০৩ জন। ঢাকার পরে সবচেয়ে বেশি চট্টগ্রাম বিভাগে, ২২ জন। বাকি ছয় বিভাগে চোখে গুরুতর আঘাত লাগা মানুষের সংখ্যা ২২। কেউ দুই চোখের; আবার কেউ এক চোখের দৃষ্টিশক্তি চিরদিনের জন্য হারাতে পারে।