সিলেটে যৌথবাহিনীর অভিযান কত দুর!
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২:০৬:৫৩ অপরাহ্ন
অস্ত্র উদ্ধার ও অপরাধী গ্রেফতার গতি নেই
এমজেএইচ জামিল : কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সিলেটজুড়ে অত্যাধুনিকসহ নানা ধরনের আগ্নেয়াস্ত্রের ঝনঝনানি ও নির্বিচারে গুলীবর্ষণের ঘটনায় এখনো বিস্মিত-ক্ষুব্ধ জনসাধারণ। হাসপাতালের বেডে এখনো ব্যাথায় কাতরাচ্ছেন আওয়ামী সন্ত্রাসীদের আগ্নেয়াস্ত্রে গুলীবিদ্ধ অনেকেই। এছাড়া গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন পরবর্তী সময়ে সারাদেশের ন্যায় সিলেটেও বিভিন্ন থানা ও পুলিশ ফাঁড়িতে চলে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ। লুট করা হয় অস্ত্র গোলা-বারুদ। এখনো উদ্ধার হয়নি পুলিশের লুন্টিত ২০টি অস্ত্র।
জানা গেছে, অবৈধ অস্ত্রধারীদের গ্রেফতার ও সবধরণের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে গত ৪ সেপ্টেম্বর থেকে সারাদেশে যৌথবাহিনীর অভিযান শুরু হলেও ব্যতিক্রম সিলেট। কারণ সিলেটের অস্ত্রধারীরা চিহ্নিত হলেও এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযান শুরু করেনি যৌথবাহিনী। সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশ ও বিজিবি বিচ্ছিন্নভাবে অভিযান পরিচালনা করছে। এতে সুফল মিললেও তা প্রত্যাশিত নয় বলে মন্তব্য অনেকের। যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে- প্রত্যেকটি বাহিনী আলাদাভাবে অভিযান পরিচালনা করছে। এছাড়া বিভিন্ন সংস্থা অস্ত্রধারিদের অবস্থান চিহ্নিত করতে কাজ করছে। শীঘ্রই বড় পরিসরে যৌথবাহিনী অভিযানে নামবে।
জানা গেছে, সিলেটে গত ১৬ বছর ধরে চলছিলো অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি। সম্প্রতি কোটা সংস্কার ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচীতে তৎকালিন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীর হাতে দেখা গিয়েছিলো অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র। এছাড়া নানা ধরণের আগ্নোয়াস্ত্র নিয়ে ছাত্রজনতার উপর হামলার ছবি ও ভিডিও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু এখনো কোন অস্ত্রধারীর বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারেনি প্রশাসন। ফলে অজানা আতঙ্কে রয়েছেন নগরবাসী।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সিলেটে বিচ্ছিন্ন ভাবে বিভিন্ন বাহিনীর উদ্যোগে সিলেটে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার ও বহনকারীদের গ্রেফতার অভিযান চলছে। ইতোমধ্যে সিকৃবিতে সেনাবাহিনীর অভিযানে দেশীয় অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া র্যাবের অভিযানে একটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে।
গত ৫ আগস্ট জনরোষে শেখ হাসিনার পতন ও দেশত্যাগের দিন সিলেটসহ সারাদেশের প্রায় বিভিন্ন থানায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অস্ত্রসহ জিনিসপত্র লুটপাট করে দুর্বৃত্তরা। এসব অস্ত্র ফিরে পেতে গত ৩ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয় বর্তমান অন্তর্বর্তীকালিন সরকার। এছাড়া গত ১৫ বছরে বেসামরিক লোকজনকে দেওয়া আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স গত ২৫ আগস্ট স্থগিত করে সরকার। এসব অস্ত্রও জমা দেওয়ার জন্য মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত তারিখ নির্ধারণ করে দেয়া হয়। নির্ধারিত সময়ের পরে অজমাকৃত অস্ত্র উদ্ধারে যৌথবাহিনীর অভিযান হবে মর্মে সিলেটে প্রতি উপজেলায় মাইকিং করা হয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
সিলেট জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সিলেটে লাইসেন্স বাতিল হওয়া অস্ত্রগুলোর মধ্যে নির্ধারিত সময়ের ভেতরে ৫৯টি ছাড়া বাকিগুলো জমা পড়েছে। এগুলো উদ্ধারে যৌথ অভিযান এখনো শুরু হয়নি। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অবৈধ অস্ত্র ও অস্ত্রধারীদের তালিকা প্রণয়ন করছে। যদিও লাইসেন্স বাতিল হওয়ার আগ্নেয়াস্ত্রের সংখ্যা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেলেও ৫ তারিখ লুট হওয়া অস্ত্রের সঠিক সংখ্যা দিতে পারেনি জেলা পুলিশ। এসব অস্ত্রের মধ্যে কতগুলো জমা পড়েছে সে পরিসংখ্যানও জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়নি।
এ ব্যাপারে সিলেট জেলা পুলিশের মিডিয়া অফিসার এএসপি মোঃ সম্রাট তালুকদার দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, জেলার বিভিন্ন থানায় হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটছে। লুটপাট হওয়া অস্ত্র ও গোলা-বারুদের তালিকা প্রণয়নের কাজ চলমান রয়েছে। খুব শীঘ্রই থানা পর্যায় থেকে মিসিং থাকা অস্ত্রের পরিসংখ্যান জেলা পুলিশে আসবে।
জানা গেছে, সিলেটে যৌথ অভিযান শুরু না হলেও অবৈধ সব আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে পৃথক অভিযান শুরু করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-৯। ইতোমধ্যে তারা পুলিশের লুট হওয়া একটি আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করেছে। এ ঘটনায় একজনকে গ্রেফতারও করেছে র্যাব-৯ এর একটি টিম। র্যাব-৯ এর একটি টিম শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) বিকালে সিলেট মহানগরের মিরাবাজার এলাকার আগপাড়ায় অভিযান চালিয়ে রাজীব হোসেন নামের একজনের বাসা থেকে নাইন এমএম একটি পিস্তল উদ্ধার করে। সঙ্গে ৭ রাউন্ড গুলি, একটি ম্যাগজিন ও কিছু ভারতীয় মুদ্রা উদ্ধার করা হয়। এসময় রাজীবকে পাওয়া গেলেও রাত ৯টার দিকে তাকেও গ্রেফতার করে র্যাব। পরে আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) বিকালে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হোস্টেলের কয়েকটি কক্ষে তল্লাশি চালিয়ে বেশ কিছু দেশিয় অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। খবর পেয়ে সেনাবিহনীর একটি টিম সেখানে যায় এবং অস্ত্রগুলো পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।
এ ব্যাপারে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ এসএমপির উপ পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, পুলিশের বিভিন্ন টীম অবৈধ অস্ত্র ও অস্ত্রধারীদের শনাক্ত করতে কাজ করছে। এছাড়া বিভিন্ন সূত্র থেকে অস্ত্রধারীদের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করছে। যৌথবাহিনী একত্রে অভিযানে না নামলেও পৃথকভাবে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
তিনি বলেন, ৫ আগস্ট সিলেট মহানগরীর কয়েকটি থানা ও পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালায় দুবৃত্তরা। এ সময় পুলিশের ১০১টি বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র লুট হয়। পরে পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিদের হস্তক্ষেপে লুণ্ঠিত বিভিন্ন ধরনের ৮১টি আগ্নেয়াস্ত্র জমা দেয়া হয়। গত শুক্রবার র্যাব আরেকটি অস্ত্র উদ্ধার বরে। এখনো পুলিশের ২০টি অস্ত্র পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. আনোয়ার উজ জামান দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, লাইসেন্স বাতিল হওয়া অস্ত্রের অবস্থান নিশ্চিতে করতে গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। এছাড়া বিভিন্ন ধরণের অবৈধ অস্ত্রধারিদের ব্যাপারে কয়েকটি সংস্থা কাজ করছে। তাই যৌথবাহিনীকে এখনো মাঠে নামানো সম্ভব হচ্ছেনা। যদিও স্ব স্ব বাহিনী তাদের মতো করে অভিযান পরিচালনা করে আসছে।
তিনি বলেন, আমরা সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে সুনির্দিষ্ট অপরাধীকে গ্রেফতার করতে চাই। আমরা চাইনা অভিযানে কোন নিরীহ মানুষ হয়রানীর শিকার হোক। এতে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হতে পারে। এজন্য আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে অপরাধীদের পাশাপাশি তাদের সুনির্দিষ্ট নিশ্চিত করা। ইতোমধ্যে আমাদের কাজ অনেকটা এগিয়েছে। শীঘ্রই বড় পরিসরে যৌথবাহিনী অভিযানে নামছে। এজন্য জনসাধারণের পক্ষ থেকে যৌথবাহিনীকে প্রয়োজনীয় তথ্য জানানোর অনুরোধ করছি।