তীব্র লোডশেডিংয়ে ব্যবসা বাণিজ্যে ধস!
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:২৩:০৫ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : কয়েকদিন ধরে চলমান তীব্র গরমের পাশাপাশি টানা লোডশেডিং-এ জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তির দাবী জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন সিলেটের শিল্পোদ্যোক্তাগণ। এদিকে, ঘন ঘন লোডশেডিং যেনো গরমকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে। গরমের তীব্রতায় মানুষজন প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না।
নগরীর আম্বরখানা পয়েন্টের ব্যবসায়ী আরিফ আহমেদ বলেন, তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়াতে বাজারে জনসমাগম কম তাই তাদের বেচাকেনাও আগের তুলনায় অনেক কমেছে। তার উপর ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়ে উঠেছে। আরেক ব্যবসায়ী এমদাদ আহমেদ বলেন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত শোরুমগুলোকে চলমান রাখতে অনবরত জেনারেটর ব্যবহার করতে হচ্ছে, যা বেশ ব্যয়বহুল। কিন্তু ক্রেতাশুন্যতার কারণে প্রতিদিন লোকসান গুনতে হচ্ছে।
ছোটো প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি উৎপাদনমুখী মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোও লোডশেডিংয়ের ফলে বিরাট অঙ্কের অর্থনৈতিক ক্ষতির শিকার হচ্ছে। এ ব্যাপারে ‘বিসিক শিল্প মালিক সমিতি গোটাটিকর-এর সভাপতি কাজী মঈনুল ইসলাম ও সেক্রেটারী আলীমুল এহছান চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গোটাটিকর বিসিক শিল্পনগরী এলাকায় কোল্ড স্টোরেজ, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প, কৃষি যন্ত্রপাতি প্রস্তুতকারক শিল্পসহ বিভিন্ন ধরণের প্রায় ৪৫টি শিল্প কারখানা তাদের উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। এসব কারখানায় প্রায় ২৫০০ জন শ্রমিক কর্মরত আছেন। বিগত ১ সপ্তাহ থেকে উক্ত শিল্পনগরী এলাকা ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে কবলে পড়েছে। আগে যেখানে সারা মাসে ১৫-২০ ঘন্টা লোডশেডিং হত, সেখানে এখন দৈনিক ৪-৫ ঘন্টা লোডশেডিং হচ্ছে। এভাবে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে কারখানাগুলোর উৎপাদন ব্যবস্থা মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। একই সাথে প্রতিষ্ঠানগুলো আর্থিকভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। উৎপাদন ব্যবস্থা ব্যহত হওয়ার কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিকমতো শ্রমিকদের পারিশ্রমিক দিতে পারছে না। এছাড়া ব্যাংক লোনের টাকায় নির্মিত প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে নিয়মিত লোন পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছেনা। সরকার নির্ধারিত ভ্যাট-ট্যাক্সের অর্থ পরিশোধ করা দিন দিন অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী, প্রধান প্রকৌশলীর যোগাযোগ করা হলেও কোন সদুত্তর পাইনি। এ অবস্থা বেশিদিন চলতে থাকলে কারখানাগুলোতে শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টি হবে, বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করবে, শিল্প কারখানার মুনাফার উপর চাপ পড়বে, আয়- প্রবৃদ্ধি ও সরকারি আয়-রাজস্ব প্রাপ্তির উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাই বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে অন্তর্বর্তীকালিন সরকারের প্রতি জোর দাবী জানিয়েছেন তারা।
এ ব্যাপারে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) সিলেট বিভাগের প্রধান প্রকোশলী আব্দুল কাদির দৈনিক জালালাবাদকে জানান, তীব্র গরমের কারণে হঠাৎ করেই বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে উৎপাদন ঘাটতি থাকায় প্রয়োজন অনুযায়ী সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রান পেতে আবহাওয়ার উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। তাপমাত্রা কিছুটা কমে এলে অবস্থা স্বাভাবিক হতে পারে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, সোমবার সিলেট বিভাগে পিডিবির চাহিদা ছিল ২১৪.৭০ মেগাওয়াট, এর বিপরীতে যোগান ছিলো ১৬০.৫০ মেগাওয়াট। সেক্ষেত্রে ঘাটতি ছিলো ৫৪.৩০ মেগাওয়াট যা মোট চাহিদার ২৫.২৯ শতাংশ। অন্যদিকে একইদিন সিলেট জেলায় বিদ্যুতের চাহিদা ছিলো ১৪১.৫০ মেগাওয়াট, বিপরীতে যোগান ছিলো ৯৮.৯৪ মেগাওয়াট, সেক্ষেত্রে ঘাটতি ৪২.৫৬ মেগাওয়াট যা মোট চাহিদার ৩০.০৭ শতাংশ।