রাতারগুলে অশুভ ছায়া: হারাচ্ছে আকর্ষণ, কমছে পর্যটক
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:০০:০৫ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: বাংলার অ্যামাজন খ্যাত দেশের একমাত্র সোয়াম্প ফরেস্ট বা জলার বন রাতারগুল। উপরে নীল আকাশ আর নিচে সবুজ পানি মিলে অপূর্ব এই প্রাকৃতিক লীলাভূমির প্রতি দুর্বার আকর্ষণে সারাদেশ থেকে দর্শনার্থীরা ছুটে আসতেন। কিন্তু অশুভ ছায়ায় একসময়ের জনপ্রিয় এই পর্যটন স্পট আকর্ষণ হারাচ্ছে, কমছে পর্যটক। মাত্রাতিরিক্ত নৌকাভাড়া, ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় ওয়াচ টাওয়ার দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকাসহ নানান অব্যবস্থাপনায় রাতারগুল থেকে দর্শনার্থীরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বলে মনে করেন স্থানীয়রা। ভাড়া পুণ:নির্ধারণ এবং প্রয়োজনীয় সংস্কারের বিষয়টি বিবেচনায় আছে বলে জানিয়েছে বন বিভাগ।
সিলেট জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা গোয়াইনঘাটের ফতেহপুর ইউনিয়নে রাতারগুলের অবস্থান। বনের ৮০ শতাংশ এলাকাই গাছ দিয়ে ভরা। বিশাল এ বনে রয়েছে পানিসহিষ্ণু প্রায় ২৫ প্রজাতির গাছ। পানিতে বুক ডুবিয়ে থাকা গাছের ডালপালায় সবুজ পত্র-পল্লব চমৎকার দৃশ্য উপভোগ করতে পর্যটকরা আসেন রাতারগুলে। তবে নয়ানাভিরাম দৃশ্য দেখে যেমন খুশি হোন তেমনি অনেক অব্যবস্থাপনার জন্য ক্ষোভও প্রকাশ করেন তারা।
সরেজমিন খবর নিয়ে জানা গেছে রাতারগুলে বর্তমানে প্রতিটি নৌকাভাড়া ৮৩০ টাকা। এরমধ্যে মাঝিরা পান মাত্র ৩০০ টাকা। বাকি টাকার মধ্যে ৩০০ টাকা চলে যায় যেসব গাড়িচালক নৌকাঘাটে পর্যটকদের নিয়ে যান তাদের টিপস হিসেবে। এখন যেসব পর্যটক চালকছাড়া ব্যক্তিগতভাবে রাতারগুল আসেন তাদেরও ৮৩০ টাকা নৌকা ভাড়া দিতে হয়, ইজারা বা কমিটির লোকেরা তখন ড্রাইভার টিপস খাত তাদের মতো করে দেখিয়ে দেন। বাকি ২৭৫ টাকার মধ্যে বনবিভাগের ১১৫ টাকা, জেলা পরিষদ ৮০ টাকা এবং স্টাফ খরচ ৩৫ টাকা। জেলা পরিষদের ৮০ টাকা ইজারাদাররা নিয়ে থাকেন। যদিও বর্তমানে ইজারাদারের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে তবে তারা এখনও বহাল আছেন।
নৌকা ভাড়া বেশি আদায়ের অভিযোগের পাশাপাশি ওয়াচ টাওয়ারটি বন্ধ থাকায় উপর থেকে পাখির চোখে পুরো এলাকা একনজরে দেখা এবং মেঘালয়ের চমৎকার শোভা অবলোকনের সুযোগ মিলছে না এখন। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন আগতরা। তাই এখন যারা আসছেন তাদের শুধু পানির উপর নৌকায় ঘুরেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে।
স্থানীয় ইয়াং স্টার সমাজ কল্যণ সংস্থা সভাপতি মতিউর রহমান বলেন, দিন দিন রাতারগুলে পর্যটকদের সংখ্যা কমছে। মূলত নৌকা ভাড়া বেশি, ওয়াচ টাওয়ার বন্ধ এবং পানি কমে যাওয়ায় এক সময়ের জনপ্রিয় এই দর্শনীয় স্থানটি আকর্ষণ হারাচ্ছে। এছাড়া বিগত কিছুদিন ধরে দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারণেও লোকজন আসা অনেক কমেছে বলে জানান তিনি। পর্যটক বাড়াতে অব্যবস্থাপনা রোধ এবং নৌকা ভাড়া পুন:নির্ধারণ করা প্রয়োজন মনে করেন মতিউর।
এ ব্যাপারে সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির জানান, বন বিভাগের আদায় করা টাকার অঙ্ক পুন:নির্ধারণের কথা ভাবছেন তারা ও অর্থের সংস্থান পেলে ওয়াচটাওয়ারটি পুন:নির্মাণ হবে ।