সিলেট-সুনামগঞ্জে বিদেশ-ফেরতদের নিয়ে ব্র্যাকের ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং

বিদেশ-ফেরত প্রবাসীরা দেশে ফিরে ফের যেন কর্মসংস্থান বা উদ্যোক্তা হয়ে অর্থনৈতিক পুনরেকত্রীকরণে যুক্ত হতে পারেন সে জন্য বিশেষায়িত ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং সেবা চালু করেছে ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম। সিলেটসহ দেশের ৮ বিভাগের অভিবাসন অধ্যুষিত ১৬টি জেলার ব্র্যাক মাইগ্রেশন এন্ড রিইন্টিগ্রেশন সেন্টার থেকে এই সেবা মিলবে।

বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪), সিলেটের একটি হোটেলে ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং সেবার গাইডলাইন ও টুলকিট উদ্বোধন করেন ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম ও ইয়ুথ প্ল্যাটফর্মের সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ব্র্যাকের যৌথ অর্থায়নে বাস্তবায়িত প্রত্যাশা-২ প্রকল্পের আওতায় এই গাইডলাইন ও টুলকিটের উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠানে ব্রাকের কেন্দ্রীয়, সিলেট বিভাগীয় উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ ও বেশ কয়েকজন বিদেশ-ফেরত সুবিধাভোগী উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে শরিফুল হাসান জানান, ‘বাংলাদেশ থেকে অনেক লোক যেমন প্রতিবছর বিদেশে যান তেমনি অসংখ্য লোক সফল বা ব্যর্থ হয়ে বিদেশ থেকে ফেরত আসেন। এই বিদেশফেরতদের অধিকাংশই দেশে এসে নতুন করে সবকিছু শুরু করতে চান। এ কারণেই তাদের পুনরেকত্রীকরণে পাশে দাঁড়াতে বিমানবন্দরে জরুরি সহায়তা, সাইকোসোশ্যাল কাউন্সেলিং, ম্যাটেরিয়াল এসিস্ট্যান্সসহ নানা উদ্যোগ আছে ব্র্যাকের। তবে আমরা দেখেছি একজন বিদেশে-ফেরত উদ্যোক্তা হতে চান কিংবা নতুন করে কিছু শুরু করতে চান। কিন্তু অধিকাংশ সময়েই তারা কীভাবে কী করবেন, কোথায় যাবেন বুঝে উঠতে পারেন না। এই ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং তাদের সেই পথ দেখাবে।’ শরিফুল হাসান আরও বলেন, সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ফেরত আসা বাংলাদেশিদেরও ব্র্যাক এই কাউন্সেলিং সেবার আওতায় আনবে। যথাযথ প্রশিক্ষণের পর তাদের ম্যাটেরিয়াল এসিস্ট্যান্সসহ আর কী কী সহায়তা দেওয়া যায় সেটিও দেখবে ব্র্যাক।

ব্র্যাক জানিয়েছে, উন্নত জীবনের স্বপ্ন পূরণে ও কর্মসংস্থানের জন্য বর্তমানে ১ কোটিরও বেশি বাংলাদেশি বিদেশে থাকেন। প্রতি বছর দেশে তারা প্রায় ২২ থেকে ২৩ বিলিয়ন ডলার পাঠান। কিন্তু এই প্রবাসীরা দেশে ফিরে অনেক সময়েই কী করবেন তা বুঝে উঠতে পারেন না। ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট, বরিশাল, রংপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নোয়াখালী, নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, যশোর, সুনামগঞ্জ ও ময়মনসিংহে রয়েছে ব্র্যাকের মাইগ্রেশন এন্ড রিইন্ট্রিগেশন সাপোর্ট সেন্টার। ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং সেবা পেতে বিদেশ-ফেরতদের এসব সেন্টারে যোগাযোগ করতে হবে। প্রবাসীরা যেন নিজেদের দক্ষতা ও চাহিদা অনুযায়ী পেশা নির্বাচন বা উদ্যোক্তা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন সেবিষয়ে সহায়তার পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের নানা সেবার সঙ্গেও যুক্ত করে দেওয়া হবে এখান থেকে।

নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করতে ও বিদেশ-ফেরতদের পাশে দাঁড়াতে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম ২০০৬ সাল থেকে মাঠ পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, বাংলাদেশের সুইজ্যারল্যা-ের দূতাবাস, ইউরোপের সীমান্ত রক্ষা সংস্থা ফ্রন্টেক্স, জার্মান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক-কেএফডব্লিউ, যুক্তরাজ্যের হোম অফিস, ইন্ট্যারন্যাশনাল রিটার্ন অ্যা- রিইন্টিগ্রেশন এসিস্ট্যান্স(ইরারা) এবং বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে সরকারের ওয়েজ আর্নাস কল্যাণ বোর্ডের সঙ্গে বিদেশ-ফেরতদের পুনরেকত্রীকরণে কাজ করছে ব্র্যাক।

ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের মাধ্যমে গত সাত বছরে প্রায় ৩৪ হাজার মানুষকে বিমানবন্দরে জরুরি সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রায় ২০ হাজার বিদেশ-ফেরতকে প্রশিক্ষণ, তিন হাজারেরও বেশি মানুষকে সাইকোসোশ্যাল কাউন্সেলিং এবং প্রায় ছয় হাজার মানুষকে ব্যবসা স্থাপনের জন্য ম্যাটেরিয়াল এসিস্ট্যান্স দেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞপ্তি