রক্তের সৌধের উপর নির্মিত অন্তর্বর্তী সরকার : এক মাসে কতটা সফল?
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩:১০:৫৭ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট: একটি সফল আন্দোলন আর রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের অবসান হলো। দায়িত্ব নিলো নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার। এক মাস সময় পারও হলো। স্বাভাবিকভাবেই এখন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে- এই এক মাসে কতটা সফল রক্তের সৌধের উপর নির্মিত নবীন প্রবীণের মিশেলে গড়ার এ সরকার।
শুরু থেকেই সংস্কার শেষ করে নির্বাচন দেওয়ার কথা বলে আসা এই সরকারের পরিকল্পনায় দ্রুত নির্বাচন নেই, এটি স্পষ্ট করা হয়েছে। এই এক মাসে শেখ হাসিনা সরকারের রেখে যাওয়া প্রশাসনে রদবদল, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসর, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল ও গত সরকারের আমলে বঞ্চিতদের আংশিক পদোন্নতির সিদ্ধান্ত এসেছে একের পর এক।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, পুলিশ, আইন-আদালত, সশস্ত্র বাহিনী, হাসপাতাল ও সেবাখাত, জনপ্রশাসন সব জায়গায় পরিবর্তনগুলো হয়েছে এবং হচ্ছে। সরকার পতন আন্দোলনে মাত্রাতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ, সরকার পতনের পর থানায় থানায় হামলায় ভেঙে পড়া পুলিশি ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর যায়নি এখনও। পুলিশ সদস্যদেরকে কর্মস্থলে ফেরানো গেলেও এখনও প্রকাশ্যে সেভাবে সক্রিয় দেখা যাচ্ছে না তাদের। খোয়া যাওয়া অস্ত্র উদ্ধারের অভিযান এখনও চলছে, তবে পুড়িয়ে দেওয়া গাড়িগুলো পুলিশের অভিযানের সক্ষমতা কমিয়ে দিয়েছে।
ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের পরিচালক ও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক আব্দুল আলীম বলেন, এক মাস কোনো সময় নয়। তারপরও শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে বিভিন্ন মহল থেকে যেভাবে দাবি দাওয়া তোলা হচ্ছে, উনারা (অন্তর্বর্তী সরকার) পদক্ষেপ নিচ্ছেন। প্রশাসন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পুলিশ, অফিস আদালত যেভাবে রাজনীতিকরণ করা হয়েছে, উনারা এগুলো ঠিক করার চেষ্টা করছেন। তাই আমি বলব, উনারা সঠিক পথেই আছেন।
ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের আবদুল আলীম বলেন, সরকারকে সবার আগে প্রশাসন, পুলিশ ঠিক করে দেশটা স্থিতিশীল করতে হবে। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে নজর দিতে হবে। পাশাপাশি রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, মিডিয়া- সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ মনে করেন, একটা গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যখন কোনো সরকার পরিবর্তন হয়, তখন যে ধরনের চ্যালেঞ্জ আসে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তেমনটাই হয়েছিল। শুরুতে সরকার না থাকার কারণে দেশে একটা নৈরাজ্যকর অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও একটা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিল। সেই রকম একটা অবস্থা থেকে এখন বেশ ভালোভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে মোটামুটি একটা স্থিতিশীল অবস্থা ফিরে এসেছে।
এদিকে, এই সরকারের মেয়াদ কত দিনের হবে, সে বিষয়ে কোনো ধারণা দেওয়া হয়নি। তবে গত ২৫ আগস্ট জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, দেশবাসীকে ঠিক করতে হবে, আপনারা কখন আমাদের ছেড়ে দেবেন। আমরা ছাত্রদের আহ্বানে এসেছি। তারা আমাদের প্রাথমিক নিয়োগকর্তা। দেশের আপামর জনসাধারণ আমাদের নিয়োগ সমর্থন করেছে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ বলেন, শোনা যাচ্ছে এই সরকারের মেয়াদ তিন মাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না, এটা বর্ধিত করা হবে। সে ক্ষেত্রে আইনগত বৈধতার বিষয়টি একটা বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা ধারণা করছি, সম্ভবত ২০০৭-০৮ এর অনুকরণে আদালত থেকে উনারা মেয়াদ বাড়াবেন। এই কাজটি দ্রুত করে ফেলা উচিত। তাতে তাদের বৈধতা নিয়ে আর প্রশ্ন থাকবে না।
গত ২ সেপ্টেম্বর স্পিকারের পদ থেকে শিরীন শারমিন চৌধুরীর পদত্যাগে একটি সংকটের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আশঙ্কাটি ব্যাখ্যা করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলছেন, কালকে যদি খোদা নাখাস্তা রাষ্ট্রপতি মারা যান বা অসুস্থ হয়ে পড়েন, তাহলে রাষ্ট্র পরিচালনা করবে কে?
শুরুর চ্যালেঞ্জ :
শেখ হাসিনার পতনের পর তিন দিন দেশে যখন সরকার ছিল না, তখন থানায় পুলিশের উপস্থিতি ছিল না। সড়কে ছিল না ট্রাফিক পুলিশও। সে সময়ে ডাকাতের উপদ্রব দেখা দেয় রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরে। ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা পাড়া মহল্লায় পাহারা বসিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করে। সেই সঙ্গে সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করতে থাকে শিক্ষার্থীরা।
অন্তর্বর্তী সরকার যখন প্রশাসন গুছাতে ব্যস্ত, সেই সময়ে সচিবালয়, জাতীয় প্রেসক্লাব, প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা, শাহবাগসহ বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন দাবি আদায়ের আন্দোলন অস্বস্তি তৈরি করে।
স্থগিত হওয়া এইচএসসি পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ে ঢুকে শিক্ষা সচিবকে অবরোধ করে দাবি আদায়ে লিখিত আদেশ জারি করিয়ে ছাড়ে। এরপরই শুরু হয় অঙ্গীভূত আনসার সদস্যদের চাকরি জাতীয়করণের দাবি। ২৫ আগস্ট রাতে আনসার সদস্যরা সচিবালয়ে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করে। পরে গ্রেপ্তার ও বিচারের মুখোমুখি হন কয়েকশ আনসার সদস্য।
ওই ঘটনার পরই সচিবালয় ও রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার আশপাশে ধরনের সভা, সমাবেশ, মিছিল, শোভাযাত্রা, বিক্ষোভ প্রদর্শন নিষিদ্ধ করে পুলিশ। এই এক মাসে প্রশাসন সাজানোর মধ্যে সরকারের জন্য বড় ধাক্কা হয়ে আসে দেশের উত্তর পূর্ব ও পূর্বাঞ্চলে প্রলয়ংকরী বন্যা। সরকারি হিসাবে ৫০ লাখের বেশি মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আড়াই সপ্তাহ পরও পানি নেমে যায়নি বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে, ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বাড়িঘর ও সড়ক অবকাঠামোর। উপদ্রুত এলাকার মানুষকে সহায়তা ও পুনর্বাসনে বড় পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
সরকারের তরফে বন্যা নিয়ন্ত্রণে ভারতের সঙ্গে নতুন ব্যবস্থাপনায় জোর দেওয়া হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা এ বিষয়ে বাংলাদেশে ভারতের হাই কমিশনার প্রণয় ভর্মার সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি উচ্চ পর্যায়ের একটি সহযোগিতার কথা বলেছেন, বিশেষ পরিস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের কথা বলেছেন।
এর মধ্যে ঢাকার সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুর অঞ্চলে কিছু পোশাক শ্রমিক নতুন নতুন দাবি পূরণে আন্দোলন শুরু করলে অনেক পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। তবে এই যৌথ বাহিনীর অভিযানের পর পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসছে। উৎপাদনও শুরু হয়েছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ বলেন, উৎপাদন প্রক্রিয়া সচল রেখে দেশের অর্থনীতিকে চাঙা রাখা একটা বড় চ্যালেঞ্জ হবে।
পদোন্নতি, চাকরিচ্যুতি ও নতুন নিয়োগ :
প্রশাসন ও বিভিন্ন সরকারি দপ্তর থেকে শেখ হাসিনার বেছে নেওয়া কর্মকর্তাদের প্রভাব কমানোর চেষ্টা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। শুরুতেই সচিব, রাষ্ট্রদূত, বিভিন্ন অধিদপ্তরে ব্যক্তিদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। বাদ পড়ার তালিকায় আছেন অনেক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা।
সরকার পতনের পর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে ভিসি, প্রো-ভিসিসহ উচ্চপদের শিক্ষকরা পদত্যাগ করে সরে পড়েন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উপাচার্য পদে নতুন নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। তবে এখনও সব জায়গায় স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা যায়নি।বিতর্কের কেন্দ্রে থাকা নির্বাচন কমিশন থেকেও সব কমিশনার পদত্যাগ করেন। তবে কমিশন পুনর্গঠন বিষয়ে সরকারের তরফে এখনও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
বিচার প্রশাসনে রদবদল :
গত ১০ অগাস্ট সুপ্রিম কোর্টে ছাত্রদের বিক্ষোভের মুখে প্রধান বিচারপতির পদ ছাড়েন ওবায়দুল হাসান। পরে পদত্যাগ করেন আপিল বিভাগের আরও পাঁচ বিচারপতি। পরে প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পান সৈয়দ রেফাত হোসেন। ১২ আগস্ট নিয়োগ পান আরও চার বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী, সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল করিম ও মো. রেজাউল হক, এস এম এমদাদুল হক।
৭ অগাস্ট ‘ব্যক্তিগত অসুবিধার’ কথা বলে’ পদত্যাগ করেন শেখ হাসিনার সময় নিয়োগ পাওয়া অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। পর দিন নিয়োগ পান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান। তিনি বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
পুরোপুরি ঢেলে সাজানো হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। শেখ হাসিনার সময়ে নিয়োগ পাওয়া প্রধান প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলীসহ ট্রাইব্যুনালের ১৩ জন প্রসিকিউটর পদত্যাগ করেন অগস্টের তৃতীয় সপ্তাহে।
মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ৮ সেপ্টেম্বর প্রধান প্রসিকিউটরের দায়িত্ব পেয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি এক সময় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নেতাদের আইনজীবী ছিলেন।
গত জুলাই ও আগস্টে সংঘাতে মৃত্যুকে ‘গণহত্যা’ বিবেচনা করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রিসভার অনেক সদস্য, শরিক দলের নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছে। দল হিসেবে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বিরুদ্ধেও অভিযোগ জমা পড়েছে। আন্দোলনে প্রাণহানির ঘটনার তদন্তে সহযোগিতা করতে ঢাকায় ঘুরে গেছে জাতিসংঘের একটি অনুসন্ধান দল।
আর্থিক খাতে পরিবর্তনের হাওয়া :
আওয়ামী লীগ শাসনামলে তুমুল আলোচনায় থাকা আর্থিক খাতে পরিবর্তনের হাওয়া আরও বেশি দৃশ্যমান। আইএমএফের সাবেক কর্মকর্তা আহসান এইচ মনসুর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের দায়িত্ব পাওয়ার পর আলোচিত এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যাংকগুলোর পর্ষদ পাল্টে দেওয়া হয়েছে। ইসলামী ব্যাংকসহ শরিয়াভিত্তিক অন্যান্য ব্যাংক থেকে ঋণ হিসেবে বের করে নেওয়া টাকা আদায়ে সম্পত্তি বিক্রির ঘোষণা এসেছে।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যকে প্রধান করে অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটিও গঠন হয়েছে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন-বিএসইসির নেতৃত্বেও পরিবর্তন এসেছে। শিবলী-রুবাইয়াত-উল ইসলাম অজ্ঞাত স্থান থেকে পদত্যাগ করার পর এই দায়িত্বে এসেছেন ব্যাংকার রাশেদ মাকসুদ।
দেশ সংস্কারে ৬ কমিশন :
সরকারের পট পরিবর্তনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নিতে সংস্কারের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে নির্বাচন, পুলিশ প্রশাসন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, জনপ্রশাসন ও সংবিধান সংস্কারে কমিশন গঠন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। ছয়জন বিশিষ্ট নাগরিককে এই খাতের সংস্কার কমিশনের প্রধান করা হয়।
বুধবার সন্ধ্যায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা দায়িত্ব নেওয়ার একমাস পূর্তিতে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে বলেছেন, চলতি মাসে পূর্ণাঙ্গ কমিশন গঠিত হওয়ার পর কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে তার কাজ ১ অক্টোবর থেকে শুরু করতে পারবে এবং পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে সম্পন্ন হবে। কমিশনের প্রতিবেদনের ভিত্তিকে সরকার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে পরামর্শ সভা করে সংস্কার ভাবনার রূপরেখা চূড়ান্ত করা হবে। এতে এই রূপরেখা কীভাবে বাস্তবায়ন হবে তার একটি ধারণাও দেওয়া হবে।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে নাগরিক সংগঠন সুশাসনের জন্য নাগরিক -সুজন এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে সাবেক স্বরাষ্ট্র ও সংস্থাপন সচিব সফর রাজ হোসেন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কারের প্রধান হিসেবে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের চেয়ারম্যান ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী এবং সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে আইনজীবী শাহদীন মালিককে দায়িত্ব দেওয়ার কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা।
আলোচিত আরও যেসব সিদ্ধান্ত :
এই এক মাসে প্রথম দফায় আলোচনার ভিত্তিতে ১৫ অগাস্ট জাতীয় শোক দিবসের ছুটি বাতিল করে ইউনূস সরকার। স্থানীয় সরকারে ১২ সিটি করপোরেশনের মেয়র, উপজেলায় চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান মিলিয়ে ১ হাজার ৪৮২ জন, ৬০ জন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, ৩২৩ পৌর মেয়রকে অব্যাহতি দিয়ে সেখানে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়েছে।
ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান ও সদস্যদের মধ্যে যারা অনুপস্থিত আছেন, তাদের জায়গায় প্রশাসক নিয়োগ করার আদেশ এসেছে।
চলমান এইচএসসির পরীক্ষার স্থগিত বিষয়গুলো বাদ দিয়ে ফলাফল প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনকে জাদুঘরে রূপান্তর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় যেসব ফৌজদারি মামলা হয়েছে, সেগুলো প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে অংশ নিয়ে যারা হতাহত হয়েছেন, তাদের পরিবারের সদস্যদের দেখভালের জন্য সরকার একটি ফাউন্ডেশন গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৬ অগাস্ট রাষ্ট্রপতির দ- মওকুফ করে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেন। আওয়ামী লীগের সময়ে জামায়াতে ইসলামী ও এর অঙ্গসংগঠনকে নিষিদ্ধ করে জারি করা প্রজ্ঞাপন বাতিল করা হয় ২৮ অগাস্ট।
পুঁজিবাজারে বেক্সিমকোসহ ১২ প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে। বেক্সিমকো গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ ও চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারে অভিযোগ অনুসন্ধান করছে সিআইডি।
বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য নির্ধারণে গণশুনানির বিধান ফিরিয়ে আনা হয়েছে। ফলে নির্বাহী আদেশে আর দর ঠিক হবে না নয়। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের চুক্তি পর্যালোচনায় কমিটি গঠন হয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০ বাতিলের কথা জানানো হয়েছে।
১২ বছর পর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড- বিসিবির সভাপতি পদে পরিবর্তন এসেছে। ২১ অগাস্ট পদ ছাড়েন নাজমুল হাসান পাপন। একই দিনে সভাপতি হন জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ফারুক আহমেদ।