বাজেট স্বল্পতায় গতি পাচ্ছেনা নগরের পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮:৪০:৪৪ অপরাহ্ন
মুনশী ইকবাল: নগরীর মির্জাজাঙ্গাল-তালতলা সড়কের মাছুদীঘিপার পয়েন্টের কাছে ফুটপাতে সিটি কর্পোরেশনের দুটো ডাস্টবিস বকস রাখা। বুধবার দুপুরের দিকে দেখা যায় এই বকস ছাপিয়ে ময়লা-আবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ফুটপাত ও রাস্তায়। এরসাথেই বকসের বাইরে ময়লার স্তুপ। আশপাশের লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায় গত তিনদিন ধরে এভাবেই ময়লা পড়ে আছে। সিটির লোকজন ডাস্টবিনের ময়লা পরিষ্কার করলেও বাইরের ময়লা নেন না। ময়লা-আবর্জনা জমে নোংরা পরিবেশের সাথে আশপাশে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। ফুটপাত বন্ধ থাকায় ময়লা ছাপিয়ে রাস্তার মাঝখান দিয়ে হাঁটতে হচ্ছে পথচারীদের, দুর্গন্ধে নাকে চলা ছাড়া উপায় নেই। শুধু এই জায়গাই নয় নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
খবর নিয়ে জানা গেছে বিভিন্ন ওয়ার্ডে পাড়াভিত্তিক এসব কার্যক্রম তদারকি করেন কাউন্সিলররা। কিন্তু ৫ আগস্টের পর আওয়ামী দলীয় অনেক কাউন্সিলর পলাতক। এতে এসব ওয়ার্ডে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম অনেকটাই মন্থর। এর বাইরে বড়ো কারণ বাজেট স্বল্পতা। ৬ থেকে ৭ হাজার ডাস্টবিনের জায়গায় মাত্র ১৩/১৪শ ডাস্টবিন দিয়ে কাজ সারতে হচ্ছে বলে সিসিক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। যা বাজেটের জন্য সঙ্কুলান হচ্ছে না। বাজেট স্বল্পতায় পর্যাপ্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছেনা বলে সিলেটে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ সূত্র জানিয়েছে। তারা বলেছেন এক্ষেত্রে উত্তরণে নগর কর্তৃপক্ষের সাথে নগরবাসীকেও সচেতন হতে হবে। নির্দিষ্ট স্থানের বাইরে ও যত্রতত্র আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকতে হবে।
গত কয়েকদিনে নগরীর বেশ কিছু এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে ও ডাস্টবিনের আশপাশে ময়লার স্তুপ জমে আছে। স্থানীয়রা জানান সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা কেবল ডাস্টবিনের ময়লা পরিষ্কার করেন কিন্তু আশপাশে পড়ে থাকা ময়লা এবং ডাস্টবিন ছাড়া রাস্তার মোড়ে ফেলা ময়লা পরিষ্কার করেন না। কয়েকদিন ময়লা জমে স্তুপ হলে বা দুর্গন্ধ ছড়ানোর পর বড়ো গাড়ি এসে তখন এগুলো নিয়ে যায় অথবা ডাস্টনিওয়ালাদের বলে কয়ে তা সরানোর ব্যবস্থা করতে হয়। আশপাশের বিভিন্ন বাড়ি বা দোকান থেকে লোকজন এসব ময়লা ফেলেন।
বুধবার নগীরর জিন্দাবাজার রাজা ম্যানসনের সামনে, জামতলা, দাড়িয়াপাড়া হোটেল নুরজাহানের পাশে, শাহজালাল র. পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র, জল্লারপার মাজারের বিপরীত দিকে, মির্জাজাঙ্গাল-দাড়িয়াপাড়া রোডে প্রাণিসম্পদ (প্রাক্তন পশু) হাসপাতালের পাশেসহ বেশিকিছু জায়গায় ডাস্টবিন ও ডাস্টবিন ছাড়া ফুটপাত বা রাস্তায় ময়লার স্তুপ জমে থাকতে দেখা গেছে।
মির্জাজাঙ্গাল পয়েন্টে পশু হাসপালের পাশে বুধবার দেখা যায় আগের রাখা বড়ো একটি হলুদ ডাস্টবিনের পাশে এখন নীল রঙের আরও দুটি ছোটো ডাস্টবিন বকস দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সকাল গড়িয়ে দুপুর হলেও ডাস্টবিন উপচে ময়লা পড়ছে কিন্তু তা সরানো হয়নি। এরসাথে রাস্তার পাশে লাইন দিয়ে ময়লা-আবর্জনার বস্তা ফেলে রাখা। সাথেই ফেলে রাখা হয়েছে গাছের ডালপালার স্তুপ। আশপালের লোকজন জানান কয়েকদিন ধরে এগুলো এভাবে ফেলে রাখা আছে। প্রায়ই একরম আবর্জনা পড়ে থাকে বলে তারা জানান।
এদিকে দেখা গেছে নগরীর বড়ো বাড়ো রাস্তাগুলো নিয়মিত ঝাড়– দেওয়া হলেও বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার রাস্তায় নিয়মিত ঝাড়– দেওয়া হচ্ছেনা। স্থানীয়রা জানান আগে এসব অনিয়ম হলে তারা কাউন্সিলর অফিসে জানাতেন, কখনো কাজ হতো কখনো হতো না। কিন্তু কাউন্সিলররা পলাতক থাকায় তাও বলা যাচ্ছে না। রাস্তায় ময়লা ফেলার ব্যাপারে বিভিন্ন এলাকাবাসী বলেন প্রায় সময় প্রভাবশালীরা তাদের বাসার গাছের ডালপালা কিংবা বাসা পরিষ্কার করে পুরনো নষ্ট আসবাব বা টুকরো টাকরা বাসার কাছের রাস্তার মোড়ে ফেলে যান। প্রভাবশালী থাকায় তাদের কিছু বলা যায় না। নগরীর দাড়িয়াপাড়ার এক বাসিন্দা জানান রসময় স্কুলের পাশে মোড়ে স্থানীয় এক প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতা কয়েকদিন আগে বাসা পরিষ্কার করে নষ্ট বালিশ ও তুলা ফেলে যান। তার দেখাদেখি আশপাশের বাসা থেকেও কেউ কেউ ককসিট, ময়লার বস্তা, গাছের ডালপালা এনে ফেলেন। এভাবে কয়েকদিনে রীতিমতো ডাস্টবিনের মতো ময়লার স্তুপ জমে যায়। পরে যে বাসার সামনে এনে ফেলা হয়েছে সেই বাসার লোকজন সিটি কর্পোরেশনের পরিচিত পরিচ্ছন্ন কর্মীকে জানালে তারা সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে সেই ময়লা সরানোর ব্যবস্থা করেন।
এ ব্যাপারে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ একলিম আবদীন জানান, পাঁচ আগস্টের পর দুদিন আমাদের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। তবে সাত আগস্ট থেকে আমরা নিয়মিত কাজে ফিরি। তিনি বলেন নগর কর্তৃপক্ষ পরিচ্ছন্ন নগরীর জন্য সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু বাজেট স্বল্পতার জন্য পর্যপ্ত পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম চালানো সম্ভব হচ্ছেনা। পুরো নগরীকে ডাস্টবিনের আওতায় আনতে প্রায় ৬ থেকে ৭ হাজারের মতো ডাস্টবিন প্রয়োজন কিন্তু আমাদের ১৩/১৪শ ডাস্টবিন দিয়ে কাজ চালাতে হচ্ছে। বাজেট কম থাকায় ব্যাপাকহারে পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিয়োগও সম্ভব নয়। আমরা চাহিদা চেয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করেছি। তিনি বলেন পরিচ্ছন্ন নগরী গড়তে নগর কর্তৃপক্ষের সাথে নগরবাসীরও সতর্কতা ও সহায়তার প্রয়োজন। রাস্তাঘাটে আবর্জনা না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ফেললে পারিচ্ছন্ন কর্মীদের তা অপসারণ সহজ হয়। তাছাড়া ডাস্টবিন থেকে সাধারণত ভ্যান দিয়ে ময়লা অপসারণ করা হয়। কিন্তু যারা বস্তা, গাছের ডালপালাসহ বিভিন্ন আবর্জনা রাস্তায় ফেলেন সেগুলো অপসারণে বড়ো গাড়ির প্রয়োজন, ভ্যান দিয়ে তা সম্ভব নয়। সিসিকের বড়ো গাড়ি বড়ো রাস্তা থেকে ময়লা নিয়ে থাকে, পাড়া মহল্লায় পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম কাউন্সিলরদের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ হয়ে থাকে। তাই ডাস্টবিনের বাইরে বা রাস্তায় ফেলা ময়লা অপসারণে দেরি হতে পারে। তবে কেউ যদি নির্দিষ্ট স্থানের বেলায় আমাদের জানান আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারি।