ফেসবুক পোস্টের জেরে শাবি শিক্ষককে হেনস্তার করুন কাহিনী, ছাত্র সমাজের প্রতিবাদ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬:৫৩:৪০ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে শাবি’র নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মনযুর উল হায়দারকে পদাবনতি, জরিমানা এবং ৬ মাসের জন্য ক্যাম্পাসে প্রবেশাধিকার রহিত করা হয়। ঘটনাটি ঘটে ২০১৭ সালে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তার ব্যক্তিগত একাউন্টে আগস্ট মাসকে কেন্দ্র করে একটি পোস্ট দেন। এর পরপরই ১৭ জুলাই ২০১৭ তারিখে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা তার কক্ষটি ভাঙচুর করে এবং তার ছবি টানিয়ে তাতে আগুন দেয়।
এর প্রেক্ষিতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে দেখা যায়, ২৬-০৭-২০১৭ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের জরুরী সভায় বিষয়টিকে সর্বোচ্চ শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে ধরে নিয়ে, কর্মচারী শৃঙ্খলা অধ্যাদেশ ১৯৯২ এর ০৪ (গ) ধারা অনুসারে তাকে সিন্ডিকেটের পরদিন হতে (সহকারি অধ্যাপক থেকে) প্রভাষক পদে পদাবনতি করা হয়। সেই সাথে কর্মচারী শৃঙ্খলা অধ্যাদেশ ১৯৯২ এর ০৪ (ঙ) ধারা অনুসারে তাকে ৬ মাসের বাধ্যতামূলক ছুটি প্রদানের পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং ৬ মাসের জন্য ক্যাম্পাসে তার প্রবেশাধিকার রহিত করা হয় । তাছাড়া ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলে কর্মচারী শৃঙ্খলা অধ্যাদেশ ১৯৯২ এর ০৪ (ক) ধারা অনুসারে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকুরী থেকে বরখাস্ত করা হবে মর্মে সতর্ক করা হয়।
এর আগে মনযুর উল হায়দার তার ব্যক্তিগত ফেসবুক একাউন্টে “দিন গুনছি, আসছে আমার আনন্দের আগস্ট” লিখে পোস্ট করেন। এ বিষয়ে মনযুর বলেন, তিনি কোনো একক ব্যক্তি বা আদর্শকে উদ্দেশ্য করে এ পোস্ট করেননি বরং তিনি তার একান্ত ব্যক্তিগত অভিপ্রায় থেকে পোস্টটি করেন। আগস্ট মাসে মনযুর এবং তার স্ত্রী উভয়ের জন্মদিন তাছাড়া ২০১৭ সালের আগস্টে তার একাধিক গবেষণাপত্র আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশের অনুমোদন পাওয়ার কথা ছিলো আর এ সকল উপলক্ষকে কেন্দ্র করেই তিনি ফেসবুকে পোস্টটি করেন বলে জানান। তবে এ বিষয়টিকে কেন্দ্র করে তার সাথে এমন অবিচার করা হবে তা তিনি ভাবতে পারেননি। তার মতে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্বীয় মতামত প্রকাশের অধিকার বাকস্বাধীনতার অংশ। এর বিপরিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন কঠোর সিদ্ধান্ত তার কাম্য ছিলো না। এর ফলে তিনি ব্যক্তিগত ও অর্থনৈতিক দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার পাশাপাশি মানসিকভাবেও বিপর্যস্ত ছিলেন। তিনি বলেন, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাকে একাধিকবার হত্যার হুমকিও দেয়া হয়। এছাড়াও বিষয়টিকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে তাকে হেনস্তা করার মাধ্যমে সরকারি অনুকম্পা লাভে তখন একটি মহল উঠে পড়ে লাগে। জনাব মনযুর আরো বলেন, ২০০৪ সালে নিয়োগের পর থেকে তিনি একাধিকবার তার লেখনির দ্বারা তৎকালীন সি এস ই বিভাগের এক প্রভাবশালী অধ্যাপকের দ্বিমুখি কাজকর্মের সমালোচনা করেন, যিনি তার বিজ্ঞান মনষ্ক লেখনির দ্বারা তৎকালীন তরুণ সমাজে বেশ প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। এরপর থেকেই মূলত ক্যাম্পাসে তাকে এক ধরণের রাজনৈতিক বা আদর্শিক মেরুকরণের মধ্যে ফেলা হয়। এরপর থেকে নানাভাবে তার ওপর হুমকি এবং চাপ আসতে থাকে। এমনকি তার স্ত্রী বিশ^বিদ্যালয়ের অন্য একটি বিভাগ থেকে কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল করা এবং উচ্চতর ডিগ্রি থাকার পরও কেবল মনযুর উল হায়দারের কারণ দেখিয়ে তাকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত করা হয়। এর প্রতিকার চেয়ে মনযুর বলেন, বিগত সময়ে তার ও তার পরিবারের হয়ে যাওয়া ক্ষতি অপূরনীয় তবে তিনি তার প্রতিষ্ঠানের নিকট তার ন্যায্য প্রাপ্যটুকু নিশ্চিতের আশা প্রকাশ করেন।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শাবিপ্রবি সমন্ময়ক আসাদুল্লাহ আল গালিফ বলেন, শাবি ক্যাম্পাসে বিগত সময়ে শিক্ষক ও ছাত্রদের ওপর হয়ে যাওয়া সকল অনাচারের বিচার নিশ্চিতে তারা কাজ করবেন। ছাত্র আন্দোলনে সম্মুখভাগে থাকা শাবি শিক্ষার্থী মাহবুব আহমেদ এর তিব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, হাজারো ছাত্রের তাজা রক্তের বিনিময়ে তাদের এ আন্দোলন সফল হয়েছে। এ বিজয়ের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য বৈষম্যহীন সার্বভৌম দেশ গড়া, যেখানে থাকবে পূর্ণ বাক স্বাধীনতা, থাকবেনা ভিন্নমত দমনের নোংরা খেলা। তিনি বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে শিক্ষকের প্রতি ঘটে যাওয়া এমন ঘটনার ন্যায্য বিচার দাবি করেন।