‘হাওরের ১০০ বছর ও করণীয়’ শীর্ষক কর্মশালা : সিলেটের ৩৭৩ হাওরের নিরীক্ষা ও বাস্তবায়নযোগ্য প্রকল্প নেয়ার তাগিদ
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২:০০:০৮ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : সরকারী হিসেবে সিলেট বিভাগে ৩৭৩টি হাওর আছে। তবে স্থানীয় হিসেবে এ সংখ্যা ৪১৩টি। সিলেটের এই হাওর ও জলাভূমিগুলো অপার সম্ভাবনার আধার। অথচ সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাব, সরকারের অদূরদর্শীতা ও স্থানীয় মানুষের অসচেতনতার ফলে হাওরগুলো যেন এখন প্রাণ যায় অবস্থা। দখলে-দুষণে-পলিতে পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে হাওরের গতিপথ। রুদ্ধ করা হয়েছে হাওরের পানি নিষ্কাশন পথ। সিলেটের এই হাওরগুলিতে রক্ষায় অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য নিরীক্ষা ও প্রকল্প নেয়া অপরিহার্য। শুধু সিলেটের এই হাওর নয়, সকল জলাভূমি সুরক্ষা, উন্নয়ন এবং ব্যবস্থাপনায় দ্রুত সময়োপযোগী আইন প্রণয়ন ও স্বতন্ত্র ‘জলাভূমি মন্ত্রণালয়’ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
সিলেটে ‘হাওরের ১০০ বছর ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক এক কর্মশালায় এ তাগিদ দেন আলোচকরা। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের হাওর জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের উদ্যোগে এ কর্মশালার আয়োজন করে সিলেট রিসোর্স এডভান্সমেন্ট কমিউনিটি (স্র্যাক), গ্রামীণ জনকল্যাণ সংসদ ও প্রগতি সিলেট।
জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটায় এ কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান। অতিথি হিসেব আলোচনায় অংশ নেন, সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সাবেক অতিরিক্ত সচিব আনোয়ার হোসেন চৌধুরী, সিলেট প্রেসক্লাব সভাপতি ইকরামুল কবীর, সাবেক সভাপতি ইকবাল সিদ্দিকী, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ। শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন গ্রামীণ জনকল্যাণ সংসদের সভাপতি জামিল চৌধুরী।
মূল প্রবন্ধে মহাপরিচালক মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান বলেন, সারাদেশের মতো সিলেটের হাওরেও পানি প্রবাহ কমেছে, জলজ প্রাণী কমেছে। বছরে প্রায় ১ বিলিয়ন টনেরও অধিক পলি বাংলাদেশের ভূভাগে আসছে এবং জমা হচ্ছে। যা সুন্দর আগামীর জন্য সুখকর নয়। তিনি বলেন, হাওরের মতো নদীগুলোও ভরাট হয়ে যাচ্ছে। পানির রিজার্ভার কমে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশ একময় মরুভূমি হয়ে যাবে। এজন্য ক্যাপিটাল ড্রেজিং সময়ের দাবি।
হাওর ও জলাভূমিগুলো যদি সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনার আওতায় আসে এবং এখানকার সম্পদকে যদি সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়, তাহলে সিলেটের চেহারা পাল্টে যাবে, অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাবে, পর্যটন শিল্পের বিকাশ হবে।
সিলেটের রাতারগুল জলাবনের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, রাতারগুলে ১০০ কোটির মতো গাছ রয়েছে। এসব গাছের গোঁড়ায় মাছ আশ্রয় পাচ্ছে। গাছে পাখি আশ্রয় নেয়। রাতারগুলের এই মডেল হাওর ও অন্যান্য জলাভূমির ক্ষেত্রে কাজে লাগানো যেতে পারে। তাতে পরিবেশেরও উন্নতি হবে।
সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী আক্ষেপ করে বলেন, হাওরগুলো সব সরকার নিয়ন্ত্রণ করছে কিন্তু সঠিক ব্যবস্থাপনায় আসছেনা। হাওর দখল করে সরকারী স্থাপনাও হচ্ছে। নদীগুলোর অবস্থাও একই। শতবছরেও সিলেটের সুরমা খনন হয়নি। সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞেস করলে জানায়, স্ক্রিপ্ট হচ্ছে। ছড়া-খাল খননেও কোন উদ্যোগ নেই, যা খুবই এলার্মিং।
সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ইকবাল সিদ্দিকী টাঙ্গুয়ার হাওরকে অভিভাবকহীন উল্লেখ করে বলেন, বৃহৎ এই হাওরে ১০০টির বেশি হাউস বোট রয়েছে যা পরিবেশসম্মত নয়। এগুলো নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোন পরিকল্পনা আছে কি-না জানতে চান।