বিএনপির ত্রাণ তহবিলে জমা পড়েছে ২০ কোটি টাকা
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮:৫৯:৩৬ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক : দেশের পূর্বাঞ্চলের জেলাসমূহের দুর্গত মানুষদের জন্য ২০ কোটি টাকার অধিক ত্রাণ সামগ্রী-নগদ অর্থ সংগ্রহ করেছে বিএনপি। এসব অর্থে দুর্গত মানুষদের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের পাশাপাশি বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসন কার্যক্রমে ব্যয় করবে দলটি।
শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দলের ত্রাণ সংগ্রহ কমিটির এক সংবাদ সম্মেলনে ত্রাণ সংগ্রহ কমিটির আহ্বায়ক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, গত ২৫ তারিখ থেকে আজ অবধি আমরা বিএনপি এবং বিএনপি পরিবার প্রায় ২০ কোটি টাকারও অধিক নগদ আর্থিক এবং ত্রাণ সহায়তা আমাদের ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, কুমিল্লা দক্ষিণ, কুমিল্লা উত্তর, খাগড়াছড়ি, হবিগঞ্জ এবং মৌলভীবাজার, চট্টগ্রামের একটা অংশ এটা ছিলো ওয়াস্ট এ্যাফেক্টেড এরিয়ায় পরবর্তিতে চাঁদপুরের কয়েকটা উপজেলা বন্যা কবলিত হয়েছিলো।
তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রাথমিকভাবে ত্রাণ কার্যক্রমটা ছিলো বন্যার্ত মানুষকে উদ্ধার করা। তার পরবর্তীতে ওই সময়ে মানুষকে খাবার সরবারহ করা এটি দলের জেলা, উপজেলা ও পৌরসভার দল ও অঙ্গসংগঠনের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ করেছেন। বিএনপি ক্ষমতায় নেই তারপরও বিএনপি জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে নেতা-কর্মীরা মানুষের পাশে ছিলেন। জাহিদ বলেন, আমাদের ত্রাণ সংগ্রহে বিএনপির পরিবার ছাড়াও সাধারণ মানুষ, গৃহবধু, রিকশাওয়ালা, সাধারণ শ্রমিকও আমাদের কাছে ত্রাণ সহায়তা নিয়ে এগিয়ে এসেছে। আমরা প্রতিটি টাকার হিসাব রেখেছি, যারা ত্রাণ সহায়তা দিয়েছেন তাদেরকে রশিদ দিয়েছি।
অনেকে অনেক টাকা দিতে চেয়েছে, অনেকের টাকা নেই। তিনজনের টাকা ভুলে নিয়েছি, অজানা ছিলো আমাদের। সেই আমরা ত্রিশ লক্ষ টাকা ফেরত দিয়েছি। নৈতিকভাবে আমরা মনে করি, উনাদের টাকা নেওয়া সঠিক হবে না, নেওয়া উচিত হবে না। সেজন্য আমরা সেই সমস্ত মানুষের টাকা আমরা পে-অর্ডার করে ফেরত দিয়েছি। কাজেই আমরা ত্রাণ সংগ্রহে যেমন ট্রান্সপারেন্ট ছিলাম, ত্রাণ বিতরণেরও আমরা ট্রান্সপারেন্ট আছি।
তিনি বলেন, আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া এই ত্রাণ পুনর্বাসনের জন্য এখনও পর্যন্ত ৬০ কোটি টাকার অধিক আমাদের ত্রাণের একটি সেন্ট্রাল রিলিফ এন্ড রিহ্যাবিলিটেশন ফান্ড আছে। সেটা এই মুহুর্তে জমা আছে। সেটা দিয়ে আমরা পুনর্বাসন কাজগুলো পরিচালনা করব। আমরা সেজন্য গণমাধ্যমসহ দেশবাসী এবং যারা ত্রাণ সহায়তা করেছেন তাদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।
জাহিদ বলেন, এখন পানি নেমে যাচ্ছে, এখন শুরু হয়েছে রোগ-বলাই কিছু সংক্রামক ব্যাধি উপদ্রুত এলাকাগুলোতে মেডিকেল ক্যাম্প চালু করা হয়েছে। আমাদের ডাক্তররা শুধু যাচ্ছেন তা না,পর্যাপ্ত পরিমাণ ওষুধ বিনামূল্যে সরবারহ করা হচ্ছে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ড্যাবসহ দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা সহযোগিতা করছে। কৃষির অবস্থা খুবই খারাপ, পানিতে সব ভেসে গেছে। বীজ পাবে কোথায়? আমরা ইসলামপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, টাঙ্গাইল থেকে প্রচুর পরিমাণ ধানের বীজ বা ঝালা বলে সেই বীজ ট্রাকে করে উপদ্রুত এলাকায় আমরা সরবরাহ করে ফেলেছি এবং কৃষকরা ধান ক্ষেতে বীজ বপন করছে।
তিনি জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে বন্যা পরবর্তি পুনর্বাসন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে শিশুদের মধ্যে শিক্ষাসামগ্রী বিতরণ এবং ক্ষতিগ্রস্থদের গৃহ নির্মাণের সহযোগিতা করা হবে এবং সেই কাজও শুরু করা হয়েছে।
দেশের পূর্বাঞ্চলে ছাত্র-জনতার বিপ্লবে ১৩৭ জন শহীদ হয়েছেন, তাদেরকেও এই তহবিল থেকে সহায়তা করা হবে বলে জানান তিনি। জাহিদ বলেন, এই প্রাকৃতিক দুযোর্গ প্রায়শই হবে। এই যে বন্যা দেখেছেন এটা মানব সৃষ্ট। এর মাধ্যমে আমাদের মানুষগুলোকে কষ্ট দেওয়া হয়েছে। এটা মোকাবিলা করে কিভাবে বেঁচে থাকতে হয় বাঙালিরা তা জানে, বাংলাদেশের মানুষ তা জানে। কাজেই কেউ যদি চেষ্টা করে আমাদেরকে এভাবে দাবিয়ে রাখবে অথবা আমাদের যে সার্বভৌমত্ব, আমাদের যে বেঁচে থাকার আকাঙ্খাকে দাবিয়ে রাখবে, বাংলাদেশের মানুষের ইচ্ছার বর্হিপ্রকাশকে গলাটিপে হত্যা করবেৃ. সেটার সুদূর পরাহত, বাংলাদেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ। কাজেই কোনো ষড়যন্ত্র সার্থক হবে না। ছোট বন্যা দিয়ে কষ্ট দিয়েছেন কিন্তু মনে রাখবেন এই কষ্ট কোনো সময় হয়ত মনে আনন্দ পেতে পারেন। কোনো অবস্থাতেই মানুষের প্রতি মানুষের যে ভালোবাসা এটি কিন্তু পাবেন না।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ত্রাণ সংগ্রহ কমিটির সদস্য আবদুস সালাম, মীর সরাফত আলী সপু, রিয়াজুল ইসলাম রিজু, কাজী আবুল বাশার, রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন, আমিনুল হক, হাসান জাফির তুহিন, রেজাউল কবির পল এবং ত্রাণ সংগ্রহ কমিটির সদস্য সচিব দলের যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ উপস্থিত ছিলেন।