ডেঙ্গুতে আক্রান্ত-মৃত্যু বাড়ছে হয়নি বর্ষাকালীন জরিপ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:২৬:৪২ অপরাহ্ন
মৃত্যু ১৩১ ও আক্রান্ত ২৪ হাজার ছাড়িয়েছে
জালালাবাদ রিপোর্ট : দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যু সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে হাসপাতালগুলোতে ভর্তি প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। সিলেটের হাসপাতালগুলোতেও ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে। তবে এ নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ কিংবা সিটি করপোরেশনের দৃশ্যমান কোন তৎপরতা চোখে পড়ছেনা।স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জানিয়েছে, রোববার ডেঙ্গুতে আরো ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে আক্রান্ত হয়েছেন আরও ৯২৬ জন। এ নিয়ে চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ১৩১ জন। মোট আক্রান্ত ছাড়িয়েছে ২৪ হাজার ৩৪ জনে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্ষা মৌসুম পার হয়ে যাওয়ার পরও এবার ডেঙ্গুর বর্ষাকালীন জরিপ হয়নি। বর্ষা-পরবর্তী জরিপ নিয়েও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোনো তৎপরতা নেই।ডেঙ্গু পরিস্থিতি বুঝতে প্রতিবছর তিন দফায় এডিস মশার জরিপ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখা। ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলার প্রস্তুতির জন্য এ জরিপ খুবই প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
ডেঙ্গুর পরিস্থিতির আগাম ধারণা নিতে এডিস মশার জরিপ হয় ফি বছর তিনবার-বর্ষার আগে, বর্ষার সময় ও পরে। এডিস মশার ঘনত্ব দেখে আগাম ধারণা পাওয়া যায়, ডেঙ্গুর প্রকোপ কতটুকু হবে। এসব জরিপ হয় মূলত ঢাকার দুই সিটিসহ বিভিন্ন সিটি করপোরেশনে। তবে একাধিকবার দেশব্যাপী জরিপও হয়েছে। এ বছর সর্বশেষ বর্ষা-পূর্ব লার্ভা জরিপ হয় এপ্রিল মাসে। তবে অন্যান্য সিটি করপোরেশনের মতো সিলেট সিটি করপোরেশনেও জরিপ হয়েছে বলে খবর পাওয়া যায়নি।
ডেঙ্গুর জরিপকারী প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ডা. শেখ দাউদ আদনান বলেন, আমরা জরিপের বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান। এর জন্য অর্থের সংস্থান বা পরিকল্পনা তো মন্ত্রণালয়কেই করতে হবে। বর্ষার জরিপের জন্য যেমন কোনো তাগাদা দেওয়া হয়নি। পরবর্তী জরিপের জন্যও এখন পর্যন্ত তাগাদা নেই।তবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার জরুরী ভিত্তিতে সিটি করপোরেশনগুলোর নিজস্ব তাগিদে জরিপের তাগিদ দেন।
চিকিৎসকদের ভাষ্য, প্রতিবছর জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগী বেশি থাকে। তবে এবার শুরুতে রোগী কম থাকলেও এখন ডেঙ্গু রোগী বেড়েছে।ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে সপ্তাহের ব্যবধানে ভর্তি প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। রোগী বাড়ায় চালু করা হয়েছে আলাদা ডেঙ্গু ওয়ার্ড। সামনে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নাজুক হয়ে উঠতে পারে বলেই মনে করছেন জনস্বাস্থ্যবিদ ও কীটতত্ত্ববিদেরা। তাঁরা বলছেন, মশার লার্ভার উপস্থিতি কোথায় কতটা, সে বিষয়ে কারও হাতে কোনো তথ্য নেই। এ পরিস্থিতিতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়লে তা সামলানো কঠিন হতে পারে।চলতি বছরের শুরুতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়লেও মার্চ মাস থেকে এ প্রবণতা কমে আসে। তবে আগস্ট মাসের শেষ দিক থেকে তা বাড়তে থাকে।
আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টি এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে এডিস মশার বিস্তার ঘটেছে। এ কারণে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। এদিকে, ডেঙ্গুর প্রকোপের মাঝেও সিলেট নগরে নেই মশক নিধন অভিযান। নগরজুড়ে মশার দাপট চলছে। দিন কিংবা রাত, ঘরে কিংবা বাইরে, বাসা কিংবা অফিস সব জায়গায় এখন মশার উপদ্রব। অথচ নিরব সিটি করপোরেশন। রায়নগরের একাধিক বাসিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমাদের এলাকাসহ আশেপাশের এলাকায় গত কয়েক সপ্তাহে সিটি কর্পোরেশনের কোনো মশকনিধন কর্মী দেখতে পাইনি। ইদানিং বেড়েছে মশা। ডেঙ্গুর পিক সিজন চলছে। আগে তো কাউন্সিলররা এলাকার মশকনিধন কার্যক্রম তদারকি করতেন। কিন্তু এখন তো কাউন্সিলররাও নেই, ফলে কোনো ধরনের তদারকি নেই। এবার যে পরিস্থিতি কী হবে, তা ভাবতেও ভয় লাগে।
২০২৩ সালে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে, সরকারি হিসাবে এক হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে ২০২২ সালে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৮৬৮। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে মৃত্যুর হার। চলতি বছরও একই আশঙ্কা করা হচ্ছে।