সিলেটের আদালতে শতাধিক আইন কর্মকর্তার পদ শুণ্য : বিলম্বিত বিচার কার্যক্রম
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১:০০:১৮ অপরাহ্ন
এমজেএইচ জামিল : আওয়ামী সরকারের পতনের দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও সিলেটের বিভিন্ন আদালতে এখনো শুণ্য রয়ে গেছে শতাধিক আইন কর্মকর্তার পদ। ফলে ভোগান্তিতে পড়ছেন বিচারপ্রার্থীরা। এতে সিলেট জেলা ও মহানগরের আদালতসমুহে লাখের মতো চলমান মামলা নিষ্পত্তিতে সৃষ্টি হয়েছে প্রতিবন্ধকতা, বিলম্বিত হচ্ছে বিচার কার্যক্রম। আওয়ামী আমলে রাজনৈতিকভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত আইন কর্মকর্তাদের অপসারণ করে নতুন আইন কর্মকর্তা নিয়োগ করে আদালতগুলোতে গতি ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
এসব শুণ্যপদে শীঘ্রই আইন কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হচ্ছে বলে আদালত সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে। ইতোমধ্যে সম্ভাব্য আইন কর্মকর্তাদের নামের তালিকা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্রটি। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে দুয়েকদিনের মধ্যে নাম ঘোষণা হতে পারে। জানা গেছে, ড. ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালিন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে প্রধান বিচারপতি, এটর্নী জেনারেল থেকে শুরু উচ্চ আদালতের আইন কর্মকর্তা পদগুলোতে আওয়ামী পন্থীদের সরিয়ে বিএনপি-জামায়াত সমমনা ও তুলনামুলক নিরপেক্ষদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, উচ্চ আদালতে রদবদল হলেও এখনো সিলেটের আদালতের শতাধিক আইন কর্মকর্তার পদে নতুন কাউকে নিয়োগ দেয়া হয়নি। আওয়ামী সরকারের আমলে নিয়োগপ্রাপ্তদের অনেকেই পলাতক এবং কেউ কেউ নিষ্ক্রিয় থাকায় স্থবির রয়েছে বিচারিক কার্যক্রম।
আদালত সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, শীঘ্রই সিলেটের আদালতগুলোতে আইন কর্মকর্তার পদে নতুন লোক নিয়োগ দেয়া হবে। প্রস্তুতি প্রায় শেষপর্যায়ে। ইতোমধ্যে সম্ভাব্য নামের তালিকা আইন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। এসব তালিকায় বিএনপি-সমমনা আইনজীবীদের পাশাপাশি তুলনামুলক নিরপেক্ষ আইনজীবীদের নামও রয়েছে। আদালত সূত্রে জানা গেছে, সিলেটের সিলেট জেলা ও দায়রা জজের অধীন ২২টি আদালতে সাড়ে ২৮ হাজার মামলা রয়েছে। এছাড়া জেলা ও মহানগরের ৬০টি আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় লাখের মতো।
এ ব্যাপারে সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এডভোকেট এটিএম ফয়েজ বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে সিলেটের আদালতগুলোতে আইন কর্মকর্তা না থাকায় বিচার কার্যক্রমে স্থবিরতা বিরাজ করছে। এতে বিচারপ্রার্থীরা পড়ছেন ভোগান্তিতে। আইন কর্মকর্তা নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রায় শেষ। দুয়েকদিনের মধ্যে নাম ঘোষণা হবে।জানা গেছে, বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক কারণে হওয়া হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের লক্ষ্যে দুটি কমিটি গঠন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। এর মধ্যে একটি জেলা পর্যায়ের কমিটি এবং অন্যটি মন্ত্রণালয় পর্যায়ের কমিটি।
রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপন জারি করে। সেখানে কমিটি দুটির কাজের ধরণ ও কাজের পরিধিও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। প্রজ্ঞাপন থেকে জানা যায়, রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের জন্য আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে জেলা পর্যায়ের কমিটির সভাপতি জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করতে হবে। জেলা কমিটির কাছ থেকে সুপারিশপ্রাপ্তির পর সেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা এবং প্রত্যাহারযোগ্য মামলা চিহ্নিত করে তালিকা প্রস্তুত করা ও মামলা প্রত্যাহারের কার্যক্রম গ্রহণ করবে মন্ত্রণালয় পর্যায়ের কমিটি।
বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও অন্যান্য নানা কারণে রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও নিরীহ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা হয়েছে। সেগুলো প্রত্যাহারে সুপারিশের লক্ষ্যে সরকার এই দুটি কমিটি গঠন করেছে বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।
জেলা পর্যায়ের কমিটির সভাপতি হিসেবে থাকবেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, সদস্য সচিব অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং সদস্য পুলিশ সুপার (মহানগর এলাকার জন্য পুলিশের একজন ডেপুটি কমিশনার) ও পাবলিক প্রসিকিউটর (মহানগর এলাকার মামলাগুলোর জন্য মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর)। জেলা কমিটির কাছে যদি মনে হয় মামলাটি রাজনৈতিক বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে হয়রানির জন্য করা হয়েছে, তাহলে মামলাটি প্রত্যাহারের জন্য কমিটি সরকারের কাছে সুপারিশ করবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সেই সুপারিশ, মামলার এজাহার, অভিযোগপত্রসহ আবেদন পাওয়ার ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে নির্দিষ্ট ছক অনুযায়ী তথ্যাদিসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন।