সিলেট-আখাউড়া রেল সেকশনে কৃষিজমিতে বাণিজ্যিক স্থাপনা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬:১৭:৩৬ অপরাহ্ন
কমলগঞ্জ প্রতিনিধি: সিলেট-আখাউড়া রেল সেকশনের ভূ-সম্পত্তি কৃষি বন্দোবস্ত নিয়ে গড়ে উঠেছে নানা বাণিজ্যিক স্থাপনা। স্থানীয় প্রভাবশালীরা এ সেকশনের কৃষিজমি বন্দোবস্ত নিয়ে গড়ে তুলেছেন বাসাবাড়ি ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। এতে বেহাত হচ্ছে রেল সেকশনের কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি।
প্রভাবশালীরা মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর ও ভানুগাছসহ বিভিন্ন রেল স্টেশন সংলগ্ন এলাকার কোটি টাকার মূল্যবান ভূ-সম্পত্তি কৃষি বন্দোবস্ত নিয়ে বাসাবাড়িসহ দোকান কোঠা স্থাপন করে বিভিন্ন খন্ডাংশ করে লোকজনের কাছে বিক্রি ও ভাড়া দিয়েও লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব জমি প্রভাবশালীদের দখলে চলে গেলেও উদ্ধারে নেই কোন তৎপরতা।
সরেজমিনে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রভাবশালী মহল কর্তৃক রেলওয়ের বন্দোবস্ত নেওয়া জমিজমার সাথে পরিত্যক্ত জমি নিজেদের দখলে নিয়ে চড়া দামে বিক্রি করছেন। এসব জমি কিনে লোকজন স্থায়ীভাবে বসতঘর নির্মাণ করছেন। এছাড়াও প্রভাবশালীরা টিনসেড, পাকা ও আধা পাকা ঘর নির্মাণ করে ভাড়া দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এসব ঘরে নিম্নআয়ের লোকজন ভাড়া নিয়ে স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। সিলেট-আখাউড়া রেল সেকশনের জমি স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে চলে যাওয়ায় সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। প্রভাবশালীদের কেউ কেউ এসব জমি কৃষি লিজ নিয়ে দালান-কৌঠা নির্মাণ করছেন। আবার অন্য লোকদের কাছে বিক্রিও করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
ভাটেরা, কুলাউড়া, লংলা, শমশেরনগর, ভানুগাছ, শ্রীমঙ্গল, সাতগাঁও, রশিদপুর, লস্করপুর, শায়েস্তাগঞ্জ ও নোয়াপাড়াসহ বিভিন্ন স্টেশনের পাশের জমি অবৈধ দখলে নিয়ে ঘরবাড়ি ও দোকানপাট নির্মাণ করা হয়েছে। রেলওয়ের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার সাথে যোগসাজস করে একটি মহল দখল কাজ সম্পন্ন করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। কৃষিজমির সবচেয়ে বেশি বাণিজ্যিক স্থাপনায় রূপ নিয়েছে শমশেরনগর ও ভানুগাছ রেল স্টেশন এলাকায়।
পাবই রেলক্রসিং এলাকার বাসিন্দা হারুনুর রসিদ, আব্দুর রহিমসহ এলাকাবাসী জানান, অবৈধভাবে নির্মিত দোকানের কারণে রেলক্রসিং-এ মারাত্মক দুর্ঘটনার আশংকা রয়েছে। প্রভাবশালীদের অবৈধ দখলে রেলের কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি বেহাত হওয়ায় সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ বিপুল পরিমাণের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে রেল লাইনের ক্লিপ, নাটবল্টুসহ মূল্যবান যন্ত্রাংশ চুরি হয়ে যাওয়ায় এই সেকশনে রেল চলাচলে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে বলে সচেতন মহল মনে করছেন।
রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় ওই জোনের বিভিন্ন স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য রয়েছে নির্মিত দালান। বিভিন্ন স্টেশনে কর্মরত মাস্টার ও প্রকৌশলী বিভাগের লোকজন ভাড়া দিয়ে প্রতি মাসে এভাবে টাকা উপার্জন করছেন। আবাসিক কোয়ার্টারের বাইরের লোকজন বসবাস করলেও সেখানে সরবরাহকৃত পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিলও পরিশোধ করতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে। গণপূর্ত (রেল) এর শ্রীমঙ্গল অঞ্চল এবং দু’জন স্টেশন মাস্টার জানান, ভূ-সম্পত্তি বিভাগ থেকে লিজ নিয়ে অবৈধভাবে কিছু কিছু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা (পূর্ব) সুজন চৌধুরী বলেন, কৃষিজমি লিজ নিয়ে বাণিজ্যিক স্থাপনা করার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের বিশাল এলাকা রয়েছে। অভিযান চলছে। তবে জনবল কম থাকায় নিয়মিত অভিযান পরিচালনায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। এ বিষয়েও ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিভাগীয় কর্মকর্তাকে অবহিত করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভাগীয় ভূ-সম্পতি কর্মকর্তা (ঢাকা) মো: আব্দুস সোবাহান বলেন, শীঘ্রই শমশেরনগরে অবৈধ দখলকৃত রেলওয়ে জায়গা উচ্ছেদ করা হবে। এজন্য আমরা নোটিশ প্রেরণ করেছি।