চোখ জুড়ানো লাল শাপলার বিকি বিল
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬:৫৪:০৬ অপরাহ্ন
তাহিরপুর প্রতিনিধি : বিলজুড়ে পানির উপরে সবুজ পাতা ভেদ করে ফুটেছে অজস্র মনোমুগ্ধকর চোখ জুড়ানো লাল শাপলা ফুল। সাথে যোগ হয়েছে দেশীয় নানান প্রজাতির পাখির কিচিরমিচির শব্দ। যেন প্রকৃতি তার রূপের সাথে নিজেই যেন ছড়িয়ে দিয়েছে বাদ্যযন্ত্রে সুরের ঝরনাধারা। মেঘালয় পাহাড় ঘেঁষে লাল-সবুজে ভরা প্রকৃতির সাথে ফুটন্ত রক্তিম লাল শাপলা ফুল যেন মিতালি করছে।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বিকি বিলে মনোমুগ্ধকর এই দৃশ্য দেখা যায়। যেদিকে চোখ যায় শুধুু ফুল আর ফুল। দূর থেকে দেখলে মনে হবে ফুলে ফুলে সাজানো লালগালিচা বিছায়ে আছে কেউ। এই সৌন্দর্যের ইন্দ্রজালে জড়িয়ে আছে স্থানীয়রা আর দেখে মুগ্ধ আগত পর্যটক। প্রতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত দেশের উত্তর পূর্বদিকের এ জেলায় সবচেয়ে বেশি শাপলা ফুলের উপস্থিতি এই বিলে দেখা যায়।
স্থানীয় এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের কাশতাল গ্রামের পাশে লাল শাপলার অপরুপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে সূর্যোদয় থেকে দুপুর ১১টার ভেতরে যেতে হবে। কারণ সূর্যের উপস্থিতি বাড়ার সাথে সাথে লাল শাপলা তার আপন সৌন্দর্যকে গুটিয়ে নিতে শুরু করে। গত দুই যুগ ধরে কোনো রকম চাষাবাদ ছাড়াই প্রাকৃতিকভাবে লাল শাপলা ফুল ফুটছে।
উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের কাশতাল, বরোখাড়া ও আমবাড়ি গ্রামের পাশে বিকি বিল হাওরের ১০০ কিয়ারের অধিক (৩০ শতাংশে এক কিয়ার) জমি নিয়ে এই বিলের অবস্থান। বছরের ছয় মাস পানি থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে ধান চাষ করা হয়। লাল শাপলার পাশাপাশি বিলটিতে সাদা ও বেগুনি রঙের শাপলাও জন্মে। আগত পর্যটক ও দর্শনার্থীরা সকালে বিলে এসেই শাপলার ফাঁকে ফাঁকে ছোট নৌকায় করে ঘুরছেন, ছবি তুলছেন। আর বিলের পানিতে নেমে শালুক তুলছে আশপাশের গ্রামের নারী ও শিশুরা। এগুলো বিক্রি করে কিছু বাড়তি আয়ও করেন তাঁরা।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, গত ৮ বছরের বেশি সময় ধরে লাল শাপলার অপরূপ দৃশ্য দেখতে আসছেন দর্শনার্থীরা। আর সংবাদ মাধ্যমে এই বিল নিয়ে প্রচারের পর গত ২০১৯ সালের ১২ অক্টোবর তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আহাদ এ বিলটিকে পর্যটন স্পট হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি, ফলে আগত পর্যটক ও দর্শনার্থী চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
উত্তর বড়দল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুক মিয়া জানান, লাল শাপলার বিকিবিল সুবিন্যস্ত হাওর, নদী, খাল, জনপদের পাশে নতুন সম্ভাবনাময় স্বপ্নের ডানা মেলছে। মনোমুগ্ধকর এ সৌন্দর্য দেখতে প্রতিদিনই পর্যটকদের আগমন ঘটছে এই সময়টাতে। এখন প্রয়োজন এলাকার অবকাঠামোগত উন্নয়ন।