গোয়াইনঘাটে দুর্নীতি ও লুটপাটের প্রতিবাদ করায় হামলা-মামলার শিকার বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬:৩৮:১৮ অপরাহ্ন
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং পরবর্তীতে মাদক, চোরাচালান, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, দুর্নীতি ও লুটপাটের প্রতিবাদ করায় হয়রানি, হামলা-মামলার শিকার হচ্ছেন গোয়াইনঘাটের শিক্ষার্থীরা। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরও তাদের দোসর সংঘবদ্ধ চক্রটি এখন শিক্ষার্থীদের প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে।
রোববার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেছেন গোয়াইনঘাট কলেজের শিক্ষার্থীরা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন উপজেলার লেঙ্গুড়া ইউনিয়নের লেঙ্গুড়া গ্রামের ফয়সল আহমদের পুত্র আজমল হোসেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘জুলাইয়ের ঐতিহাসিক ছাত্র আন্দোলনের সময় সারাদেশের ন্যায় গোয়াইনঘাট উপজেলায় আমরা গণআন্দোলন গড়ে তুলি। স্বৈরাচারী সরকারের পতনের দাবিতে একদফা আন্দোলনে আমরা গোয়াইনঘাট ছাড়া শাবিপ্রবি এবং সিলেট শহরের বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অংশ নিয়ে রাজপথে আন্দোলন করি। এটাই আজ আমার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
আজমল হোসেন বলেন, ‘স্বৈরাচারী সরকারের দোসরদের সঙ্গে মিলে কতিপয় দুষ্কৃতকারী আজ আমাদেরকে মিথ্যা মামলা, হামলা আর নির্যাতন করছে। আমাদের বিরুদ্ধে ভুয়া ও মনগড়া খবর প্রচার করছে। নিজেদের অপকর্ম আড়াল করতে তারা নানা ফন্দি আটছে।’
তিনি অভিযোগ করেন, ‘স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা এবং তার দোসররা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলেও গোয়াইনঘাটে কিছু দুষ্কৃতকারী আবার নতুন করে অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছে। তারা সীমান্ত দিয়ে মাদক, চিনি, গরুসহ নানা অবৈধ পণ্য প্রতিনিয়ত দেশে নিয়ে আসছে। একইভাবে এই চক্র অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছে দীর্ঘদিন থেকে। বিশেষকরে ইজারা বহির্ভূত এলাকা থেকে বালু উত্তোলন করে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকা ছিনিয়ে নিচ্ছে এই চক্র।’
কলেজ শিক্ষার্থী আজমল আরও অভিযোগ করেন, ‘গোয়াইনঘাট উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাজীব ও তার সহযোগিরা এই চক্রের মূল হোতা। রাজীব ৫ আগস্টের পর পালিয়ে বিদেশে চলে গেলে তার সহযোগিরা এখন এই অপকর্মের সাথে লিপ্ত রয়েছে। আন্দোলন শেষে বাড়ি ফেরার পথে একাধিক শিক্ষার্থীর উপর হামলা চালিয়েছে। আমাদের সহপাঠী কিবরিয়া আন্দোলন থেকে বাড়ি ফেরার পথে এই রাজীব ও তার ভাই রাসেল এবং সরওয়ার মিলে হামলা করেছে।’
আজমল বলেন, ‘ইজারা বহির্ভূত এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের প্রতিবাদ করে আমরা উপজেলা প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিষয়টি অবগত করি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের মুখে গত ২৩ আগস্ট অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে কয়েকটি নৌকা আটক করেন করে যৌথবাহিনী এবং কয়েক জনকে গ্রেপ্তার করে। এরপর থেকেই এই দুষ্টু চক্র আমাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়।’ তিনি বলেন, ‘অভিযানের পর শক্তিশালী এই চক্রের সদস্য রাসেল আহমদ, সরওয়ার আহমদ, সজিব আহমদ, পাবেল আহমদ, মাহমদ, কুদরত উল্লাহ ও সাহেদ আহমদ গংরা আমার উপর অমানবিক নির্যাতন চালায়। আমাকে পানিতে চুবিয়ে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিলেও রহস্যজনক কারণে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’
গোয়াইনঘাটে লুটপাট ও অবৈধ চোরাচালান অব্যাহত রাখতে সংঘবদ্ধ চক্রটি একের পর এক অপপ্রচার চালিয়ে শিক্ষার্থীদের দমিয়ে রাখতে চায় বলে অভিযোগ এই শিক্ষার্থীর। তিনি নিজে এবং অন্যান্য শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও প্রাণনাশের আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তাই অপকর্ম, হামলা-মামলায় যুক্ত সব সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেপ্তার, কার্যকর ব্যবস্থা এবং সুবিচার নিশ্চিত করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। বিজ্ঞপ্তি