ভয়ঙ্করতম বজ্রপাত
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯:২৯:২৬ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : রোববার সকাল থেকেই সিলেটের আকাশ ছিলো মেঘে ঢাকা। কখনো ঝিরিঝিরি, কখনো মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল। মাঝে-মধ্যে বিজলী চমকাচ্ছিল। কিন্তু বেলা গড়িয়ে দুপুর হতেই অন্য রুপ নিলো নীল-নীলাকাশ। সেকেন্ডে সেকেন্ডে আকাশ মুহুর্মুহু বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিলো। আর সাথে বিকট শব্দে আকাশের গর্জন। এমন ভয়ঙ্করতম বজ্রপাতে সিলেটে ঝরে গেলো আরো ৮টি প্রাণ।
এক সপ্তাহও হয়নি। গত ২১ সেপ্টেম্বর এমনইভাবে সিলেটে আঘাত হানে বজ্রপাত। সেদিনও ঝরে যায় ৭ প্রাণ। অর্থাৎ সপ্তাহান্তে সিলেটেই ঝরে গেলো ১৫ প্রাণ। যাদের বেশিরভাগই কৃষক বা খেঁটেখাওয়া মানুষ।
সিলেটে দিন-দুপুরে এমন বজ্রপাতকে ‘মাদার অব অল থান্ডারস্টর্ম’ অর্থাৎ ভয়ঙ্করতম বজ্রপাত বলে আখ্যায়িত করলেন এক বৃটিশ নাগরিক। সিলেটে অবস্থানরত ওই তরুণ বলেন, ভয়ঙ্কর ও অবিশ^াস্য। জীবনে বিদ্যুৎ চমকানোর এমন দৃশ্য তিনি দেখেননি। এমন বিকট শব্দ যে কাউকেই আতঙ্কগ্রস্থ করবে। তিনি বলেন, মুহুর্মুহু বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিল। জানালা দিয়ে দেখছিলাম, এত ঘন ঘন বাজ পড়ছিল যে আকাশটা অন্ধকার হতেই পারছিল না।
সত্যিই গতকালের দিন-দুপুরে আকাশের বিকট শব্দ নগরের ঘরে-বাইরে থাকা সকলকেই আতঙ্কগ্রস্থ করেছে। দুপুর ১২টা থেকে সাড়ে ১২টার মধ্যে রানগরের এক বাসার জানালা দিয়ে দেখা গেলো, বজ্রপাতের বিকট শব্দে এক বৃদ্ধ দাঁড়ানো থেকে হঠাৎ বসে পড়লেন। এসময় তাঁর হাত ধরে থাকা শিশুটিকে তিনি বুকের মধ্যে জড়িয়ে রাখলেন পরম মমতায়।
কয়েক মিনিটের বজ্রপাত শুধু নগর নয়, সিলেটের বিস্তীর্ণ অঞ্চলেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শুধু প্রাণহানী-ই হয়নি। নষ্ট কিংবা বিকল হয়েছে ঘরে থাকা অসংখ্য ফ্রিজ থেকে শুরু করে বিদ্যুতিক যন্ত্রপাতিও।
আবহাওয়া অধিদপ্তর আগে থেকেই সতর্ক করেছিলো যে, সিলেটে বজ্রমেঘের অবস্থান রয়েছে। সবাইকে বজ্রপাত থেকে সাবধান থাকতে হবে। আবহাওয়া অফিস সাবধান করলেও খেটে-খাওয়া মানুষের কাছে এই সাবধানতার পরামর্শ পৌঁছেনা কোনভাবেই। এজন্য নেই কোন উদ্যোগ। সিলেটে তাই ঝরছে প্রাণ। বজ্রপাতের অঞ্চলে এখন প্রশ্ন, হাওর-বাওরে কিংবা প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই বজ্রপাতের বার্তা পৌঁছাবে কে?
অস্ট্রেলিয়া কার্টিন বিশ্ববিদ্যালেয় স্কুল অব আর্থ অ্যান্ড প্লানেটারি সায়েন্সেস এর গবেষণা পরিচালক আশরাফ দেওয়ান বলেছেন, প্রায় ১০ বছর হতে চলেছে বজ্রপাতকে দুর্যোগ ঘোষণার। কিন্তু মৃত্যু কি কমেছে? গণমাধ্যমের তথ্যানুসারে বজ্রপাত থেকে মৃত্যু হ্রাসে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা এ পর্যন্ত ৪ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, জনগণের করের টাকায় মৃত্যু তো কমছেই না, বরং ঝুঁকি বাড়ছে।