মৌলভীবাজারের দৃষ্টিনন্দন বেরিলেক বেদখল
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫:৫১:৫৭ অপরাহ্ন
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: মৌলভীবাজার শহরের একমাত্র দৃষ্টিনন্দন ‘বেরি লেক’ দিনের পর দিন বেদখলে গিয়ে সীমানা ছোট হয়ে আসছে। বছরের পর বছর প্রাকৃতিক কোলাহলমুক্ত পরিবেশে অবস্থিত এই লেকের কোন তদারকি না থাকায় অস্তিত্ব হারিয়েছে লেকের জায়গাটি। লেকের মোট ১১২৬.৩ শতক জমির মধ্যে শুধু জলসীমা ছাড়া সবই বেদখলে চলে গেছে। এতে দখল করা হয়েছে অন্তত ৭ কোটি ২৫ লাখ টাকার জমি।
মৌলভীবাজার পৌরসভা কার্যালয় জানায়, জেলা প্রশাসনের মালিকানাধীন ১নং খতিয়ানের পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডে অবস্থিত মৌলভীবাজার বেরি লেকটি বিনোদনের জায়গা হিসাবে গড়ে তুলতে ভোগ দখলের দায়িত্ব দেওয়া হয় মৌলভীবাজার পৌরসভাকে। ১১২৬.৩ শতক জায়গা নিয়ে বেরি লেক অবস্থিত। এর মধ্যে জলসীমা ৯৭৪ দশমিক ৪ শতক, লেকের উত্তর পাড়ে স্থলসীমা ৪৪ দশমিক ৯৮ শতক, লেকের দক্ষিণে স্থলসীমা ৪৩ দশমিক ২৮ শতক, লেকের পশ্চিম দক্ষিণে পতিত জমি ৫৭ শতক ও কবরস্থানের আরও ৭ শতক জমি মিলে সর্বমোট জায়গায় পরিমাণ ১১২৬ দশমিক ৩ শতক। স্থানীয়দের হিসেবে লেকে জবরদখলকৃত জমির পরিমাণ প্রায় ১৪৫ শতক। প্রতি শতক জমির দাম সর্বনিম্ন ৫ লাখ টাকা ধরা হলে ১৪৫ শতক জমির দাম পড়ে ৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা।
সরেজমিনে গেলে জলসীমা ছাড়া লেকের চারপাশে অবশিষ্ট তেমন কোন জায়গা পাওয়া যায়নি। চারিদিকে শুধু বাসা-বাড়ি, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, ছাগলের হাট ও ভ্রাম্যমান দোকানপাট দৃশ্যমান হয়। স্থানীয়রা জানান, বিভিন্ন পৌর মেয়রের আমলে নামকাওয়াস্তে লেকের উন্নয়নে হাত দেওয়া হলেও সেটি এগিয়ে যায়নি কোনদিনও। লেকের চারপাশে যত্রতত্র দোকানপাট, পাকা স্থাপনা, আধা পাকা স্থাপনা গড়ে উঠায় দূর থেকে লেকটি দৃশ্যমান হয়না। স্থানীয় ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী ও অবৈধভাবে বসবাসকারীরা যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলে রেখেছেন লেকের জলে। এতে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত। অবৈধভাবে লেক’র ভূমি ব্যবহার করে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করা হচ্ছে। পৌরসভা থেকে একটি মহল চাঁদাও নিচ্ছেন ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে।
পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর আনিছুজ্জামান বায়েছ এ প্রতিবেদককে বলেন, লেক’র সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য একেনেকে একটি প্রজেক্ট পাস হয়েছিল। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হওয়ায় এটি কোন পর্যায়ে আছে তা বলা যাচ্ছেনা। তিনি বলেন, ২০ বছর পূর্বে লেকে একটি শিশু পার্ক ছিল। পরে অনেকে জবরদখল করে ঘর-বাড়ি বানিয়েছেন। তিনি আশা ব্যক্ত করে বলেন, লেকের ম্যাপ দেখে জেলা প্রশাসককে সাথে নিয়ে জবরদখলকৃত জায়গা উদ্ধার করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, লেকের পাড়ে যে বাস টার্মিনালটি রয়েছে, সেটিও পৌরসভা ভোগ দখল করছে। কিন্তু এখন টার্মিনাল হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
মৌলভীবাজার পৌরসভার সাবেক মেয়র ফয়জুল করীম ময়ুন বলেন, আমি দায়িত্ব ছাড়ার আগে লেক সৌন্দর্য্যবর্ধণের জন্য ১শ কোটি টাকার একটা ফান্ড তৈরি হয়েছিল। ওই খাতে পরবর্তীতে কত টাকা আসছে আমার জানা নাই। ওই লেক নিয়ে একটা মামলাও রয়েছে।
মৌলভীবাজার পৌরসভা প্রশাসক মল্লিকা দে বলেন, লেকের জবরদখলের বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে বিষয়টি দেখছি।