ওসমানী বিমানবন্দর উন্নয়নকাজে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১০:২২ অপরাহ্ন
প্রকল্প পরিচালকের অস্বীকার
স্টাফ রিপোর্টার : সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। রোববার সিলেটের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে স্মারকলিপি দেন আবদুল জব্বার জলিল কল্যাণ ট্রাস্টের সভাপতি আবদুল জব্বার জলিল। স্মারকলিপিতে বিমানবন্দরের চলমান উন্নয়নকাজে ২ হাজার ১১৬ কোটি ৫০ লাখ টাকার দুর্নীতি ও অনিয়মের কথা তুলে ধরা হয়।
যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রকল্প পরিচালক মইদুর রহমান মো. মওদুদ। তিনি বলেন, তৎকালিন সময়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমেই হালনাগাদ করার জন্য নকশাকার নিয়োগ করা হয়। কাউকে বাড়তি সুযোগ-সুবিধা দিতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কোনো কাজ হয়নি।
এদিকে স্মারকলিপিতে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ও অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্ট অব বাংলাদেশ (আটাব) সিলেটের সাবেক সভাপতি আবদুল জব্বার জলিল বলেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসীদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে কাজ করে আসছেন। বিগত সরকারের আমলে ২ হাজার ১১৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ওসমানী বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো ও দেশি-বিদেশি ফ্লাইট চালুর জন্য একটি উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হয়। ২০২০ সালের ২৭ আগস্ট কাজ শুরু হয়ে ২০২৩ সালের ২৭ মের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে আরও এক বছর সময় চলে গেলেও মাত্র ২২ শতাংশ কাজ হয়েছে। প্রকল্পের ২০ শতাংশ কাজ শেষ হওয়ার পর এটি ‘ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন’-এর মানদণ্ডে হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে ধরা পড়েছে।
এছাড়াও অভিযোগে বলা হয়, প্রকল্পের টাকা লোপাটের উদ্দেশ্যেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জ্ঞাতসারে নকশায় ত্রুটি রেখেছিলেন। ফলে শুরুতেই প্রকল্পের কাজ থমকে যায়। এতে প্রকল্পে ব্যবহৃত নির্মাণসামগ্রী অযত্নে-অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে। মেয়াদ বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে অর্থ আত্মসাতের জন্যই প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা এসব অনিয়মের মধ্যে প্রথমটি হলো ‘প্রকল্প শুরুর আগেই ইকুইপমেন্ট মোবিলাইজেশন বাবদ অগ্রিম ২১২ কোটি টাকা নেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বেইজিং আরবান কনস্ট্রাকশন গ্রুপ (বিইউসিজি)। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা ২২ শতাংশ কাজ হয়েছে বললেও অভিযোগকারীর ধারণা, এখনো প্রতিষ্ঠানটি ১০০ কোটি টাকার বেশি কাজ করেনি।’ সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এখনো অগ্রিম নেওয়া টাকা ব্যয়ের হিসাব দেয়নি।
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করতে দুজন পরিচালক নিয়োগ দিলেও বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের অসহযোগিতার জন্য তাঁরা প্রকল্প থেকে সরে যেতে বাধ্য হন। ‘ষড়যন্ত্রমূলক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নকশায় ত্রুটি রেখে প্রকল্পের কাজ শুরুর একমাত্র কারণ ছিল প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে অর্থ আত্মসাৎ। এর প্রমাণও মিলেছে। প্রকল্পের ৩০ শতাংশ কাজ বাদ দিয়ে ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে ৮০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ২ হাজার ১১৬ কোটি ৫০ লাখ টাকার প্রকল্পের ব্যয় এখন ২ হাজার ৯১৬ কোটি ৫০ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে।’
স্মারকলিপিতে অভিযোগ করা হয়- ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে অতিরিক্ত সুবিধা পাইয়ে দিতে প্রকল্পের মূল নকশা থেকে তিনটি বোর্ডিং ব্রিজ, কার্গো বিল্ডিং অ্যান্ড পার্কিং এরিয়া, কার্গো অ্যানেক্স বিল্ডিং, ফায়ার ফাইটিং স্টেশন বাদ দেওয়া হয়েছে। এসব অনিয়মের সুষ্ঠু তদন্ত করে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি দ্রুত প্রকল্পের কাজ শেষ করে ওসমানী বিমানবন্দর থেকে দেশি-বিদেশি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট চালুর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়।
স্মারকলিপিতে আবদুল জব্বার জলিল বলেন, প্রবাসী-অধ্যুষিত সিলেটের অন্তত ২৫ লাখ মানুষ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাস করে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। বিশেষ করে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত প্রবাসীদের সিংহভাগই সিলেট অঞ্চলের বাসিন্দা। মাতৃভূমি ও পরিবার-পরিজনের টানে প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক প্রবাসী দেশে আসেন। তাই সিলেটের প্রবাসীদের দীর্ঘদিনের দাবি সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে যাতে বিশ্বের বিভিন্ন গন্তব্যে সরাসরি ফ্লাইট চালু হয়। বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোও ওসমানী বিমানবন্দর থেকে অপারেট করার দাবি জানিয়ে আসছে।
স্মারকলিপিতে তিনি বলেন, অতীতে বিভিন্ন সময় ওসমানী বিমানবন্দর থেকে সরাসরি ফ্লাইট চলাচল বাড়ানোর উদ্যোগ নিলেও সিভিল এভিয়েশনের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, ঢাকার কিছুসংখ্যক দুর্নীতিবাজ ট্রাভেলস এজেন্সি মালিক ও হোটেল মালিক মিলে গঠিত সিন্ডিকেট সেই উদ্যোগ সফল হতে দেয়নি। সিলেট থেকে বিদেশি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট চালু হলে সিলেটের প্রবাসীরা সরাসরি সিলেট থেকে যাতায়াত করতে পারবেন। এতে ঢাকার ট্রাভেল এজেন্সি ও হোটেল মালিকেরা সিন্ডিকেট করে অর্থ লুটপাটের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে।
এ ব্যাপারে ওসমানী বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের পরিচালক মইদুর রহমান মো. মওদুদ দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, প্রকল্পের কাজ এখনো শেষ হয়নি। তৎকালিন সময়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমেই হালনাগাদ করার জন্য নকশাকার নিয়োগ করা হয়। কাউকে বাড়তি সুযোগ-সুবিধা দিতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কোনো কাজ হয়নি। আমরা দ্রুত উন্নয়নকাজ শেষ করতে কাজ করছি। এছাড়া নকশা থেকে কোনো কিছু বাদ দেওয়ার বিষয়টিও এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
তিনি বলেন, অভিযোগকারী কিসের ভিত্তিতে অভিযোগ করেছেন তা নিজেই বলতে পারবেন। প্রকল্পের ড্রয়িং-ডিজাইন ২০১৮ সালে করা হয়েছিল। তবে কাজ শুরুর পর ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন ও বাংলাদেশ জাতীয় ভবন নির্মাণ বিধিমালার নতুন হালনাগাদ নির্দেশনা অনুযায়ী প্রকল্পের মাস্টারপ্ল্যানসহ আনুষঙ্গিক নকশা হালনাগাদ করা হয়। সেখানে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে আমাদের তেমন কিছু করার নেই।