হকৃবি’র ভিসি আওয়ামীপন্থি সায়েম, সমালোচনার ঝড় : সিলেটে বিক্ষোভ
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ অক্টোবর ২০২৪, ৮:৪২:৫২ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হকৃবি) উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) পাবলিক হেলথ অ্যান্ড এপিডেমিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ সায়েম উদ্দিন আহমেদ। মঙ্গলবার (০১ অক্টোবর) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সরকারি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উপসচিব মো. শাহীনুর ইসলাম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে তাকে এ নিয়োগ দেওয়া হয়। একই দিনে অপর আদেশে বর্তমান হকৃবির ভিসি প্রফেসর ড. মো. আব্দুল বাসেতকে অব্যাহতি দিয়ে মূলপদে যোগদানের জন্য বলা হয়।
জানা গেছে, ড. সায়েম বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিচার প্রক্রিয়া স্থগিতের দাবির প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দানকারীদের মধ্যে অন্যতম। শুধু তাই নয়, তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী স্বাধীনতার স্বপক্ষের সংগঠন ‘গণতান্ত্রিক শিক্ষক পরিষদ (গশিপ)’ মনোনীত প্যানেল থেকে ২০২২ সালে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। যদিও এর আগেও তিনি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ছিলেন। এদিকে, আওয়ামীপন্থি শিক্ষক ড. সায়েমকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ দেশে-বিদেশে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের আজীবন সদস্য অধ্যাপক ড. সৈয়দ সায়েম উদ্দিন আহম্মদকে হকৃবির উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়ায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে সিকৃবির সাদা দলের সভাপতি অধ্যাপক ড. মাহবুব ইকবাল ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোহানা কাওছার।
এছাড়াও নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন এগ্রিকালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ সিকৃবি চ্যাপ্টারের সভাপতি অধ্যাপক ড. এম রাশেদ হাসনাত ও সেক্রেটারি অধ্যাপক ড. মো মাছুদুর রহমান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সিকৃবির সমন্বয়ক টিম, ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ সিকৃবি ইউনিটের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো ছিদ্দিকুল ইসলাম ও সেক্রেটারি অধ্যাপক ড. সামিউল আহসান তালুকদার।
সিলেটে বিক্ষোভ মানববন্ধন:
আওয়ামী ফ্যাসিস্ট,গণহত্যার দোসর প্রফেসর ড. সৈয়দ সায়েম উদ্দিনকে হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হকৃবি) নতুন ভিসি হিসেবে নিয়োগ প্রদানের প্রতিবাদ জানিয়ে ও নিয়োগ বাতিলের দাবিতে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (২ অক্টোবর) সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (সিকৃবি) ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) বৈষম্য বিরোধী ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন সিকৃবির সমন্বয়ক আজিজুল হক, মো. ফয়েজ আহম্মেদ, মো. নেয়ামত উল্যাহ, প্রফেসর ড. সামিউল আহসান তালুকদার, প্রফেসর ড. মাছুদুর রহমান, প্রফেসর ড. মাহবুব ইলাহী, প্রফেসর ড. মো. ছিদ্দিকুল ইসলাম ও শাবিপ্রবির প্রফেসর ড. মো. মোজাম্মেল হক প্রমুখ।
এসময় বক্তারা বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল জয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুসের বিচার প্রক্রিয়া স্থগিতের দাবির প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দানকারী পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের দোসর সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন গণতান্ত্রিক শিক্ষক পরিষদের (গশিপ) সাবেক সভাপতি প্রফেসর ড. সৈয়দ সায়েম উদ্দিন আহম্মদ একজন কট্টর আওয়ামী সমর্থক। তিনি জুলাই -আগস্টের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র – জনতার আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। ৪ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া আওয়ামী সমর্থিত শিক্ষকদের শান্তি সমাবেশের উদ্যোক্তা ছিলেন ঐ সায়েম উদ্দিন। পতিত সরকারের আমলে সিকৃবিতে নিয়োগপ্রাপ্ত দুর্নীতিবাজ ভিসিদের ব্যবহার করে সিকৃবিতে নিয়োগ বাণিজ্য, অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির নজির স্থাপন করেন তিনি।
এ সময় তারা বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থানকারী প্রফেসর ড. সৈয়দ সায়েম উদ্দিন আহম্মদকে হকৃবির ভাইস-চ্যান্সেলর হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে যা জুলাই-আগস্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেইমানি করার সামিল। এই নিয়োগ কোন ভাবে মেনে নেয়া যায় না। তারা অবিলম্বে এই প্রজ্ঞাপন বাতিলসহ নিয়োগের পেছনে ষড়যন্ত্রকারীদের সনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ জানান, যে খুনি হাসিনা হাজার হাজার ছাত্র-জনতাকে হত্যা করে ক্ষমতা ছেড়ে দেশ থেকে পালিয়ে গেছে সেই খুনি হাসিনাকে ৪ আগষ্ট পর্যন্ত সমর্থন দিয়ে ছাত্র জনতার বিপক্ষে আন্দোলন কারী গণতান্ত্রিক শিক্ষক পরিষদের সাবেক সভাপতি সায়েম উদ্দিনকে হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিয়োগ করা জুলাই গনহত্যার শহিদদের সাথে বেঈমানীর সমতুল্য। সুতরাং কালকের মধ্যে এই নিয়োগপত্র বাতিল করতে হবে।
এছাড়াও আওয়ামী পন্থী এই শিক্ষককে ভিসি হিসেবে নিয়োগ দেওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ দেশ-বিদেশে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ক্যাম্পাসে চাউর রয়েছে, হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের বাসিন্দা আওয়ামী পরিবারের সদস্য প্রফেসর সায়েম পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং মাধবপুর ও চুনারুঘাট থেকে বিনা ভোটে নির্বাচিত ৫ আগস্টের পর ছাত্র জনতার রোষানলে থেকে বাঁচতে বিদেশে পলায়নকৃত সংসদ সদস্য ব্যরিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের নিকটাত্মীয় এবং প্রফেসর সায়েমের শ্বশুর বাড়ীর আত্মীয় হলেন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সাথে সংযুক্ত উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার। এদের মাধ্যমে তার নিয়োগ চুড়ান্ত হয়েছে বলে দাবী করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতা।