মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘ আঞ্চলিক যুদ্ধের শঙ্কা
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ অক্টোবর ২০২৪, ৯:২২:৩৭ অপরাহ্ন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে পাল্টা হামলার হুমকিতে মধ্যপ্রাচ্যে আঞ্চলিক যুদ্ধের আশঙ্কা তীব্রতর হচ্ছে। মঙ্গলবার রাতে ইরানের বিশাল মিসাইল হামলার জবাবে ইসরাইল পাল্টা আক্রমণের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও ইসরাইলকে সমর্থন জানিয়ে ইরানকে গুরুতর পরিণতির হুঁশিয়ারি দিয়েছে। ইরানও পাল্টা হুমকি দিয়ে বলেছে, ইসরাইলের কোনো আক্রমণ হলে তার জবাবে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখানো হবে।
ইসরাইল বুধবার লেবাননে হামলা পুনরায় শুরু করেছে এবং অতিরিক্ত সেনা পাঠিয়ে স্থল অভিযান চালানোর ঘোষণা দিয়েছে। এমন অবস্থায় লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে হিজবুল্লাহ বাহিনীর সাথে সংঘর্ষ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বাড়ছে আঞ্চলিক যুদ্ধের শঙ্কাও।
মঙ্গলবার ইরান ইসরাইলের ওপর প্রায় ২০০টি মিসাইল নিক্ষেপ করে। ইরানের দাবি, এটি হামাস, হিজবুল্লাহ এবং ইসলামিক রেভ্যুলশনারি গার্ডের নেতাদের হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে চালানো হয়েছে। তবে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেন, তেহরান বড় ভুল করেছে এবং এর জবাব দেওয়া হবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইরানের আক্রমণের প্রতিক্রিয়া হিসেবে ইসরাইলের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন। মার্কিন হাউস স্পিকার মাইক জনসন বলেছেন, বিশ্ব এখন ইরানের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগ দেখতে চায়। তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে জবাব দেয়ার আহ্বান জানান।
বুধবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ এই সংঘাত নিয়ে জরুরি বৈঠক আহ্বান করেছে। তবে সংঘর্ষের তীব্রতা কমার কোনো লক্ষণ নেই। দক্ষিণ লেবাননে ইসরাইলের স্থল অভিযান এবং বৈরুতে বোমাবর্ষণ চলমান রয়েছে। লেবাননের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ইউনিট জানিয়েছে, ৮ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরাইলি হামলায় এখন পর্যন্ত এক হাজার ৮৭৩ জন নিহত এবং ৯ হাজার ১৩৪ জন আহত হয়েছেন।
৯০ শতাংশ মিসাইল লক্ষ্যে আঘাত হেনেছে, আইআরজিসি: ইরানের ইসলামিক রেভলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) ইসরাইলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর দ্বিতীয় বিবৃতি জারি করেছে। বিবৃতিতে আইআরজিসি জানিয়েছে, তারা নিজস্ব তৈরি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে অধিকৃত অঞ্চলের কৌশলগত কেন্দ্রগুলো লক্ষ্যবস্তু করেছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এই অভিযানে কিছু বায়ু ও রাডার ঘাঁটি এবং প্রতিরোধের নেতাদের বিরুদ্ধে হত্যার ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনার কেন্দ্রগুলোতে আঘাত করা হয়েছে। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মেহের নিউজ এজেন্সি।
আইআরজিসি জানায়, ইসরাইল সবচেয়ে উন্নত এবং বৃহৎ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার আওতায় থাকা সত্ত্বেও ৯০% ক্ষেপণাস্ত্র সফলভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পেরেছে। আইআরজিসি এই অপারেশনকে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী বৈধ আত্মরক্ষার অধিকার হিসেবে বর্ণনা করেছে। একই সাথে শত্রুর পরবর্তী হামলা ধ্বংসাত্মকভাবে প্রতিহত করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে।স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আইআরজিসি জানায়, তারা কয়েক ডজন ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইসরাইলের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে শুরু করেছে। ইরানের তেহরান, ইসফাহান, তাবরিজ, শিরাজ, খোররমাবাদ, আরাকসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করা হয়েছে।
হিজবুল্লাহর অতর্কিত হামলায় ২ ইসরায়েলি সেনা নিহত: এদিকে লেবাননের হিজবুল্লাহর অতর্কিত হামলায় দুই ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছেন। এতে অন্তত ১৮ সেনা আহত হয়েছে। আহত ও নিহত এসব সেনা হিজবুল্লাহর অবকাঠামো ধ্বংস করতে লেবাননে প্রবেশের চেষ্টা চালিয়েছিল। বুধবার সকালে সীমান্তবর্তী শহর ওদাইসেতে হিজবুল্লাহ ইসরায়েল সেনাদের লক্ষ্য করে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল জানে লেবাননে তাদের স্থল হামলা খুবই চ্যালেঞ্জিং হবে। ফিলিস্তিনের গাজায় তারা সহজে ঢুকে পড়তে পারলেও; লেবাননের ভেতরে প্রবেশ করতে তাদের সেনাদের বেগ পেতে হবে। কারণ, হিজবুল্লাহর যোদ্ধাদের তৈরিই করা হয়েছে এমন স্থল হামলার জন্য। তারা এক্ষেত্রে বেশ প্রশিক্ষিত। এছাড়া হিজবুল্লাহর এসব যোদ্ধার সরাসরি যুদ্ধে লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা আছে। তারা সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাসার আল আসাদের হয়ে সুন্নি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে।
আল-জাজিরা জানিয়েছে, ওদাইসেতে ইসরায়েলি বাহিনীর ওপর হিজবুল্লাহ যে অতর্কিত হামলা চালিয়েছে এটিকে তাদের একটি বিজয় হিসেবে ধরা হচ্ছে। কারণ, এই হামলার পর ইসরায়েলি বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে। অথচ শহরটিতে প্রবেশের আগে সেখানে ব্যাপক কামান হামলা চালিয়েছিল তারা।