আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার শুরু
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ৯:২৩:৩৬ অপরাহ্ন
প্রথম দিনেই শেখ হাসিনা-কাদেরের বিরুদ্ধে পরোয়ানা
জালালাবাদ রিপোর্ট : ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে চলা হত্যাকান্ডে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজ শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে বিচারকাজ শুরু হয়।ট্রাইব্যুনালের দুই সদস্য বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মহিতুল হক এনাম চৌধুরী এসময় উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের শিকার কিছু পরিবারও বিচারের দাবিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসেছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন। এরপর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এই আন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তাঁর সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ও দলের নেতাদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনে হত্যার অভিযোগ জমা পড়েছে। এদিকে, দ্রুততম সময়ে বিতর্কমুক্ত একটি বিচারকাজ সম্পন্ন করতে আশাবাদী ট্রাইব্যুনালের নতুন প্রসিকিউশন টিম।
প্রধান প্রসিকিউটর আডভোকেট তাজুল ইসলামের নেতৃত্বে প্রথমদিনে শেখ হাসিনাসহ অনেকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চান ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিম।আবেদনের প্রেক্ষিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তিনি ছাড়াও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। ১৮ নভেম্বরের মধ্যে শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করে এই ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
যাদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করা হয়েছে তাঁদের মধ্যে রয়েছেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনি, সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ প্রমুখ। পরোয়ানা জারির আবেদনের সময় আওয়ামী লীগ সরকারের আমল এবং জুলাই-আগস্টে তাঁদের ভূমিকা তুলে ধরা হয় ।
এই অপরাধগুলো বিস্তৃত মাত্রায়, সারা বাংলাদেশ জুড়ে সংঘটিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর আইনজীবী মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আদালতের কাছে আবেদন জানিয়েছিলাম এই অপরাধের আসামি যাঁরা, তাঁরা অসম্ভব রকমের প্রভাবশালী, তাঁদের গ্রেপ্তার করা না হলে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করাটা অসম্ভব কঠিন। তাঁদের ভয়ে সাধারণ মানুষ, এমনকি শহীদ পরিবারের সদস্যরা কথা বলতে সাহসী হচ্ছেন না। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আমরা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন জানিয়েছিলাম।
ট্রাইব্যুনাল আবেদন মঞ্জুর করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান তাজুল ইসলাম। ১৮ নভেম্বরের মধ্যে শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করে এই ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
দ্বিতীয় আরেকটি আবেদনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং সাবেক মন্ত্রিপরিষদের সদস্যসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন জানানো হয়েছে। সেটিও মঞ্জুর করেছেন ট্রাইব্যুনাল।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর বলেন, এই অপরাধীদের অনেকে এখনো রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন। সে কারণে তাঁদের সবার নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না বলে জানান তিনি।
আইনজ্ঞদের অভিমত, আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন- ১৯৭৩-এর ২৬টি ধারার ৩ নম্বর জুরিসডিকশনে অপরাধের যে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, যেগুলোর সাথে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের নির্যাতনের মিল রয়েছে।
বিশ্ব গণমাধ্যমে হাসিনার গ্রেফতারি পরোয়ানার খবর :
ক্ষমতাচ্যুত সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানার বিষয়টি বিশ্ব গণমাধ্যমে খুবই গুরুত্বের সাথে স্থান পেয়েছে।বার্তাসংস্থা রয়টার্স তার শিরোনামে লিখেছে, ‘নির্বাসিত সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অপরাধ ট্রাইব্যুনালের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি’। বার্তাসংস্থাটি বলেছে, চলতি বছরের শুরুতে শুরু হওয়া সহিংস আন্দোলনে গণহত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বৃহস্পতিবার গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি শিরোনাম করেছে, ‘শেখ হাসিনা : সাবেক নেতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি।’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গণআন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের একটি আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে ওই পরোয়ানা জারি করা হয়।
আন্তর্জাতিক আরো নানা সংবাদমাধ্যমগুলোতেও কাছাকাছি শিরোনাম করা হয়েছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জারি করা পরোয়ানা নিয়ে একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি প্রতিবেদনে বলেছে, হাসিনা সরকার ২০১০ সালে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিচার করতে এই আদালত প্রতিষ্ঠা করেছিল। এটির বিচারকার্য নিয়ে জাতিসঙ্ঘসহ অন্যরা প্রশ্ন তুলেছিল। অভিযোগ ছিল, বিরোধী দলীয় সদস্যদের হত্যায় এই আদালত ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া পাকিস্তানের দ্য ডন, মধ্যপ্রাচ্যের গালফ নিউজ, খালিজ টাইমসেও হাসিনার বিরুদ্ধে জারি হওয়া পরোয়ানা নিয়ে প্রতিবেদন করা হয়েছে।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, শেখ হাসিনা ভারতেই অবস্থান করছেন। সম্প্রতি জানা গেছে, হাসিনাকে ট্রাভেল ডকুমেন্ট দিয়েছে ভারত। যা দিয়ে তিনি চাইলে অন্য দেশে যেতে পারবেন। কিন্তু তিনি যদি ভারতে থেকে থাকেন, তাহলে বাংলাদেশের সাথে থাকা প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী তাকে ফেরত দিতে হবে।