চাঁদাবাজির হাতবদল : আগে টাকা তুলতেন ছোট ভাই এখন তুলেন বড় ভাই
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ৮:৩১:০৬ অপরাহ্ন
আব্দুল জলিল, কোম্পানীগঞ্জ: দীর্ঘ প্রায় ৫ বছর থেকে পুলিশের নামে ভারতীয় পণ্য থেকে চাঁদা তুলতেন রাসেল আহমদ। ৫ আগষ্টের পর পট পরিবর্তন হওয়ায় এখন তারই আপন বড় ভাই মুসতাকিম আহমদ ফরহাদ তুলছেন সেই চাঁদার টাকা। এ যেন চাঁদাবাজির হাতবদল। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উত্তর রনিখাই ইউনিয়নে এমন ঘটনা ঘটছে। তারা চিনির বস্তা থেকে ১’শ টাকা ও বিড়ির প্রতি বেল্ট থেকে আড়াইশ টাকা নিয়ে থাকেন। দিন শেষে তার প্রতিনিধিরা টাকা নিয়ে মায়ার বাজারের একটি অফিসে জমায়েত হন। পরে সেখান থেকে বিভিন্ন জায়গায় ভাগবাটোয়ারা করেন তিনি।
স্থানীয় কয়েকজন চিনি ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন যাবত চিনি ফুচকা সহ বিভিন্ন ভারতীয় পণ্য থেকে পুলিশের নামে চাঁদা আদায় করেছেন রাসেল আহমদ। তিনি আওয়ামীলীগের রাজনীতি করেন। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে প্রভাব খাটিয়ে চাঁদা আদায় করলেও কেউ কিছু বলার সাহস পায়নি। আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর তিনি দায়িত্ব দিয়ে দেন তারই আপন বড় ভাই ফরহাদকে। ফরহাদ যুবদলের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন। স্থানীয় যুবদলের কয়েকজন নেতা মিলে পুলিশের নামে টাকা তোলার লাইন নিলেও সবকিছু পরিচালনা করছেন মুসতাকিম আহমদ ফরহাদ। তার নেতৃত্বে কালাইরাগ, বরম সিদ্দিপুর, মাঝেরগাঁও, উৎমা ও তুরং পর্যন্ত সীমান্ত দিয়ে আসা ভারতীয় পণ্য থেকে চাঁদা আদায় করা হয়। আর এই চাঁদা আদায়ের দায়িত্বেও রয়েছেন ফরহাদের পছন্দের মানুষজন। বরম সিদ্দিপুর ও মাঝেরগাঁও এলাকায় মাঠ পর্যায়ে থেকে চাঁদা তুলেন আলা উদ্দিন। তিনি স্বীকারোক্তি দিয়ে বলেন, আমাকে ৫’শ টাকা রোজে তারা নিয়েছিল। আমার পরিবারের পক্ষ থেকে নিষেধ দেওয়া হয়েছে যাতে আমি আর এসবে না যাই।
উৎমা ও তুরং এলাকায় সেই চাঁদার টাকা তুলেন কুতুব উদ্দিন। তিনি চিনির বস্তা ছাড়াও ভারতীয় নাসির বিড়ি থেকে পুলিশের নামে চাঁদা তুলেন। চিনির বস্তা থেকে ১’শ টাকা করে নেন আর বিড়ির বান্ডিল থেকে নেন আড়াইশ টাকা করে। অন্য কোথাও মাদকের ওপেন লাইন না থাকলেও উৎমা ও তুরং এলাকায় তা রয়েছে। কুতুব উদ্দিন এ বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন আমি কোন টাকা নেই না। মাদক কারবারীদের কাছ থেকে তিনি কিসের টাকা নেন জানতে চাইলে কথা না বলে ফোন কেটে দেন।
উল্লেখ্য চোরাচালানের স্বর্গরাজ্য হিসেবে পরিচিত উপজেলার উত্তর রনিখাই ইউনিয়ন। প্রতিদিন কয়েক লক্ষ টাকার ভারতীয় পণ্য বাংলাদেশে প্রবেশ করে। মাদক চিনি ফুচকা সহ সব ধরনের পণ্যই আসছে দেশে। এসব পণ্য থেকে সরকারি ট্যাক্স না দিলেও দিতে হয় পুলিশের নামে চাঁদা।
এ বিষয়ে মুসতাকিম আহমদ ফরহাদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এসবের সাথে জড়িত না। কেউ আমার নাম ব্যবহার করে টাকা তুললে সেটা আমি দেখব। কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি উজায়ের আল মাহমুদ আদনান বলেন, চোরাচালানের বিরুদ্ধে আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে কেউ টাকা তুললে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।