বড়লেখায় দলীয় প্রভাবে কাজ না করেই বরাদ্দ লুটপাটের অভিযোগ
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ অক্টোবর ২০২৪, ৭:০৬:৪২ অপরাহ্ন
বড়লেখা প্রতিনিধি : বড়লেখায় আওয়ামী লীগের দলীয় পদপদবী আর সাবেক মন্ত্রী শাহাব উদ্দিনের দাপটে আওয়ামী লীগ নেতারা টিআর, কাবিখা ও কাবিটা প্রকল্পের কাজ না করেই বরাদ্দের অর্থ লুটপাট করার অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার দাবি এসব নেতারা ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে কাজ না করা সত্তেও বরাদ্দ ভাগিয়ে নিয়েছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ টিআর কর্মসূচির আওতায় স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক পরিবেশমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন তালিমপুর ইউনিয়নের টেকাহালী উচ্চ বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেন। ওই বিদ্যালয় কমিটির সভাপতি (ইতিপূর্বে বাতিল ঘোষিত) ও উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতি নাজমুল আবেদীন নিজে প্রকল্পের সভাপতি, প্রধান শিক্ষক প্রণয় রঞ্জন দাসকে সদস্য সচিব করে পাঁচ সদস্যের প্রকল্প কমিটি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসে জমা দেন। ৩০ জুনের মধ্যে কাজ সম্পন্নের শর্তে যুবলীগ নেতা নাজমুল আবেদীন প্রকল্পের প্রথম কিস্তির এক লাখ টাকা গত ২৫ মে উত্তোলন করেন। সরেজমিনে জানা গেছে, যুবলীগ নেতা নাজমুল আবেদীন বরাদ্দের প্রথম কিস্তির এক লাখ টাকা উত্তোলন করলেও শহীদ মিনার নির্মাণে একটি টাকাও দেননি। প্রধান শিক্ষক প্রণয় রঞ্জন দাস অভিযোগ করেন, প্রকল্প কমিটিতে তিনি স্বাক্ষর দেননি, সরকারি বরাদ্দের বিষয়টিও জানেন না। তার স্বাক্ষর জাল করে যুবলীগ নেতা নাজমুল আবেদীন বরাদ্দ উত্তোলন করেছেন। বিদ্যালয়ের নিজম্ব ফান্ডে শহীদ মিনার নির্মাণের কাজ চলছে। তবে, অর্থের অভাবে এখনও সমাপ্ত করা যায়নি।
২০২২-২০২৩ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা) কর্মসূচির আওতায় প্রথম পর্যায়ে বড়লেখা মোহাম্মদীয়া ফাযিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার মাঠ ভরাটের জন্য ১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেন সাবেক পরিবেশমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন। অথচ এই মাদ্রাসায় ভরাটের মতো কোনো মাঠই নেই। সাবেক পরিবেশমন্ত্রীর ভাগ্নে, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সোয়েব আহমদ সভাপতি হয়ে পাঁচ সদস্যের একটি প্রকল্প কমিটি পিআইও অফিসে জমা দিয়ে কোনো কাজ ছাড়াই ২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর প্রকল্পের প্রথম কিস্তি ও ২০২৩ সালের ১০ জানুয়ারি প্রকল্পের দ্বিতীয় কিস্তি উত্তোলন করেন।
এ ব্যাপারে মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আলিম উদ্দিন জানান, ২০২০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি এই মাদ্রাসার দায়িত্বে রয়েছেন। তার দায়িত্বকালিন অদ্যাবধি এই মাদ্রাসায় এমপি, মন্ত্রী কিংবা উপজেলা চেয়ারম্যানের কোনো সরকারি বরাদ্দ পাননি। মাঠ ভরাটে প্রকল্পর দেওয়ার কথা শোনে তিনি বলেন, মাদ্রাসায় ভরাট করার মতো কোনো মাঠই নেই।
২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে বড়লেখা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে মাটি ভরাট ও বাউন্ডারি নির্মাণের জন্য মন্ত্রীর নির্বাচনি বরাদ্দ মিলে ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা সোয়েব আহমদ নিজে সভাপতি, প্রধান শিক্ষক অধীর চন্দ্র বিশ্বাসকে সদস্য সচিব করে পাঁচ সদস্যের প্রকল্প কমিটি পিআইও অফিসে জমা দিয়ে গত বছরের ৩ অক্টোবর প্রকল্পের অর্থের প্রথম কিস্তি, ১৫ অক্টোবর দ্বিতীয় কিস্তি, ২৯ অক্টোবর তৃতীয় কিস্তি এবং ১২ নভেম্বর চতুর্থ কিস্তি উত্তোলন করেন। প্রধান শিক্ষক অধীর চন্দ্র বিশ্বাস অভিযোগ করেন, প্রকল্প কমিটির পেপারে তিনি স্বাক্ষর দিলেও মাঠ ভরাট ও বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণের কোনো অর্থ তিনি বা বিদ্যালয় পায়নি। যার কারণে সংশ্লিষ্ট কাজও করা হয়নি।
২০২২-২০২৩ অর্থবছরে (প্রথম পর্যায় সাধারণ) দাসেরবাজার কলেজের শহীদ মিনারের স্থানে মাটি ভরাটের জন্য টিআর প্রকল্পে ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ মিলে। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও কলেজ গভর্নিংবডির সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা সোয়েব আহমদ নিজে সভাপতি, বিষ্ণু চক্রবর্তীকে সদস্য সচিব করে পাঁচ সদস্যের প্রকল্প কমিটি পিআইও অফিসে জমা দেন। পরে গত বছরের ৮ জানুয়ারি প্রকল্পের প্রথম কিস্তি ও ২৩ জানুয়ারি দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ উত্তোলন করেন সোয়েব আহমদ। কলেজের অধ্যক্ষ সুরঞ্জিত দেবনাথ অভিযোগ করেন, মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের অর্থায়নে কলেজের শহীদ মিনার নির্মিত হয়েছে। নিচু স্থান ভরাটের প্রয়োজন দেখা দিলেও কোনো সরকারি বরাদ্দ পাননি। প্রকল্প কমিটিতেও তিনি বা তার কলেজের কোনো শিক্ষক-কর্মচারির সাক্ষর নেওয়া হয়নি। কলেজের নিজস্ব ফান্ড থেকে শহীদ মিনারের সামনের নিচু স্থান ভরাট করা হয়েছে।
৫ আগষ্টের পর থেকে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা সোয়েব আহমদ এবং যুবলীগ নেতা মো. নাজমুল আবেদীনকে এলাকায় পাওয়া যায়নি। তাদের মোবাইল ফোনও বন্ধ। যার কারণে তাদের বক্তব্য নেওয়া যায়নি।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, কোনো প্রকল্পে সাবেক মন্ত্রী ও উপজেলা চেয়ারম্যান সম্পৃক্ত থাকলে নানা কারণে ওই প্রকল্পের অর্থ ছাড় দিতে বাধ্য হয়েছেন। টেকাহালী উচ্চ বিদ্যালয়ের শহীদ মিনার নির্মাণ কাজের ছবি দেখিয়ে প্রকল্প কমিটির সভাপতি নাজমুল আবেদীন প্রথম কিস্তির বরাদ্দ নিয়েছেন। বিদ্যালয়ে কোনো অর্থ না দেওয়ার খবর জানার পরই দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ আটকে রেখেছেন।