দুর্ভোগের অপর নাম সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ অক্টোবর ২০২৪, ৮:২৫:৪০ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট: কথা ছিল সিলেট থেকে ঢাকা সাড়ে ৩ ঘণ্টায় পৌঁছে যাবেন সিলেটবাসী। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ছয় লেনের তোড়জোড় শুরু হলে এই স্বপ্ন সবার মনে দানা বাঁধতে শুরু করে। কিন্তু সেই সাড়ে তিন ঘণ্টার পথ এখন আট ঘণ্টায়ও ফুরায় না। এক সময় যে পথে সাড়ে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টায় ঢাকা পৌঁছা যেত সেই পথে এখন মাঝেমধ্যে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১০ থেকে ১২ ঘণ্টায়।
স্থানে স্থানে খানাখন্দ, ভাঙাচোরা রাস্তা সব মিলিয়ে সিলেট থেকে ঢাকাগামীদের জন্য এই মহাসড়ক এখন এক মহাদুর্ভোগের নাম। ঢাকা থেকে সিলেটগামী দিকে রাস্তার অবস্থা কিছুটা ভালো হলেও সিলেট থেকে ঢাকা দিকে যেতে মাজার হাড় নড়বড়ে অবস্থা বলে জানান অনেক যাত্রী। মূলত সিলেট থেকে অতিরিক্ত পাথর ও বালি বোঝাই ট্রাকের জন্য এই অবস্থা। ঢাকা থেকে বড়ো বড়ো ট্রাক মাল নিতে খালি আসে রাস্তায় চাপ পড়ে কম কিন্তু সিলেট থেকে যখন মালামাল বোঝাই করে রওয়ানা দেয় তখন এসব ট্রাকের অতিরিক্ত চাপে অনেক জায়গায় রাস্তা মারাত্মকভাবে দেবে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এসব স্থানে চালকরা ডানদিকে গাড়ি নিয়ে যেতে চেষ্টা করেন। ফলে প্রায়ই বিপরীত দিক থেকে দ্রুত গতিতে আসার গাড়ির জন্য দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকে। এদিকে ছয় লেনের জন্য নতুন করে নির্মাণ কাজ চলায় হচ্ছে না সংস্কার কাজও। শুধু যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুতেই সংস্কার সীমাবদ্ধ রাখতে হচ্ছে বলে সওজ সূত্রে জানা গেছে।
অনেকদিন থেকে এই মহাসড়কের যাত্রীরা মারাত্মক দুর্ভোগ পোহালেও কাজে গতি আসছে না। সড়ক ও জনপথ (সওজ) কর্মকর্তারা বলছেন, ছয়লেনের কাজ চলায় তারা ভাঙাচোরা মহাসড়ক মেরামতে খুব বেশি অর্থ ব্যয় করতে রাজি নন। কোনমতে জোড়াতালি দিয়ে সংস্কার চালিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছেন।
সওজ সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সিলেট-ঢাকা ৬ লেন মহাসড়ক প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়। এই প্রকল্পের আওতায় নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর থেকে সিলেট পর্যন্ত ২০৯ কিলোমিটার সড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরণ সম্প্রসারণ এবং সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের ৫৬ দশমিক ১৬ কিলোমিটার এলাকা চার লেনে উন্নীতকরণ করার কথা।এর মধ্যে সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক প্রকল্পের মেয়াদ ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রকল্পের প্রায় চার বছর চলে গেলেও এখন পর্যন্ত প্রকল্পের এক চতুর্থাংশ কাজও সম্পন্ন হয়নি। মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে জমি অধিগ্রহণ জটিলতাও রয়েছে।
মহাসড়কটির বিভিন্ন স্থানে একপাশ বন্ধ রেখে সম্প্রসারণ কাজ চলছে। বেশ কয়েকটি স্থানে চলছে সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ কাজ। নির্মাণ কাজের কারণে সড়ক সরু হয়ে যাওয়ায় প্রতিদিন সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজটের। এছাড়া মহাসড়কের সিলেট বিভাগ অংশের বিভিন্ন স্থানে নির্মাণ কাজ ছাড়াও ভোগান্তি বাড়িয়েছে মহাসড়কের খানাখন্দ। বিভিন্ন স্থানে সড়ক দেবে গেছে, কোথাও তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্তের। আবার কোথাও পিচ সরে গিয়ে নিচের পাথর বের হয়ে এসেছে। এসব কারণে যানবাহনের গতি কমে আসায় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। বাড়ছে দুর্ঘটনার সংখ্যাও।
খবর নিয়ে জানা গেছে মহাসড়কের সিলেট অংশের হবিগঞ্জের মাধবপুর থেকে অলিপুর পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার সড়ক এবং সেতু ও কালভার্ট সম্প্রসারণ কাজ চলছে। সিলেটের ওসমানীনগর, বালাগঞ্জ ও দক্ষিণ সুরমার কয়েকটি স্থানে সড়ক সম্প্রসারণের কাজ চলছে। কিন্তু কাজে ধীরগতি থাকায় দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না যাত্রীরা।
মহাসড়কের সিলেট অংশের শতাধিক স্থানে খানাখন্দ ও ভাঙা থাকায় অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করতে হচ্ছে যানবাহনকে। সড়ক বেহাল হওয়ায় একদিকে যেমনি গতি কমিয়ে যানবাহন চলাচল করতে হচ্ছে, তেমনি বিভিন্ন স্থানে যানজটে বসে থাকতে হচ্ছে ঘন্টার পর ঘন্টা।
চালকরা জানান, আগে সিলেট থেকে ঢাকায় যেতে বা আসতে ৫-৬ ঘন্টা সময় লাগতো। মহাসড়কের অবস্থা ছিল ভালো। কিন্তু ছয়লেনের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে মহাসড়কের সংস্কার কাজ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। তাই একদিকে সম্প্রসারণ কাজের জন্য ভোগান্তি, অন্যদিকে ভাঙাচোরা মহাসড়কের কারণে এখন ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাতে হচ্ছে। একেক স্থানে ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটে বসে থাকতে হয়। তাই এখন সিলেট-ঢাকা যাতায়াতে আগের চেয়ে দ্বিগুণ সময় লাগছে।
এদিকে, মহাসড়কজুড়ে খানাখন্দ থাকলেও সওজ সংস্কার কাজে খুব বেশি জোর দিচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে সওজ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আমির হোসেন জানান, মহাসড়কটি নতুন করে নির্মাণ হচ্ছে। দুই লেনের মহাসড়কটি ছয় লেন হচ্ছে। তাই পুরনো সড়কে খুব বেশি ব্যয় করা হচ্ছে না। যানবাহান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে যতটুকু সংস্কার প্রয়োজন কেবল ততটুকু করা হচ্ছে।