সালমান পরিবারের নথি তলবে ৭০ সংস্থায় চিঠি

জালালাবাদ ডেস্ক: সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা ও বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান ও তার পরিবারের অন্য সদস্যদের মালিকানাধীন ১৭ প্রতিষ্ঠানের ঋণসহ সংশ্লিষ্ট নথিপত্র তলব করে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ গ্রহণপূর্বক আত্মসাতসহ হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ আছে।
মঙ্গলবার দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে দুদক উপ-পরিচালক ও অনুসন্ধান টিম প্রধান মো. মনজুর আলম এ তলবি চিঠি দিয়েছেন বলে জানা গেছে। চিঠিতে ৬৩টি সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, রাজউক, গণপূর্ত এবং রেজিস্ট্রারসহ বিভিন্ন দপ্তরে পৃথক পৃথক চিঠিতে নথিপত্র তলব করা হয়েছে। চার কর্মদিবসের মধ্যে পাঠানোর অনুরোধ করা হয়েছে চিঠিতে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা ও চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, তার ছেলে সৈয়দা রুবাবা রহমান ও আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমানের ব্যক্তিগত নথিপত্র ও বেক্সিমকো এর সহযোগী ১৭ প্রতিষ্ঠান অ্যাডভেঞ্চার গার্মেন্টস লিমিটেড, অটাম লুপ অ্যাপারেলস লিমিটেড, বেক্সটেক্স গার্মেন্টস লিমিটেড, অ্যাপোলো অ্যাপারেলস লিমিটেড, কসমোপলিটান অ্যাপারেলস লিমিটেড, কোজি অ্যাপারেলস লিমিটেড, এসেস ফ্যাশন লিমিটেড, ইন্টারন্যাশনাল নিটওয়্যার অ্যান্ড অ্যাপারেলস লিমিটেড, মিডওয়েস্ট গার্মেন্টেস লিমিটেড, পিয়ারলেস গার্মেন্টস লিমিটেড, পিঙ্ক মেকার গার্মেন্টস লিমিটেড, প্ল্যাটিনাম গার্মেন্টস লিমিটেড, কাঁচপুর অ্যাপারেলস লিমিটেড, স্কাইলেট অ্যাপারেলস লিমিটেড, স্প্রিংফুল অ্যাপারেলস লিমিটেড, আরবান ফ্যাশন লিমিটেড ও উইন্টার স্প্রিন্ট গার্মেন্টস লিমিটেডের নিজ ও যৌথ নামে ব্যাংক হিসাব,, ডিপিএস, সঞ্চয়পত্র, ঋণ ক্রেডিট কার্ড ইত্যাদি নথিপত্র পাঠাতে হবে।
এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব খোলার ফর্ম, কেওয়াইসি ফর্ম, টিপি এবং হিসাব খোলার পর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত হিসাব বিবরণী, ঋণ হিসাব সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়েছে তলবি চিঠিতে।
এর আগে সালমান এফ রহমান এবং তার পরিবারের অন্য সদস্যদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ সংক্রান্ত যাবতীয় নথিপত্র তলব করে গত ২৩ সেপ্টেম্বর ৮ ব্যাংককে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। এর কিছু নথিপত্র দুদকে এসেছে বলে জানা গেছে।
ব্যাংকিং খাতে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি আর লুটপাটের অভিযোগে সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে গত ২২ আগস্ট অনুসন্ধান শুরুর সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। অভিযোগ রয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা ও বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান ও অন্যদের বিরুদ্ধে শেয়ারবাজারে জালিয়াতি, প্লেসমেন্ট শেয়ার কারসাজি ও প্রতারণার মাধ্যমে শেয়ারহোল্ডারদের হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করা হয়। এছাড়া অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ গ্রহণপূর্বক আত্মসাতসহ হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, গত ৩১ বছরে শেয়ারবাজারের প্রত্যেকটি কেলেঙ্কারিতে সালমান এফ রহমান জড়িত। গত ৩ বছরে তিনি দৃশ্যমানভাবেই বাজার থেকে নিয়েছেন ৬ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। আর অদৃশ্যভাবে হাতিয়ে নিয়েছেন ২০ হাজার কোটি টাকা। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বেপরোয়া হয়ে ওঠেন সালমান এফ রহমান। শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক, ব্যবসায়ী নেতার পর ২০১৮ সালে এমপি ও টানা দুইবার প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হন তিনি। হাজারো ব্যবসায়ীকে পথে বসানো শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির এক অবিচ্ছেদ্য নাম সালমান এফ রহমান।
এ ছাড়া সালমান এফ রহমান বিভিন্ন কোম্পানির প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন বলেও প্রমাণ পায় সেই কমিটি। এসব অনিয়মের সঙ্গে সালমান এফ রহমানসহ আরও কয়েকজনের নামে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।