মৌলভীবাজারে পাউবোর জলাশয় ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণের পাঁয়তারা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ৫:৫৬:০০ অপরাহ্ন
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রায় ৪ কেয়ার জলাশয় ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করছে একটি মহল। ভরাট করা ওই জমির মূল্য প্রায় ৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এদিকে, জলাশয় ভরাট করায় পাউবো জমি সার্ভে করে ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে জানিয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার কুশিয়ারা নদী তীরবর্তী শত বছর বয়সী কালারবাজারে পাউবো’র জলাশয় ভরাট করে রাখা হয়েছে প্রায় ৪ কেয়ার জমি। স্থানীয় ও নদীর ওপারের বালাগঞ্জ উপজেলার প্রায় ৫ ব্যক্তি এসব জলাশয় ভরাট করেছেন এমনটা জানিয়েছেন স্থানীয়রা। স্থানীয়রা আরও জানান, বাজারের জমি এখন অনেক মূল্যবান। এখানে প্রতি শতক ভূমি মূল্য ৪ লাখ টাকা ধরা হলে ৪ কেয়ার জমির দাম পড়ে প্রায় ৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
কাউয়াদিঘী হাওরে উন্নত কৃষি ব্যবস্থা বাড়াতে ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সর্ব-বৃহত্তম সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা বিষয়ক এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু করা হয়। এ প্রকল্পের মাধ্যমে মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর উপজেলার ২২ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা প্রদান করতে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের রক্ষনাবেক্ষণে ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের ব্যবস্থাপনায় প্রকল্পটির কাজ শুরু হয় ১৯৭৫-৭৬ অর্থবছরে এবং এটি সমাপ্ত হয় ১৯৮২-৮৩ অর্থবছরে। প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হলদিগুল হয়ে কালারবাজার-খেয়াঘাটবাজার থেকে মৌলভীবাজার শহরের চাঁদনীঘাট এলাকা পর্যন্ত ৪৪ কিলোমিটার হাওর বেষ্টিত ও নদীর কিনারায় বাঁধ নির্মাণ করা হয়। মূলত কুশিয়ারা ও মনূ নদের জলের কবল থেকে কাউয়াদিঘী হাওর রক্ষাসহ মনূ ব্যারেজ দিয়ে শুস্ক মৌসুমে পানি সরবরাহ করতে প্রায় ১শ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করে পাউবো। ওই সময়ে সাধারণ জনগণের কাছ থেকে ভূমি অধিগ্রহণ করে কালারবাজারসহ অন্যান্য জলাশয় থেকে মাটি উত্তোলন করে ৪৪ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এখন পরিত্যক্ত এসব জলাশয় দিনদিন বেদখলে যাচ্ছে।
জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কালারবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক এক নেতা ও বর্তমান ব্যবসায়ী বলেন, আমরা জানি এই জলাশয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের, কিন্তু যারা মাটি ভরাট করেছেন তারা কেন করিয়েছেন তা জানি না।
উত্তরভাগ ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য ও বাজারের ব্যবসায়ী মজনুর রহমান বলেন, বাজারে বালু ভরাটকারীগণ কিভাবে বন্দোবস্ত এনেছেন ও কিভাবে ভরাট করিয়েছেন তা আমরা জানি না। এটি কি বন্দোবস্ত নাকি তাদের নিজেদের জলাশয় তাও আমার জানা নাই।
জলাশয় ভরাটকারী নদীর ওপারের বালাগঞ্জ উপজেলার ডেকাপুর গ্রামের বাসিন্দা ও কালারবাজারের ব্যবসায়ী সাদ্দেক মিয়া বলেন, ‘আমি সঠিক রয়েছি। তিনি বলেন, আইনী প্রক্রিয়ায় আজ থেকে ২৫ বছর পূর্বে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে থেকে জলাশয় এনে এখন মাটি ভরাট করেছি।’
এদিকে, যত্রতত্র স্থাপনা নির্মিত হলে পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতিসহ সড়কে যানজট বাড়বে বলে দাবী করেছেন পরিবেশবিদরা। বাংলাদেশ পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন’র (বাপা) জাতীয় পরিষদ’র সদস্য আ.স.ম সালেহ সোহেল বলেন, অবৈধভাবে যারা পাউবোর জলাশয় দখল করেছেন, তদন্ত সাপেক্ষে তাদের আইনের আওতায় আনা হউক। তিনি বলেন, যত্রতত্র জমিদখল করে স্থাপনা নির্মাণ করা হলে পরিবেশ ও প্রকৃতির মারাত্মক সমস্যা হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের রাজনগর উপ-সহকারি প্রকৌশলী আল আমিন বলেন, বহু আগে ‘জমির শ্রেণীর পরিবর্তন করা যাবে না’ এমন শর্তে মাত্র ৩ বছরের জন্য জলাশয় বন্দোবস্ত দেওয়া হতো। পরবর্তীতে ২০১৪ সাল থেকে এই বন্দোবস্ত দেওয়া বন্ধ করা হয়। তিনি বলেন, ৯৯ বছরের জন্য পাউবো’র কাছ থেকে বন্দোবস্ত এনেছি বলে যারা বলেন তাদের প্রমাণাদী দেখাতে বললে আর দেখাতে পারেন না।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহি প্রকৌশলী মোঃ জাবেদ ইকবাল বলেন, কালারবাজারে আমাদের জলাশয় ভরাট করা হচ্ছে এমন খবর পেয়ে সরেজমিনে আমাদের লোকজন পাঠিয়েছি। তিনি বলেন, এখানে জলাশয় আমাদের আছে, তাদের ও থাকতে পারে। আমরা জমি সার্ভে করে আমাদের ভূমি বের করে ‘ডিমাক্রেশন’সহ ভরাটকারীদের চিঠি দেবো। যাতে তাদের ভরাটকৃত মালামাল নিয়ে যাওয়া হয়। এই চিঠির অনুলিপি জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে আমরা প্রেরণ করে আইনী প্রক্রিয়ায় যাবো।