রাষ্ট্রপতির থাকা না থাকা প্রশ্নে অনিশ্চয়তা : ‘রাজনৈতিক ঐকমত্যের’ অপেক্ষায় সরকার
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১০:০৮ অপরাহ্ন

জালালাবাদ রিপোর্ট: রাষ্ট্রপতির পদচ্যুতি কিংবা থাকা না থাকা প্রশ্নে এখনো অনিশ্চয়তা কাটছেনা। এ নিয়ে উত্তপ্ত রাজনীতির মাঠ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র অন্দোলনের দাবির সাথে জামায়াত নৈতিকভাবে একমত পোষণ করেছে। অন্যান্য দলও অনেকটা একমত পোষণ করলেও নেতিবাচক বিএনপি। ওদিকে, রাষ্ট্রপতির অপসারণে ‘রাজনৈতিক ঐকমত্যের’ অপেক্ষায় সরকার।
পদত্যাগ পত্র ইস্যুতে বিতর্ক ও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসা রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত কী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে- এ নিয়েই কৌতূহল কাটছেইনা দেশে।
গত শনিবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির ৯ নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপি নেতারা। ওই বৈঠকে রাষ্ট্রপতির বিষয়ে তারা পরে সিদ্ধান্ত দিবেন বলে জানান।
একই দিন জামায়াত নেতৃবৃন্দের সাথেও বৈঠক করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির ৯ নেতা। বৈঠক শেষে সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ জানান, জামায়াত তাদের জায়গা থেকে তারা একমত প্রকাশ করেছে। তারা বলেছেন, নৈতিক জায়গা থেকে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের তার পদে থাকার কোন ধরনের গ্রহণযোগ্যতা নেই।
বিএনপি জামায়াত ছাড়াও ইসলামী আন্দোলনসহ আরো কিছু ছোট দলের সাথে বৈঠক করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির ৯ নেতা। বৈঠক শেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, মূলত তিনটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি, প্রথম প্রসকেড রিপাবলিক অব প্রোক্লেমেশন, এটি আমরা কে কীভাবে ঘোষণা দেবো এবং কীভাবে করা যায় এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। দ্বিতীয় হলো : প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিনের অপসারণ। তার অপসারণটা খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে আমরা কীভাবে করতে পারি।
রাষ্ট্রপতির অপসারণ প্রশ্নে যখন সর্বত্র কৌতুহল তখন এ নিয়ে গতকাল রোববার কথা বলেছেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি রাষ্ট্রপতির পদচ্যুতির প্রশ্নে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে রাজনৈতিক ঐকমত্য হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, এটা একটা বড় সিদ্ধান্ত। এটাতে আমাদের যেমন তাড়াহুড়ো করার সুযোগ নেই, তেমনই অতিরিক্ত বিলম্ব করার সুযোগ নেই। রাজনৈতিক ঐকমত্য যেহেতু গড়ার চেষ্টা করা হচ্ছে, ওইটা পর্যন্ত আমাদেরকে অপেক্ষা করতে হবে।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, রাষ্ট্রপতির বিষয়টা এমন- এখানে গোপনে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ নেই। যখন একটা সিদ্ধান্ত হবে, সেটা হবে প্রকাশ্যে। এখন রাজনৈতিক ঐক্য যত তাড়াতাড়ি হবে, তার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে। সিদ্ধান্ত কী হবে তা আমি বলতে পারব না। কারণ রাজনৈতিক ঐক্য কোন দিকে যাবে, মতামত কোন দিকে বেশি যাবে- সেটা তো আমি বলতে পারব না। এ মুহূর্তে কারো প্রেডিক করাও সম্ভব না।
রাষ্ট্রপ্রধানের পদত্যাগের দাবিতে সম্প্রতি বিভিন্ন পক্ষের তরফে যে দাবি উঠেছে, সে বিষয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে বিএনপি তাদের অবস্থান তুলে ধরার ঘোষণা দিয়েছে। রিজওয়ানা হাসান বলেন, বিএনপি বলেছে- তারা রাজনৈতিক সংকট দেখছে; আবার বিএনপিরই দুই-একজন নেতা বলছেন, তারা সে সংকট দেখছেন না। এখন যারা দাবি করছে তার অপসারণ দরকার এবং যারা বলছে এটা হলে রাজনৈতিক সংকট হবে- মূলত ঐক্যটা তাদের মধ্যে করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের আমলে রাষ্ট্রপতি হওয়া মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে শপথ নেওয়ায় অন্তর্বর্তী সরকার প্রশ্নবিদ্ধ হয় কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে রিজওয়ানা হাসান বলেন, প্রশ্নবিদ্ধ হয় না। ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি’ বলে একটা কথা শুনেছেন- এটা পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত একটা মতবাদ; সাংবিধানিক ধারাবাহিকতাই ছিল আমাদের একমাত্র অপশন। চলমান সংলাপের বিষয়ে তিনি বলেন, হয়তো সকলের সাথে কথা বলার প্রয়োজন নেই। যারা মনে করে অপসারণ বা পদত্যাগ প্রয়োজন বনাম যারা মনে করে অপসারণ সংকট হবে- আলোচনাটা মূলত তাদের মধ্যে হবে।উপদেষ্টা রিজওয়ানা বলেন, এখন উপদেষ্টা পরিষদ ক্লিয়ার করেছে যে- রাজনৈতিক ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হবে। রাজনৈতিক ঐক্যের ফল কী হবে সেটা না জেনে আগে মন্তব্য করা যাবে না। রাজনৈতিক ঐকমত্য যেহেতু গড়ার চেষ্টা করা হচ্ছে, ওইটা পর্যন্ত আমাদেরকে অপেক্ষা করতে হবে।
এদিকে, গতকাল রোববার এ নিয়ে কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রাষ্ট্রপতির পদ থেকে মো. সাহাবুদ্দিনকে অপসারণ ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকারকে হঠকারী কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেছেন, গণ-অভ্যুত্থানের ফসলকে ঘরে তোলার জন্য বাংলাদেশের বিপ্লবকে যদি সংহত করতে হয়, তাহলে হঠকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপির যে সর্বোচ্চ ফোরাম রয়েছে, সেই ফোরামে আলোচনা হবে। আলোচনা শেষে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করব। নির্বাচন বিলম্বিত হলে কোনো ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা করছেন কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বারবার বলছি, যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন করা দরকার। একটি সাংবিধানিক রাজনৈতিক শক্তির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
এদিকে, শনিবার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, সংবিধানের অজুহাত তুলে রাষ্ট্রের এই সংকটকে (রাষ্ট্রপতির অপসারণ ইস্যু) জিইয়ে রাখা হয়েছে। এই সংবিধানের অজুহাত দেওয়া উচিত নয়। কারণ গণঅভ্যুত্থান-উপদেষ্টা পরিষদ গঠন সংবিধান মেনে হয়নি। জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে হয়েছে। তাই যেসব দলগুলোকে নিয়ে আন্দোলন করেছি তাদের মধ্যে এই ইস্যু নিয়ে বিভক্তি হোক তা জামায়াত চায় না।
তুমুল গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে যাওয়া শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন কি না, সে বিষয়টি নিয়ে আড়াই মাস পর বিতর্ক তৈরি হয় রাষ্ট্রপতির একটি কথায়। দৈনিক মানবজমিনের সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, তিনি শেখ হাসিনার পদত্যাগের কথা শুনেছেন, কিন্তু কোনো দালিলিক প্রমাণ তার কাছে নেই।
ওই বক্তব্য মানবজমিনের একটি ম্যাগাজিনে ছাপা হওয়ার পর রাষ্ট্রপতি চাপে পড়েন। প্রথমে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল দাবি করেন, সাহাবুদ্দিন ‘মিথ্যা’ বলে শপথ ভঙ্গ করেছেন। তাকে অপসারণের সম্ভাবনা নিয়েও কথা বলেন উপদেষ্টা। এরপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ জুলাই-অগাস্টের অভ্যুত্থানে যুক্ত বিভিন্ন সংগঠন রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবিতে মাঠে নামে।





