বড়লেখায় বাদির বিরুদ্ধে বিচারকের মামলা
প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ৮:১৫:০৫ অপরাহ্ন
বড়লেখা প্রতিনিধি : বড়লেখায় সাবেক স্ত্রী ও তার পিতৃ-পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে আদালতে মিথ্যা মামলা দায়ের করে নিজেই ফেঁসে গেলেন তেজপাতা ব্যবসায়ি লাল মিয়া। হয়রানির উদ্দেশ্যে মিথ্যা দাবি তুলে আদালতে মামলা করার প্রমাণ পাওয়ায় বড়লেখা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোহাম্মদ জিয়াউল হক নিজেই বাদি হয়ে তারই আদালতের সি.আর ১৭৯/২৪ নং মামলার বাদি লাল মিয়ার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। বৃহস্পতিবার আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন। আসামি লাল মিয়া উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের মুহাম্মদনগর গ্রামের মৃত মজবিল আলীর ছেলে।
জানা গেছে, গত ৪ এপ্রিল তেজপাতা ব্যবাসয়ি লাল মিয়ার পথরোধ করে সাবেক স্ত্রী মনোয়ারা বেগম ও তার পরিবারের লোকজন তাকে প্রাণে হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিট ও হত্যার হুমকি প্রদানের অভিযোগ এনে লাল মিয়া সাবেক স্ত্রী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে বড়লেখা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। এসআই আতাউর মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পান।
তিনি ঘটনা তদন্তে গিয়ে জানতে পারেন মামলার বাদী লাল মিয়া বিবাদী মনোয়ারা বেগমের বাড়ির পাশে নির্জন টিলার উপরে দা হাতে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করতে দেখে বিবাদী মনোয়ারা বেগমের আত্মীয় স্বজন ও এলাকার লোকজন তাকে আটক করেন। পরে লাল মিয়ার পরিবারের লোকজনসহ স্থানীয় ইউপি সদস্যকে আটকের বিষয়টি অবহিত করেন। বোবারথল ইসলামনগর গ্রামটি দূর্গম টিলা অঞ্চল হওয়ায় তাৎক্ষণিক বিষয়টি সমাধান করা সম্ভব না হওয়ায় পরের দিন ৫ এপ্রিল সকালে লাল মিয়ার বসতবাড়ি এলাকার স্থানীয় ইউপি সদস্য অত্র মামলার আরজিতে উল্লেখিত সাক্ষী আব্দুল মান্নান তথায় উপস্থিত হয়ে স্থানীয় মান্যগণ্য লোকজনের সালিসে অত্র মামলার বাদী লাল মিয়া তার সাবেক স্ত্রী মনোয়ারা বেগমের বাড়িতে বিনা অনুমতিতে কোন দিন যাবেনা বলে মৌখিক অঙ্গীকার করে। বিষয়টি আপোষে নিষ্পত্তি করে লাল মিয়াকে সুস্থ অবস্থায় আব্দুল মান্নান মেম্বার নিজ জিম্মায় নিয়ে যান। কিন্তু পরবর্তীতে সাবেক স্ত্রী ও তার পরিবারের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে তাদেরকে শায়েস্তা করার হীন উদ্দেশ্যে লাল মিয়া সাবেক স্ত্রী মনোয়ারা বেগম ও তার পরিবারের লোকজনের বিরুদ্ধে কাল্পনিক ঘটনা সাজিয়ে আদালতে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন।
আদালত সূত্র জানায়, ফরিয়াদী লাল মিয়া সি.আর ১৭৯/২৪ নং মামলা ১৫ এপ্রিল দায়ের করার পরবর্তী ৭ আগস্ট, ২৬ সেপ্টেম্বর ও ১০ অক্টোবরের ধার্য্য তারিখে আর আদালতে উপস্থিত হননি। এভাবে ফরিয়াদী লাল মিয়ার উক্তরূপ কার্যকলাপ এবং তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট ১৬১ ধারায় জবানবন্দি প্রদানকারী সাক্ষীদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে নালিশী দরখাস্তের মাধ্যমে দায়েরী এ মামলা হয়রানিমূলক মর্মে আদালতের প্রতীয়মান হলে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জিয়াউল হক বৃহস্পতিবার নিজে বাদি হয়ে লাল মিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের ও আদালতের মূল্যবান কর্মঘন্টা নষ্ট করার অপরাধে ১৮৬০ সালের দন্ডবিধি আইনের ১৮২, ২০৯ ও ২১১ ধারায় মামলা দায়ের করেন।
আদালতের বেঞ্চ সহকারি নেপুর চন্দ্র দাস মিথ্যা মামলা দায়ের ও আদালতের মূল্যবান কর্মঘন্টা নষ্ট করার অপরাধে মামলার বাদির বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আদালত আসামি লাল মিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন।