বন্ধ ১৮ বিদ্যুৎকেন্দ্রে পিডিবির লোকসান ১,৫৭১ কোটি টাকা!
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ নভেম্বর ২০২৪, ৮:৪৪:৩৪ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বন্ধ থাকা ১৮ বিদ্যুৎকেন্দ্রে পিডিবিকে লোকসান গুণতে হয়েছে ১ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা। জানা গেছে, ঘোড়াশাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের সপ্তম ইউনিটটি কারিগরি ত্রুটির কারণে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পুরো সময় বন্ধ ছিল। এতে কেন্দ্রটি থেকে কোনো বিদ্যুৎ পাওয়া যায়নি। উল্টো পরীক্ষামূলক পরিচালনার জন্য ৩৬৫ মেগাওয়াট সক্ষমতার কেন্দ্রটিতে বাইরে থেকে ২৬ লাখ ৪৮ হাজার ৩১৫ ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। যদিও বন্ধ থাকা এ কেন্দ্রের বেতন-ভাতা ও রক্ষণাবেক্ষণে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (পিডিবি) গত অর্থবছর ব্যয় করতে হয়েছে ৩৪৭ কোটি ৭২ লাখ টাকা। এতে ওই কেন্দ্রটিতে গড় ঋণাত্মক ব্যয় দাঁড়ায় এক হাজার ২৮৫ টাকা ৬৫ পয়সা।
একই ধরনের চিত্র ছিল শাহজিবাজার ৩৩০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্টে (সিসিপিপি)। গত অর্থবছর এ কেন্দ্র থেকে কোনো বিদ্যুৎ পাওয়া যায়নি। উল্টো মেরামত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কেন্দ্রটিতে জাতীয় গ্রিড থেকে ১৪ লাখ ১২ হাজার ৪১৯ ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। তবে বন্ধ এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের বেতন-ভাতা ও রক্ষণাবেক্ষণে পিডিবিকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর ব্যয় করতে হয়েছে ৩২২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। এতে ওই কেন্দ্রটিতে গড় ঋণাত্মক ব্যয় দাঁড়ায় দুই হাজার ১১৬ টাকা ৮৬ পয়সা।
এদিকে ২৬০ মেগাওয়াট সক্ষমতার ঘোড়াশাল তৃতীয় ইউনিট কেন্দ্রটিতেও মেরামতের কাজ চলছে। এটি কয়েক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। গত অর্থবছর এ কেন্দ্র থেকে কোনো বিদ্যুৎ না পেলেও জাতীয় গ্রিড থেকে উল্টো সরবরাহ করা হয়েছে ৯ লাখ ৩১ হাজার ৫০০ ইউনিট। এ কেন্দ্রটির বেতন-ভাতা ও রক্ষণাবেক্ষণে পিডিবিকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর ব্যয় করতে হয়েছে ২৮০ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এতে ওই কেন্দ্রটিতে গড় ঋণাত্মক ব্যয় দাঁড়ায় দুই হাজার ৯৭৬ টাকা ৩৪ পয়সা।
এভাবেই গত অর্থবছর পিডিবির মালিকানাধীন উৎপাদন বন্ধ থাকা ১৮টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের পেছনে ব্যয় হয়েছে এক হাজার ৫৭০ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এসব কেন্দ্রের মধ্যে আটটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ঋণাত্মক। বাকি ১০টিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল শূন্য। তবে এসব কেন্দ্রের পেছনে রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় এবং স্থায়ী ব্যয় (কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, উৎসব বোনাস প্রভৃতি) নিয়মিতই পরিশোধ করতে হয়েছে। ফলে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের পেছনে পিডিবির বড় অঙ্কের অর্থ গচ্চা গেছে।
সংস্থাটির তথ্যমতে, কারিগরি ত্রুটির কারণে শাহজিবাজার ৮ ও ৯নং ইউনিট এবং ঘোড়াশাল ১ ও ২নং ইউনিটে গত অর্থবছর কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়নি। তবে এ কেন্দ্রগুলোর জন্য পিডিবির ব্যয় করতে হয়েছে যথাক্রমে ২৫১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ও ১৪৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। আর সিরাজগঞ্জ ২১০ মেগাওয়াট কেন্দ্রটির রক্ষণাবেক্ষণ কাজ পরিচালনার জন্য বাইরে থেকে পাঁচ লাখ ৯৬ হাজার ৩২২ ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে। যদিও এ কেন্দ্রটির পেছনে পিডিবিকে ব্যয় করতে হয়েছে ১০০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ এ কেন্দ্রটিতে ঋণাত্মক উৎপাদন ব্যয় পড়েছে এক হাজার ৬৫৯ টাকা ৪৮ পয়সা।
ভেড়ামারা-৩ পাওয়ার স্টেশনে বাইরে থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় ৪১ হাজার ৮১০ ইউনিট। এ কেন্দ্রে পিডিবির গচ্চা গেছে ৩০ কোটি ১৩ লাখ টাকা। এতে গড় ঋণাত্মক ব্যয় পড়ে সাত হাজার ১২২ টাকা ৮৯ পয়সা। কুতুবদিয়া ডিজেল জেনারেটর বিদ্যুৎকেন্দ্রটি গত অর্থবছর পুরোপুরি বন্ধ ছিল। কোনো বিদ্যুৎ না পেলেও বেতন-ভাতা ও রক্ষণাবেক্ষণ মিলিয়ে পিডিবিকে এ কেন্দ্রের পেছনে ব্যয় করতে হয়েছে ২৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।
হরিপুরে নির্মিত ২০ মেগাওয়াট সক্ষমতার স্পেশাল বিজনেস ইউনিট (এসইউবি) বরাবরের মতোই বন্ধ ছিল গত অর্থবছর। তবে এ কেন্দ্রটিতে বাইরে থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় দুই লাখ ৩০ হাজার ৩০০ ইউনিট। বন্ধ এ কেন্দ্রে গত অর্থবছর পিডিবির গচ্চা গেছে ২২ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ গড় ঋণাত্মক ব্যয় পড়ে ৯৮৩ টাকা ৯১ পয়সা। আর বন্ধ থাকা বরিশাল গ্যাস টারবাইন পাওয়ার প্লান্টে বাইরে থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হয়েছে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৫৪০ ইউনিট। এ কেন্দ্রে পিডিবির গচ্চা গেছে ১৫ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ গড় ঋণাত্মক ব্যয় পড়েছে ৯০৭ টাকা ০৭ পয়সা।
ঢাকার ডিজিডি কেন্দ্রটি বরাবরের মতোই বন্ধ থাকলেও এর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণে পিডিবিকে ব্যয় করতে হয়েছে ১৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। আর সৈয়দপুর ২০ মেগাওয়াট ডিজেলচালিত কেন্দ্রটিতে বাইরে থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় ৩৫ হাজার ১৩০ ইউনিট। বন্ধ এ কেন্দ্রের পেছনে পিডিবির গচ্চা গেছে পাঁচ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ কেন্দ্রটির গড় ঋণাত্মক ব্যয় পড়ে এক হাজার ৫৭৩ টাকা ৩৩ পয়সা।
এর বাইরে উৎপাদন শূন্য হলেও শিকলবাহা ডিজেল পাওয়ার স্টেশনের রক্ষণারেক্ষণ ও পরিচালনার জন্য পিডিবিকে ব্যয় করতে হয়েছে পাঁচ কোটি ১৯ লাখ টাকা, সন্দ্বীপ ডিজেল জেনারেটর কেন্দ্রটিতে তিন কোটি পাঁচ লাখ, সিরাজগঞ্জ বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য এক কোটি ৩৯ লাখ, কুতুবদিয়া বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্রে এক কোটি চার লাখ, সোনাগাজী বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্রের পেছনে ২৮ লাখ এবং হাতিয়া ডিজেল জেনারেটরের পেছনে ১৬ লাখ টাকা।
সব মিলিয়ে ঋণাত্মক উৎপাদনে থাকা আট কেন্দ্রে বাইরে থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হয়েছে ৬০ লাখ ৬৫ হাজার ৩৩৬ কিলোওয়াট ঘণ্টা। এ আট কেন্দ্রের পেছনে পিডিবির গচ্চা গেছে এক হাজার ১২৫ কোটি ৮২ লাখ টাকা। আর শূন্য উৎপাদনের ১০ কেন্দ্রে পিডিবির গচ্চা গেছে ৪৪৫ কোটি ৯ লাখ টাকা।