নিলামে উঠছে এমপিদের বিলাসবহুল ৫২ গাড়ি
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ নভেম্বর ২০২৪, ৯:৪০:৩৩ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক : ক্ষমতার পট পরিবর্তন ও দ্রুততম সময়ে সংসদ ভেঙে দেওয়ায় শুল্কছাড়ে অর্ডার করা গাড়ি হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে কয়েকডজন সাবেক এমপির। সাবেক হওয়ার কারণে শুল্কছাড় না মেলায় অর্ডার করা বিলাসবহুল গাড়িগুলো মালিকানায় নিচ্ছেন না এই সংসদ সদস্যরা। ফলে সাবেক সাংসদদের ৫২টি গাড়ি নিলামে উঠতে যাচ্ছে। এসব গাড়ির মধ্যে রয়েছে-মার্সিডিজ, বিএমডব্লিউ, জাগোয়ার, টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার, রেঞ্জ রোভার, মিতসুবিশি, ফোর্ড, লেক্সাস ব্র্যান্ডের গাড়ি।
কাস্টমস সূত্র বলছে, শুল্কছাড়ে অর্ডার করলেও সাবেক এমপিদের এসব গাড়ি নিতে হলে এখন ৮৫০ শতাংশ হারে শুল্ক দিতে হবে। সেই সঙ্গে পূরণ করতে হবে কাস্টমসের শর্তাবলি। তবে সাবেক এমপিদের অনেকেই পলাতক থাকায় গাড়িগুলো তাদের নেওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাই গাড়ি বন্দরে আসার ৩০ দিন অতিবাহিত হতেই সেগুলো নিলামে তুলছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এ মাসের মধ্যেই নিলামের তারিখ চূড়ান্ত হবে।
জানা গেছে, এরই মধ্যে দুই দফায় ২৪ জন সাবেক এমপিকে শর্ত মেনে গাড়ি খালাস করতে নোটিশ দিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এটি নিয়ম রক্ষার নোটিশ। শেষ পর্যন্ত গাড়িগুলো নিলামেই উঠবে। এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপকমিশনার সাইদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, বিলাসবহুল এসব গাড়ির শুল্কসহ প্রতিটির বাজারমূল্য ৮ থেকে ১২ কোটি টাকা। গাড়িগুলোর ইঞ্জিন ক্যাপাসিটি ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার সিসি। স্বাভাবিকভাবে এ ধরনের গাড়ির ওপর ৮৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হয়ে থাকে। কিন্তু এমপিরা এসব গাড়িতে পেতেন শতভাগ শুল্কমুক্ত সুবিধা। এখন সংসদ না থাকায় তারা শুল্কমুক্ত সুবিধা আর পাবেন না।
তিনি আরও বলেন, বন্দরে গাড়ি আমদানির পর ৩০ দিন পার হয়ে গেলে চট্টগ্রাম বন্দর নিলামের জন্য কাগজপত্র আমাদের কাছে হস্তান্তর করে। ওই কাগজপত্রে ছাড় না করা গাড়িগুলোর বিস্তারিত উল্লেখ থাকে। এর পর আমরা আমদানিকারক বরাবর একটি নোটিশ ইস্যু করি। ইতোমধ্যে এমপি বা তাদের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের নামে নোটিশ পৌঁছানো হয়েছে। তবে এখানে অনেক শর্ত যুক্ত আছে। যেগুলো আসলে পূরণ করতে পারবেন না সাবেক এমপিরা। ফলে গাড়িগুলো নিলামে উঠতে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।
নিলামে উঠছে যাদের গাড়ি :
বিলাসবহুল গাড়ি হাতছাড়া হতে যাওয়া সাবেক এমপিদের মধ্যে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের সাবেক এমপি এসএম আল মামুন, বাঁশখালীর মুজিবুর রহমান, খুলনার এস এম কামাল হোসেন, নওগাঁর সুরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, গাইবান্ধার শাহ সরোয়ার কবির, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এসএকে একরামুজ্জামান, নেত্রকোনার সাজ্জাদুল হাসান, ঝিনাইদহের নাসের শাহরিয়ার জাহেদী, যশোরের তৌহিদুজ্জামান, সুনামগঞ্জের মুহাম্মদ সাদিক, ময়মনসিংহের আবদুল ওয়াহেদ, জামালপুরের আবুল কালাম আজাদ, সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক ও মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, মাগুরা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ফয়জুর রহমান, লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক পিংকু, কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান মঞ্জু, সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরী ও মহিলা এমপি তারানা হালিমের নাম রয়েছে বলে জানা গেছে।
কাস্টমসের নিলাম শাখার তথ্য অনুযায়ী, সাবেক এমপিদের নামে আসা বেশির ভাগ গাড়িই ল্যান্ড ক্রুজার। শুল্কসহ এসব গাড়ি ছাড় করলে প্রতিটির দাম পড়বে ৮ থেকে ১০ কোটি টাকা। শুল্কমুক্ত সুবিধায় ছাড় করলে প্রতিটি গাড়ির দাম পড়ত এক থেকে সর্বোচ্চ ২ কোটি টাকা। শুল্কমুক্ত সুবিধা নিতে পারলে প্রতি গাড়িতেই এমপিরা ৮/৯ কোটি টাকা ছাড় পেতেন।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক জানান, ৫২টি গাড়ির মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে যেগুলো ৩০ দিন আগে আমদানি হয়েছে, সেগুলোর তালিকা কাস্টমসকে দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকিগুলোর তালিকাও দেওয়া হবে।