ট্রাম্প ঘোষণা করবেন আগাম জয়! মোকাবিলায় প্রস্তুত ডেমোক্র্যাটরা
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ নভেম্বর ২০২৪, ৯:৫১:০০ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি ২০২০ সালের মতো এবারও আগাম জয় দাবি করেন, তবে তা কীভাবে মোকাবিলা করা হবে, সেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন ডেমোক্র্যাটরা। ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিসের নির্বাচনী শিবির ও দলীয় কর্মকর্তারা রয়টার্সকে সেই প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন।
ট্রাম্প এ সপ্তাহে সাংবাদিকদের বলেছেন, তাঁর আশা, ভোটের দিনই (মঙ্গলবার) নিজের জয়ী হওয়ার বিষয়টি ঘোষণা করতে পারবেন তিনি। যদিও নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, ভোটের ফলাফল ঘোষণা করতে কয়েক দিন লেগে যেতে পারে। বিশেষ করে যদি গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি এলাকায় ভোট পুনর্গণনার দাবি ওঠে। এবারের প্রায় সব জনমত জরিপে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে সাধারণত প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমগুলো নির্বাচনে বিজয়ীর নাম ঘোষণা করে। এক্ষেত্রে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের দেওয়া ভোট গণনার তথ্য বিশ্লেষণ করে তারা। যদিও কখনো কখনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসার আগেই প্রার্থীরা নিজেদের বিজয়ী দাবি করে বসেন।
এ বিষয়ে গত বুধবার এবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কমলা বলেছেন, দুঃখজনকভাবে হলেও আমরা প্রস্তুত। যদি তিনি (ট্রাম্প) করেন (বিজয় দাবি) এবং যদি আমরা জানতে পারি, তিনি সত্যি সংবাদমাধ্যমকে চালিত করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের মতামতের ওপর হস্তক্ষেপ করতে চাইছেন…আমরা জবাব দিতে প্রস্তুত।
কী ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছেন সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দেননি বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট। তবে ডেমোক্রেটিক পার্টি ও কমলার নির্বাচনী শিবিরের ৬ জন কর্মকর্তা বলেছেন, ট্রাম্প যদি আগাম জয় ঘোষণা করেন, তবে প্রাথমিক লড়াই হবে জনগণের আদালতে। তাঁদের পরিকল্পনা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও টেলিভিশনে বিজয়ীর নাম ঘোষণার আগে সব ভোট গণনার জোরালো দাবি জানাবেন।নাম প্রকাশ না করে কমলার নির্বাচনী প্রচারশিবিরের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেন, তাঁদের পূর্ণ বিশ্বাস, ট্রাম্প মঙ্গলবার (ভোটের) রাতেই নিজের জয় দাবি করবেন, আর তা সব ভোট গণনা হওয়ার আগেই। তিনি আরও বলেন, ‘তিনি (ট্রাম্প) আগে এটা করে ব্যর্থ হয়েছেন। যদি আবারও করেন, ব্যর্থই হবেন।’
২০২০ সালে ভোটের পরদিন সকাল-সকালই নিজের জয় দাবি করেছিলেন ট্রাম্প। অথচ ভোটের তিন দিন পর প্রথম টেলিভিশন নেটওয়ার্কে ভোটের ফলাফল ঘোষণা করা হয়। তাঁর ডেমোক্র্যাট প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেনের কাছে হেরে যান ট্রাম্প। যদিও ট্রাম্প কখনো তাঁর সেই পরাজয় মেনে নেননি; বরং এখনো দাবি করেন, ভোট কারচুপি করে তাঁকে হারানো হয়েছে।
তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস :
আসন্ন মার্কিন নির্বাচনে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস দিলেও, রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকেই এগিয়ে রাখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, শেষ মুহূর্তে পেনসিলভেনিয়া বা মিশিগানের মতো ব্যাটেলগ্রাউন্ড স্টেটে চমক দেখাতে পারেন ট্রাম্প। আর শেষ পর্যন্ত ডোনাল্ড ট্রাম্পই যদি নির্বাচিত হন, তাহলে মার্কিন রাজনীতির ভোল পাল্টে যাবে এমন আশঙ্কাও করছেন অনেকে।
৭টি সুইং স্টেটের ৯৩টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের ওপর নির্ভর করছে ডোনাল্ড ট্রাম্প আর কমলা হ্যারিসের ভবিষ্যৎ। নর্থ ক্যারোলাইনা, উইসকনসিন আর জর্জিয়ার পর মিশিগান ও পেনসিলভেনিয়ার মতো ব্যাটেলগ্রাউন্ড স্টেটে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলার সাথে ব্যবধান কমিয়ে ফেলছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্প। তাই হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের নিশ্চয়তা দিলেও আপাতত ট্রাম্পকেই এগিয়ে রাখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। বলছেন, সুইং স্টেটগুলোতে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলার লক্ষণ সুবিধার নয়।
স্যুইং স্টেটের মধ্যে সর্বোচ্চ ১৯টি ইলেকটোরাল ভোট থাকায় বারবার আলোচনায় আসছে পেলসিলভেনিয়ার নাম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অঙ্গরাজ্যটিতে জয় পেতে হলে প্রয়োজন হবে অর্ধ মিলিয়ন এশিয়ান অ্যামেরিকান ও ৫ লাখ ৮০ হাজার ল্যাটিনো ভোটারের সমর্থন। জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, বিশেষ এই রাজ্যটিতে আধিপত্য ধরে রাখতে পারছেন কমলা।
এছাড়া মিশিগানেও নড়বড়ে হচ্ছে নীল শিবিরের ভিত। যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী কলামিস্ট হাসান ফেরদৌসের আশঙ্কা, মধ্যপ্রাচ্য সংঘাতে বাইডেন প্রশাসনের বিতর্কিত অবস্থানের জন্য অঙ্গরাজ্যটির অন্তত ২ লাখ আরব মুসলিম ভোটারের সমর্থন হারাতে পারেন কমলা।
রিপাবলিকানদের এগিয়ে রাখলেও, ট্রাম্পের দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসা নিয়ে অনেকের কপালেই চিন্তার ভাঁজ। কলামিস্ট ও প্রাবন্ধিক হাসান ফেরদৌস বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টে রিপাবলিকান আধিপত্য আগে থেকেই বেশি। এবারের নির্বাচনে রিপাবলিকানদের জয় হলে সর্বোচ্চ আদালতের পাশাপাশি হোয়াইট হাউজ, সিনেট ও কংগ্রেসেও দখল চলে যাবে লাল শিবিরের দখলে। এমনটা হলে ট্রাম্পকে নিয়ন্ত্রণ করার আর কোনো উপায় থাকবে না বলে মনে করছেন তিনি।
মার্কিন গণমাধ্যম বলছে, এবারের নির্বাচনে যে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে তা অতীতের যে কোনো নির্বাচনকে ছাপিয়ে যাবে। তবে শেষ হাসি হাসবেন কোন প্রার্থী তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আর মাত্র ১ দিন।