প্রকল্পের আশায় সিসিক, নগরের সড়কে বেহাল দশা
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩:০০:৪৩ অপরাহ্ন
বরাদ্দ প্রস্তাবে সাড়া দিচ্ছেনা মন্ত্রণালয়
মুনশী ইকবাল : নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সড়কের বেহাল দশায় দুর্ভোগের শেষ নেই নগরবাসীর। কয়েকদফা বন্যায় সড়কের যে ক্ষতি হয়েছিল সেই ক্ষত নিয়েই চলছে যানবাহন। সড়ক উন্নয়নে প্রায় ৫শ কোটি টাকার বরাদ্দ চেয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প পাঠিয়েছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ। তবে সেই প্রকল্পে এখনও কোনো সাড়া মিলেনি। ফলে প্রকল্পের আশায় বসে আছে সিসিক। এরপর জরুরিভিত্তিতে সংস্কারের জন্য চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ২০ কোটি টাকার বরাদ্দ চেয়ে প্রস্তাব পাঠালে তাতেও মন্ত্রণালয় থেকে কিছু মিলেনি। তাই বরাদ্দ না পাওয়ায় হচ্ছে না সড়ক সংস্কারও।
কোথাও বড়ো বড়ো ভাঙা, কোথাও মাঝে মধ্যে গর্ত আর কোথাও ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়া এই সড়ক দিয়ে চলতে গিয়ে যাত্রীদের কোমরের হাড় নড়বড়ে বলে অবস্থা বলে জানিয়েছেন অনেকে। এরবাইরে ভাঙা সড়কে চলাচল করতে গিয়ে ধুলায় ধূসর হয়ে চেহারা পাল্টে যায় অনেকের। ২০২২ সালে সিলেট অঞ্চলে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার পর বিধ্বস্ত সড়কগুলোর উল্লেখযোগ্য কোনো কাজই হয়নি। সর্বশেষ চলতি বছর কয়েক দফা বন্যায় আরও পাল্টে গেছে অধিকাংশ সড়কের চেহারা। এসব সড়ক দিয়ে যান চলাচল করছে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে। প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও দুর্ঘটনাও ঘটছে এসব সড়কে।
নগরীর সবচেয়ে ব্যস্ততম ভিআইপি সড়ক কোর্ট পয়েন্ট থেকে জিতু মিয়ার পয়েন্ট হয়ে রিকাবীবাজার সড়ক। নামে ভিআইপি এই সড়ক কোনো কোনো জায়গায় বেহাল দশায় গ্রামীণ সড়ককেও হার মানায় এখন। বিশেষ করে সুরমা পয়েন্ট থেকে তালতলা বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত এবং জিতু মিয়ার পয়েন্ট থেকে কুয়ারপার পর্যন্ত সড়কের কার্পেটিংয়ে অবস্থা এতটাই বেহাল যে দেখে মনে হবে মেশিন গানের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গেছে। এই সড়ক দিয়ে চলাচলে চালক যাত্রী উভয়েরই ঝাঁকিতে কোমরের হাড় নড়বড়ে অবস্থা বলে জানান অনেকে। ইয়ার হোসেন নামে এক সিএনজি চালক সোমবার জানান জিতু মিয়ার পয়েন্ট থেকে বন্দর আসতে সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয়। রাস্তা ঝাঁঝরা হয়ে এমন অবস্থা হয়েছে মনে হয় যেন কেউ ধরে ঝাঁকি বোতল ঝাঁকি দেওয়ার মতো ঝাঁকি দিচ্ছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলেন, সড়কটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন শত-শত সিএনজি চালিত অটোরিকশা এই সড়ক দিয়ে ওসমানী হাসপাতাল, মদিনামার্কেট, টুকেরবাজার যাতায়াত করে। গুরুত্বপূর্ণ সড়কটিতে চলাচল করার সময় যাত্রীদের ভোগান্তির শিকার হতে হয়। তাই দ্রুত সংস্কারের দাবি সবার।
এর বাইরে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মধ্যে দক্ষিণ সুরমার বাইপাস, হুমায়ুন রশীদ স্কয়ার, লাউয়াই, চ-ীপুল এবং পাঠানটুলা, উপশহর-শিবগঞ্জের দিকে কিছু সড়কের অবস্থাও বেহাল। আর পাড়া মহল্লার রাস্তাগুলো কথা তো বলারই অপেক্ষা রাখে না। দেখা গেছে কয়েক দফা বন্যায় ওই সড়কগুলোর কার্পেটিং উঠে গেছে। কোথাও কোথাও তৈরি হয়েছে বিশাল গর্তের। স্থানীয়রা জানান, দক্ষিণ সুরমার বাইপাস সড়কটি ২০২২ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর এবারের কয়েক দফা বন্যায় সড়কগুলো অনেকটা যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ওই সড়ক দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের সব এলাকায় যান চলাচল করে।
বাস মালিক সমিতির নেতারা বিষয়টি জানিয়েছেন সিটি কর্পোরেশনকে। তবে কোনো কাজ হয়নি। এভাবে চলতে থাকলে আর কিছুদিন পর ওই সড়কটি যান চলাচলের পুরোপুরি অনুপযোগী হয়ে পড়বে।
সিলেট জেলা বাস মালিক পরিবহন সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহ জিয়াউল কবির পলাশ জানান, দেখলে মনে হয় এটা সড়ক নদী ভাঙনে জেগে ওঠা চর। গাড়ি যেভাবে হেলে-দুলে চলে তাতে যে কোনো সময় বড়ো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। অনেকবার বলা হয়েছে, সড়ক সংস্কারে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য। সিটি কর্তৃপক্ষ কোনো উদ্যোগই নেয়নি।
সিলেট নগরীর পাঠানটুলা সড়কের আরসিসি ঢালাইয়ের কিছু অংশ ছাড়া বাকি অধিকাংশ সড়কজুড়ে খানাখন্দ। কোথাও ঢালাই উঠে গেছে। কোথাও সড়কের নিচ থেকে ভেঙে উঠে এসেছে কাঁচা মাটি।পাঠানটুলা কালীবাড়ি এলাকার বাসিন্দা নাইম ইসলাম জানান, প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে যেতে গেলে গাড়ির অনেক ক্ষতি হয়। কয়েক দিন আগে তাঁর পরিচিত একজনের প্রাইভেটকার গর্তে পড়ে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাছাড়া তিনি মোটরসাইকেল নিয়ে চলাচল করেন। ঝাঁকুনিতে কোমরের অবস্থা কাহিল।
নগরীর ভেতর বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মধ্যে একটি কালীঘাট। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, মহাজনপট্টি-বন্দরবাজার লালদীঘি হয়ে কালীঘাট পর্যন্ত সড়কের অবস্থা খুবই খারাপ। একবার এ সড়ক দিয়ে গেলে কেউ দ্বিতীয়বার যেতে চায় না।
কালীঘাটের পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ী জননী ভান্ডারের নির্মল পাল জানান, প্রতিদিন অসংখ্য গাড়ি এই সড়ক ব্যবহার করে। বিশেষ করে পাইকারি বাজার হওয়ায় বড় বড় ট্রাক আসে বাজারে। গেল পূজার সময় মেয়র আনোয়ারুজ্জামানকে তারা সড়ক মেরামতের কথা বলেছিলেন। তাতে কোনো কাজ হয়নি। এখন তো আরও খারাপ অবস্থা।
একই ভাবে সড়কের বেহাল দশা মিরাবাজার থেকে শিবগঞ্জ পর্যন্ত। আবার শিবগঞ্জ থেকে টিলাগড় পয়েন্ট পর্যন্ত বেশ কিছু অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এমসি কলেজ, সরকারি কলেজসহ এই সড়ক মাড়িয়ে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন এলাকাতেও যেতে হয়। যে কারণে সড়কটি অনেক গুরুত্ব বহন করে। মধুবন সুপার মার্কেট থেকে শিশুপার্ক পর্যন্ত বেশ কয়েক গজ সড়কের অবস্থাও নাজুক। দেখা গেছে অনেকগুলো গর্ত। আম্বরখানা থেকে ইলেকট্রিক সাপ্লাই হয়ে টিলাগড় পর্যন্ত অন্তত দুই কিলোমিটার সড়কের অবস্থা বেশ করুণ। সোবহানীঘাট থেকে উপশহর, জেলরোড, জিন্দাবাজার সড়কের বিভিন্ন স্থানে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। একইভাবে রায়নগর থেকে ঈদগাহ সড়কসহ বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার সড়কগুলোর অবস্থা আরও বেহাল। উপশহর ই ব্লক সহ বিভিন্ন এলাকার রাস্তার অবস্থা খুবই নাজুক। দীর্ঘদিন ধরে সড়কের সংস্কার না করায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ লোকজনকে।
এ ব্যাপারে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান দৈনিক জালালাবাদকে জানান, সড়কগুলোর টেকসই উন্নয়নের জন্য ৪৮৮ কোটি টাকা বরাদ্ধ চেয়ে একটি প্রকল্প স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। তবে এখন পর্যন্ত প্রকল্পটি সংশ্লিষ্ট পর্যায়ের অনুমোদন পায়নি। পরবর্তীতে ৩ বারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ নগরীর ভিআইপি সড়কসহ প্রধান প্রধান সড়ক ও বাইলেনসমূহ মেরামত/ সংস্কারের জন্য চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে নগরীর ২০ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছিল। তবে সেটাও এখনো মিলেনি। বরাদ্দ না পাওয়ায় সেই কাজেও হাত দেওয়া যাচ্ছে না।