আজ মার্কিন নির্বাচন : তুমুল লড়াইয়ের আভাস
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩:১৯:০১ অপরাহ্ন
ভোটার সাড়ে ২৪ কোটি, সাড়ে ৭ কোটি আগাম ভোট *সুইং স্টেটে চোখ সবার
জালালাবাদ রিপোর্ট: নানা বিতর্ক, কথার লড়াই আর তুমুল আলোচনা শেষে আজ বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের ভোটগ্রহন। কে হাসবেন শেষ হাসি-সেদিকেই আজ তাকিয়ে থাকবে বিশ্বের কোটি কোটি চোখ।আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারের শেষ সময়ে গতকালও ‘সুইং স্টেট’ বা দোদুল্যমান রাজ্যগুলোতে নজর দিয়েছেন ও চষে বেড়িয়েছেন দুই প্রার্থী- ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কমলা হ্যারিস। নির্বাচন নিয়ে করা জরিপগুলো দুই প্রার্থীর মধ্যে তুমুল লড়াইয়ের আভাস দিচ্ছে।
জর্জিয়া থেকে বিবিসির নর্থ আমেরিকা করেসপন্ডেন্ট জন সুদওয়ার্থ লিখেছেন, শেষ দিকের প্রচারেও ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রচারে অভিবাসন বিরোধী বার্তাকেই সামনে রেখেছেন।অন্যদিকে ওয়াশিংটন ডিসি থেকে বিবিসির কোর্টনি সুব্রামানিয়ান লিখেছেন যে, কমলা হ্যারিসের প্রচার দল তার জয়ের বিষয়ে সতর্ক আশাবাদ ব্যক্ত করেছে। তারা এখন ‘সুইং স্টেট’ বা দোদুল্যমান রাজ্য বলে পরিচিতি অঙ্গরাজ্যগুলোর ভোটারদের নিজেদের পক্ষে টানার চেষ্টা করছেন।
মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটিতে এক সমাবেশে দেয়া বক্তৃতায় কমালা হ্যারিস বলেছেন, গাজা যুদ্ধ অবসানে তিনি তার ক্ষমতা অনুযায়ী সবকিছুই করবেন।মিশিগানেই রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় আরব আমেরিকান জনগোষ্ঠীর বাস। ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার আরব-সংখ্যাগরিষ্ঠ শহর ডিয়ারবর্ন-এ সমাবেশ করেছেন। ডেমোক্র্যাটদের মধ্যপ্রাচ্য নীতি ও ইসরায়েলকে আর্থিক সুবিধা দেয়া নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে থাকা ক্ষোভকে পুঁজি করে বক্তব্য দিয়েছেন তিনি।
মিশিগান থেকে বিবিসির ম্যাডেলাইন হালপার্ট লিখেছেন, ট্রাম্পের কয়েকটি বক্তৃতা শুনে তার মনে হয়েছে যে তিনি পেনসিলভানিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা ও জর্জিয়ায় যেসব কথা বলেছেন সে অবস্থানেই তিনি থাকতে চান।তিনি গত কয়েকমাস ধরে অর্থনীতি নিয়ে যেসব নীতির কথা বলেছেন সেগুলোরই পুনরাবৃত্তি করেছেন। ট্রাম্প ও হ্যারিসের একই বক্তব্য বারবার বলা, বিজ্ঞাপন ও দলীয় স্বেচ্ছাসেবীদের তৎপরতা- সুইং ভোটারদের জন্য কিছুটা ক্লান্তিকর হয়ে উঠেছে।ভোটারদের মন জয় করার জন্য রাজনৈতিক কর্মীরা সেখানকার ভোটারদের ঘরে ঘরে যাচ্ছেন। এসব কিছুই অবশ্য প্রমাণ করে যে সেখানে কতটা হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হচ্ছে।
দোদুল্যমান রাজ্যগুলো জয়ের আশা :
বিবিসির যুক্তরাষ্ট্র স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট কাট্টি কে লিখেছেন যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা সাতটি ব্যাটলগ্রাউন্ড রাজ্যের ৬টিতে জয়ের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী। শুক্রবার ভার্জিনিয়াতে সমাবেশ করে গেছেন ট্রাম্প। আগের দুটি নির্বাচনে তিনি সেখানে বড় ব্যবধানে হেরেছেন।রবিবার ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জেডি ভান্স নিউ হ্যাম্পশায়ারে গেছেন। জরিপ অবশ্য বলছে কমলা হ্যারিস সেখানে কিছু পয়েন্টে এগিয়ে আছেন।সর্বশেষ নিউইয়র্ক টাইমস-সিয়েনা জরিপ অনুযায়ী তুমুল লড়াই হচ্ছে। প্রতিটি সুইং স্টেটে ব্যবধান খুব সামান্য।
আইওয়াতে নতুন জরিপে দেখা যাচ্ছে কমলা সেখানে অপ্রত্যাশিতভাবে ভালো করতে পারেন। ট্রাম্প আগের দুটি নির্বাচনে সেখানে জয়ী হয়েছিলেন। এ বছরের নির্বাচনে সুইং স্টেট হিসাবে পরিচিত পাওয়া রাজ্যগুলোর মধ্যে আছে অ্যারিজোনা, পেনসিলভানিয়া, জর্জিয়া, উইসকনসিন, মিশিগান, নর্থ ক্যারোলাইনা ও নেভাদা। এসব রাজ্যের ভোটারদের জয় করতে শেষ মুহূর্তের চেষ্টা করে যান দুই প্রার্থী।
কী প্রতিশ্রুতি দিলেন ট্রাম্প ও হ্যারিস
মূল্যস্ফীতি: কমলা হ্যারিস বলেছেন প্রথম দিন থেকেই তার অগ্রাধিকার হবে জীবন যাত্রার ব্যয় কমানো। গ্রোসারি বা দোকানে মূল্য বৃদ্ধি ঠেকানো, ক্রেতাদের সহায়তা এবং ন্যুনতম বেতন বৃদ্ধির মতো পদক্ষেপ নিবেন তিনি। আরও অনেক পশ্চিমা দেশের মতো মূল্যস্ফীতি বাইডেন প্রশাসনের অধীনে যুক্তরাষ্ট্রেও বেড়েছে।
অন্যদিকে ট্রাম্প ‘মূল্যস্ফীতির অবসান ঘটিয়ে আমেরিকাকে আবারো সাশ্রয়ী’ করার অঙ্গীকার করছেন। জ্বালানি খরচ কমিয়ে আনতে তিনি আরও তেল উৎপাদনের কথা বলছেন। সুদের হার কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। তিনি বলছেন অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠাতে পারলে আবাসনের চাপ কমবে।
আইন শৃঙ্খলা: কমলা হ্যারিস প্রসিকিউটর হিসেবে তার অভিজ্ঞতার সাথে মি. ট্রাম্পের অপরাধে অভিযুক্ত হওয়ার বিষয়টিও তুলে ধরছেন।অন্যদিকে ট্রাম্প মাদক কার্টেল ও দলগত সহিংসতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। তিনি বলছেন ডেমোক্র্যাটরা যেসব শহর পরিচালনা করছে সেগুলো অপরাধমূলক কর্মকা-ে ভরে গেছে।একই সাথে তিনি নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করলে তিনি ‘উগ্র বাম ও শত্রুদের’ বিরুদ্ধে সামরিক বাহিনী বা ন্যাশনাল গার্ড ব্যবহারের কথা বলেছেন।
গর্ভপাত: কমলা হ্যারিস গর্ভপাতের অধিকারকে তার প্রচারের কেন্দ্রে রেখেছেন এবং তিনি দেশজুড়ে প্রজনন অধিকার বিষয়ে আইনের পক্ষে তার অবস্থান অব্যাহত রেখেছেন। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প অবশ্য গর্ভপাতের বিষয়ে তার অবস্থান এক জায়গায় রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন।
ভোটার ২৪ কোটি ৪০ লাখ :
এবার যুক্তরাষ্ট্রে মোট ২৪ কোটি ৪০ লাখ ভোট দেওয়ার যোগ্য নাগরিক রয়েছেন। তাদের মধ্যে কতজন ভোট দেন, সেটা অবশ্যই দেখার বিষয়। পিউ রিসার্চ সেন্টারের ওয়েবসাইটে থাকা তথ্যানুযায়ী, ২০২০ সালে দুই-তৃতীয়াংশ (৬৬ শতাংশ) ভোটার ভোট দিয়েছিলেন। ১৯০০ সালের পর যুক্তরাষ্ট্রে কোনো জাতীয় নির্বাচনে এটাই সর্বোচ্চ ভোট।
সাড়ে ৭ কোটি আগাম ভোট :
এবার ২ নভেম্বর পর্যন্ত সাড়ে ৭ কোটি ভোটার আগাম ভোট দিয়ে ফেলেছেন। ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যকেন্দ্র থেকে এই সংখ্যা জানা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বেশির ভাগ রাজ্যে সরাসরি বা ডাকযোগে আগাম ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। সব ভোটারকে ভোটের আওতায় আনতে এই আগাম ভোটের ব্যবস্থা।