ট্রাইব্যুনালে শিবির নেতারা দিলেন নিপীড়নের নৃশংস বর্ণনা
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ৭:২৬:২১ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক: টানা প্রায় সাড়ে ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকাকালে শেখ হাসিনা সরকার বিরোধী মত-পথ দমনে ছিল বেপরোয়া। সরকারবিরোধী কেউই তাদের রোষানল থেকে রেহাই পায়নি। এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামী ও তাদের ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা সবচেয়ে বেশি নিপীড়িত হয়েছেন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট পতন ঘটেছে শেখ হাসিনার। নতুন দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্র্বতীকালীন সরকার বিগত দিনের গুম-খুনসহ সব অন্যায়ের বিচারের ঘোষণা দিয়েছে। এর অংশ হিসেবে অন্তবর্তীকালীন সরকার গণহত্যার বিচারের জন্য ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারকে অভিযোগ দাখিলের আহ্বান জানিয়েছে। সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে গুম-খুন ও গুলির মতো অভিযোগের বিচার চাইতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শরণাপন্ন হয়েছে ছাত্রশিবির।
মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনালে দুটি অভিযোগ দাখিল করেছে ইসলামী ছাত্রশিবির। এদিন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন কার্যালয়ে এসে ভিকটিম ছাত্রশিবির নেতারা তাদের ওপর ঘটে যাওয়া নৃশংস ঘটনার বর্ণনা দেন। এর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেন। এ সময় তাদের সঙ্গে ছিলেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় আইন সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান ও সহকারী আইন সম্পাদক আমানুল্লাহ আদিব।
অভিযোগ দায়েরের পর শিবিরের আইন সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার গত ১৫ বছরের শাসন আমলে ছাত্রশিবিরের ওপর সর্বোচ্চ বর্বরতা চালানো হয়। অভিযোগ দায়েরকারী চার শিবির নেতা এই বর্বরতার শিকার। পুলিশের বর্বর নির্যাতনের কারণে তাদের পা কেটে ফেলা হয়েছে এবং কৃত্রিম পা লাগানো হয়েছে।
এই নেতা বলেন, ছাত্রশিবিরের দায়িত্ব পালন করার কারণে এই সহিংসতার শিকার হতে হয়েছে। এইরকম অসংখ্য নজির ছাত্রশিবিরের জনশক্তিতে রয়েছে। আমরা সেগুলো ক্রমন্বয়ে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করব। তাদের ট্রাইব্যুনালে নিয়ে আসব।
আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, জয়পুরহাটের ১২ জন এবং চৌগাছা থানার নয়জন র্যাব ও পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না।
ভিকটিম শিবির নেতা আবুজর গিফারী বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার গত ১৫ বছরের শাসনকালে ছাত্রশিবিরের অসংখ্য নেতাকর্মীর ওপর জুলুম-নির্যাতন করা হয়েছে। এই নির্যাতনের বিচারের প্রক্রিয়া স্বরূপ আজ আমরা এখানে এসেছি। আমাদের ওপর যে অন্যায় হয়েছে, যে জুলুম নির্যাতন হয়েছে, সেগুলোর বিচার নিশ্চিত করার জন্য এখানে এসেছি।
আবুজর গিফারী বলেন, পায়ে গুলি করার পর শুধু ড্রেসিং ও রক্ত দেওয়ার মাধ্যমে আমাদের বাঁচিয়ে রাখা হয়েছিল। আমাদের ভাইয়েরা অনেক চেষ্টা করেছিলেন উন্নত চিকিৎসার জন্য। বারবার আবেদন করার পরও আমাদের চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। অবশেষে আমাদের পাগুলো বিনা চিকিৎসায় পচে যায়। পরে ঢাকায় এসে ডাক্তার সিদ্ধান্ত দেন পা পচে গেছে, কেটে ফেলতে হবে।
এর আগে গত ২২ অক্টোবর ছাত্রশিবিরের পাঁচ নেতা গুমের ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল করে তাদের পরিবার। ২০১২ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত তারা গুম হন বলে জানান পরিবারের সদস্যরা।