অভিযান শুনেই টিলা ফাঁকা!
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ৯:৩১:৩১ অপরাহ্ন
আব্দুল জলিল, কোম্পানীগঞ্জ : ভোর থেকে শুরু হয় টিলা কাটা। কয়েকশো মানুষ টিলার বুক চিরে বের করে নিয়ে আসে সিঙ্গেল, ভুতু আর বোল্ডার পাথর। ঐতিহ্যবাহী শাহ আরেফিনের মাজারে প্রতিদিন চলছে এমন ধ্বংসযজ্ঞ। ধ্বংসকারীরা এতটাই স্মার্ট যে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান আসার আগেই তারা খবর পেয়ে যান। মুহুর্তের মধ্যে ফাঁকা হয়ে যায় পুরো শাহ আরেফিন টিলা। দূর থেকে দেখলে মনে হয় যেন এখানে কখনো মানুষের পা পড়েনি। তবে পাশে গেলেই তাদের ধ্বংসের ক্ষতচিহ্ন ভেসে ওঠে। দীর্ঘ প্রায় ১মাস থেকে শাহ আরেফিনের মাজার থেকে পাথর উত্তোলন করে প্রায় ধ্বংসের পথে পুরো মাজার।
মঙ্গলবার ৫ নভেম্বর শাহ আরেফিন টিলা থেকে পাথর উত্তোলনের বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালায়। অভিযানে ৪ জনকে আটক করে ৪ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়। রাত ৯টা পর্যন্ত আটককৃতরা জরিমানার টাকা দেয়নি। এদিন বেলা ১টা থেকে বিকাল পর্যন্ত শাহ আরেফিন টিলা ও ভোলাগঞ্জে পাথর ভাঙ্গার মেশিনে অভিযান চলে। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অভিযানে অংশ নেন কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি উজায়ের আল মাহমুদ আদনান সহ সঙ্গীয় ফোর্স।
এর আগে গত ২৯ অক্টোবর মাজার থেকে পাথর উত্তোলনের বিরুদ্ধে কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশ অভিযান চালায়। এসময় পাথর উত্তোলন ও পরিবহনের সাথে জড়িত থাকায় ৭ জনকে আটক করে মামলা করে পুলিশ। এরপর শুক্রবার পর্যন্ত বন্ধ ছিল পাথর উত্তোলন। শনিবার থেকে আবারও পুরোদমে শুরু হয় টিলা কেটে পাথর উত্তোলন।
স্থানীয়রা জানান দীর্ঘ প্রায় ১ বছর থেকে শাহ আরেফিনের মাজার সংলগ্ন মাঠ ও কবরস্থান থেকে পাথর উত্তোলন শুরু হয়। পাথর উত্তোলন করে প্রায় বিলীন করে দেওয়া হয়েছে মাঠ ও কবরস্থান। গত প্রায় ১মাস থেকে মাজার থেকে পাথর উত্তোলন শুরু হয়। সেখান থেকে ইতিমধ্যে কয়েক কোটি টাকার পাথর তুলে বিক্রি করা হয়েছে। তাছাড়া সেখানকার কয়েকশো গাছ কেটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এদিকে শাহ আরেফিনের মাজার থেকে পাথর উত্তোলন নিয়ে জালিয়ারপাড় ও চিকাডহর-নারাইনপুর গ্রামের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। চিকাডহর-নারাইনপুরের বাঁধা উপেক্ষা করে মাজার থেকে পাথর উত্তোলন করায় দুই গ্রামের মধ্যে যে কোন সময় সংঘর্ষ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তবে উপজেলা প্রশাসনের অভিযানের পর পাথর উত্তোলন বন্ধ হবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে তাদের মধ্যে। আগের মতো স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করতে না পারলে পাথর চুরি বন্ধ করা সম্ভব নয় বলেও জানান তারা।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবিদা সুলতানা জানান, শাহ আরেফিন টিলা থেকে ২ জন ও ভোলাগঞ্জের ক্রাশার মিল থেকে ২ জনকে আটক করে ৪ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার টাকা না দিলে তাদেরকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হবে। তাছাড়া বালু পাথর উত্তোলনের বিরুদ্ধে আমাদের নিয়মিত অভিযান চলমান থাকবে।