চা শ্রমিকদের টানা কর্মবিরতিতে টালমাটাল সিলেটের ১২ চা বাগান
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ৯:৩৩:১২ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: টানা কর্মবিরতি ও আন্দোলনে টালমাটাল সিলেটের ১২ চা বাগান। ১৬ দিনেও থামেনি চা শ্রমিকদের আন্দোলন। ফলে এসব বাগানে দেখা দিয়েছে অচলাবস্থা। কার্যকর উদ্যোগ না নেয়ায় সহসা এই আন্দোলন থামছেনা বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বৃহস্পতিবার সিলেটের জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে আন্দোলনরত চা শ্রমিকদের মাঝে চাল-ডাল-তেল-লবণ-আলু ও পেঁয়াজ বিতরণ করা হয়েছে। এতে আন্দোলন আপাতত স্থগিত করলেও কর্মবিরতি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন চা শ্রমিকরা। জানা গেছে, ৮ সপ্তাহের বেতন-ভাতা ও ১৭ মাসের প্রফিডেন্ট ফান্ডের টাকা না পেয়ে সিলেট বিভাগের ১২ বাগানের চা শ্রমিকরা ১৬ দিন ধরে কর্মবিরতি পালন করছেন। পাশাপাশি আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
বৃহস্পতিবারও কাজে ফিরেননি ন্যাশনাল টি কোম্পানির আওতাভুক্ত সিলেট জেলার লাক্কাতুরা, কেওয়াছড়া ও দলদলি চা বাগানের শ্রমিকরা। এ অবস্থায় অনেকটা বির্যয়ের মুখে পড়েছে চা শিল্প। লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যাহত হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, চা শ্রমিকদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেছেন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ মানুষ। স্বল্পমজুরির চা শ্রমিকদের বকেয়া বেতন-ভাতা প্রফিডেন্ট ফান্ডের টাকা দ্রুত পরিশোধের দাবি জানিয়েছেন তারা।
জানা গেছে, লাক্কাতুরা, কেওয়াছড়া, দলদলি চা বাগানের শ্রমিকরা ১৬ দিন ধরে কর্মবিরতি পালনের পাশাপাশি গত কয়েকদিন বিক্ষোভ ও কর্মবিরতি পালন করেছেন। গত মঙ্গলবার শ্রমিকরা সিলেট এয়ারপোর্ট রোডে মিছিলও করেছেন। মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে লাক্কাতুরা ন্যাশনাল টি কোম্পানির ফটকে এসে শেষ হয়।
লাক্কাতুরা চা বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির কোষাধ্যক্ষ বিপন গোয়ালা বলেন- ন্যাশনাল টি কোম্পানির আওতাভুক্ত সিলেট জেলার লাক্কাতুরা, কেওয়াছড়া, দলদলি চা বাগানে মোট ১ হাজার ১৮০ জন শ্রমিক রয়েছেন। কিন্তু ৮ সপ্তাহ ধরে আমাদের বেতন-ভাতা বকেয়া পড়ে আছে। আটকে আছে ১৭ মাসের প্রফিডেন্ট ফান্ডের টাকাও। এ অবস্থায় দফায় দফায় কর্তৃপক্ষের কাছে ধর্ণা দিলেও তারা সন্তোষজনক জবাব দিচ্ছেন না। তাই বাধ্য হয়ে আমরা কর্মবিরতি পালন করছি। গত কয়েকদিন বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছি। আমরা বেতন-ভাতা না পেয়ে মানবেতর দিনাতিপাত করছি।
চা শ্রমিকরা বলেন- আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে বেতন-ভাতা দাবি করলে তারা অর্থসংকটে ভোগছেন বলে জানান। তারা কৃষি ব্যাংকের কাছে ঋণ দেওয়ার আবেদন করেছেন। ঋণ পেলে আমাদের টাকা পরিশোধ করবেন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বেতন প্রতি মাসে ঠিকই পাচ্ছেন। তবে আমাদের ক্ষেত্রে এই বৈষম্য কেন? এভাবে চলতে থাকলে চা শ্রমিকদেরকে না খেয়ে মরতে হবে।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সিলেট ভ্যালির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রাজু গোয়ালা দৈনিক জালালাবাদকে বলেন- দরিদ্র্য চা শ্রমিদের টানা ৮ সপ্তাহের বেতন-ভাতা বকেয়া পড়ে থাকলেও ন্যাশনাল টি কোম্পানি কর্তৃপক্ষের টনক নড়ছে না। তারা বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে এখন পর্যন্ত কার্যকর কোন উদ্যোগ নেয়নি। এতে চা শ্রমিকরা আরো বিক্ষুব্ধ হচ্ছেন। এ অবস্থায় বিভাগের ১২টি চা বাগানে অচলাবস্থা সহসাই কাটবে বলে মনে হচ্ছে না।
তিনি বলেন- বৃহস্পতিবার সিলেটের জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে আন্দোলনরত চা শ্রমিকদের পরিবারের মাঝে চাল, ডাল, তেল, লবণ, আলু ও পেঁয়াজ অনুদান দেয়া হয়েছে। ফলে আন্দোলন আপাতত স্থগিত থাকবে। তবে চা শ্রমিকরা কর্মবিরতি অব্যাহত রাখবেন বলে জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে জানতে ন্যাশনাল টি কোম্পানির সিলেট রিজিওনের ব্যবস্থাপক এমদাদ হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি। এছাড়াও কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদ হাসানের মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া হয়নি।
এদিকে, চা শ্রমিকদের আন্দোলনে সংহতি ও একাত্মতা পোষণ করেছেন বিভিন্ন রাজননৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এই ধারাবাহিকতায় বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী গত মঙ্গলবার শ্রমিকদের সভায় অংশগ্রহণ করেন। তিনি এসময় বলেন, চা শ্রমিকরা এ সমাজেরই অংশ। কিন্তু তারা দিনের পর দিন ধরে অবহেলিত। তাদের যৌক্তিক দাবি-দাওয়াগুলো দ্রুত পূরণ করার জোর দাবি জানাচ্ছি।