‘আমার পুয়া নাই, আর টাউনো থাকতাম নায়,বাড়িত যাইমুগি’ – শহীদ তুরাবের মা
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ৮:৪৬:১১ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: সিলেটে পুলিশের গুলীতে নিহত সাংবাদিক এটিএম তুরাবের মৃত্যুর সাড়ে ৩ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো পুত্র শোকে কাতর মা। এক মুহুর্তের জন্যও ভুলতে পারছেন না নিজের নাড়ী ছেড়া ধনকে। তুরাবের কথা মনে হলেই অঝোর ধারায় কাঁদতে থাকেন তিনি। পুত্র হারা মা এবার জানালেন যে শহরে তার ছেলে নেই সেই শহরে আর থাকতে চান না তিনি। চলে যেতে চান গ্রামের বাড়ীতে। শুক্রবার সিলেট জেলা মহিলা দলের নেত্রীবৃন্দ তাঁকে দেখতে গেলে এসব কথা বলেন তিনি।
উপস্থিত মহিলা দল নেত্রীবৃন্দের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন-‘আমার সুবিধার লাগি আমরা টাউনো আইছলাম, এখন আমার পুয়া আর নাই, আমরা আর টাউনো থাকতাম নায়, অউমাসো আমার নাতিনর পরিক্ষা শেষ ওইলে আমরা বাড়িত যাইমুগি’।- চোখের পানি মুছে মুছে কথাগুলো বলছিলেন বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন চলাকালে সিলেটে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে পুলিশের গুলিতে নিহত সাংবাদিক এটিএম তুরাবের প্রায় সত্তোর বছর বয়সী মা মমতাজ বেগম।
কথা বলার সময় তিনি বার বার কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এসময় সিলেট জেলা মহিলা দলের সভাপতি ও জেলা বিএনপির মহিলা বিষয়ক সম্পাদক তাহসিন শারমিন তামান্না, সহ সভাপতি ফেরদৌসী ইকবাল, জেলা বিএনপির সহ মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা মহিলা দলের দপ্তর সম্পাদক সুলতানা রহমান দিনাসহ উপস্থিত নেত্রীবৃন্দ তাকে শান্তনা দেন।
সিলেট জেলা মহিলা দলের সভাপতি ও গুম হওয়া ছাত্রদল নেতা ইফতেখার হোসেন দিনারের বোন তাহসিন শারমিন তামান্না বলেন, তুরাবের লাশ তো স্বজনরা দেখেছেন, তার কবর জিয়ারত করতে পারছেন। কিন্তু আমার ভাই দিনার কোথায় আছেন, কিভাবে আছেন? আমরা তার কিছুই জানি না। এই জাতি ত্রিশ লক্ষ জীবন দিয়ে স্বাধীনতা এনেছে, সময়ের প্রয়োজনে বার বার রক্ত দিয়ে এই স্বাধীনতাকে রক্ষা করেছে। গণখুনি শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে সকল গুম ও খুনের বিচার করা হবে ইনশাআল্লাহ।
দৈনিক নয়াদিগন্তের সিলেট ব্যুরো প্রধান ও দৈনিক জালালাবাদের স্টাফ রিপোর্টার এটিএম তুরাব সিলেট শহরে তার বোনের বাসায় থেকে সাংবাদিকতা করতেন। গত বছর তিনেক আগে তার বোন আমেরিকায় চলে গেলে ছেলের কষ্টের কথা বিবেচনায় পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়ি বিয়ানীবাজার থেকে সিলেট শহরে আসেন তুরাবের মা।
এখন আর ছেলেও নেই, তাই সিলেট শহরে থাকার প্রয়োজনীয়তাও নেই। তাই চলতি মাসে তুরাবের ভাইজির পরিক্ষা শেষ হলেই গ্রামের বাড়ি বিয়ানীবাজারে চলে যাবেন তারা। যে শহরে নিজের ছেলের স্বাচ্ছন্দের জন্য এসেছিলেন, সেই শহর থেকেই ফিরে যাচ্ছেন ছেলেকে ছাড়া।
শহীদ সাংবাদিক এটিএম তুরাবের বড় ভাই আবুল আহসান মোহাম্মদ আজরফ (জাবুর আহমদ) বলেন, মামলার এতদিন পরও পিবিআইর তদন্তের কোন অগ্রগতি নেই, এটি রহস্যজনক। আজ পর্যন্ত আমার ভাইয়ের মুলখুনিরা বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সরকারী সুযোগসুবিধা ভোগ করছে। আমরা দিন দিন বিচার নিয়ে হতাশায় নিমজ্জিত হচ্ছি।
তিনি বলেন, পুলিশের যে কর্মকতা আমার ভাইয়ের বুকে গুলি করেছিল, সে সহ তার সহযোগীরা এখনো চাকুরীতে বহাল থেকে মামলার তদন্ত প্রভাবিত করছে। অবিলম্বে তাদেরকে চাকুরিচ্যুৎ করে গ্রেফতার করা হউক। অন্যথায় আমার ভাই হত্যার সঠিক বিচার পেতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হবে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন- সিলেট জেলা মহিলা দলের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক নুরুন নাহার ইয়াসমিন, মহিলা দল নেত্রী জান্নাত জামান চৌধুরী, বিলকিস আক্তার, জুলি পুরকায়স্থ, আমিনা বেগম, মিনা বেগম, রাবিয়া বেগম, রায়না বেগম প্রমূখ।